হজ ইসলামের অন্যতম রুকন- একটি মহান ইবাদত যা মুসলিম জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে হাজিরা যখন পবিত্র মক্কায় গিয়ে হজ পালন করে ফিরে আসেন, তখন তাদের জীবন যেন পূর্ণতর হয় এক নতুন প্রতিজ্ঞায়।
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হজ করা আল্লাহর জন্য মানুষের ওপর একটি অধিকার, যাদের সে পথে যাওয়ার সামর্থ্য আছে।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭)
হজ পালনের মাধ্যমে মুমিন তার অতীত পাপ মোচনের সৌভাগ্য অর্জন করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করল এবং অশ্লীলতা বা গুনাহর কোনো কাজ করল না, সে এমন অবস্থায় ফিরে আসে যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৫২১)
তবে এই মহান সফরের পর শুধু স্মৃতি নয়, হাজিদের জীবনে প্রতিফলিত হওয়া দরকার নতুন এক ধার্মিক ও আত্মনিবেদিত জীবনের ছাপ। হজ যেন হয় পাপ মোচনের বিনিময়ে তওবা এবং নেক আমলের স্থায়ী প্রতিজ্ঞা। নিচে হজের পর হাজিদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় তুলে ধরা হলো।
হজের পর হাজিদের করণীয়-
১. আল্লাহর নৈকট্য অব্যাহত রাখা
হজের সময়ে আল্লাহর সাথে যে গভীর আত্মিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, তা জীবনের বাকি সময়েও ধরে রাখা জরুরি। নিয়মিত সালাত, কোরআন তেলাওয়াত এবং জিকির-আজকারে অবিচল থাকা উচিত।
২. গুনাহ থেকে সতর্ক থাকা
হজ পালনের পর পাপ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা আরো বেশি হতে হবে। তওবার স্থায়িত্ব রক্ষা করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, হজ মাবরুরের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া কিছু নয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৭৭৩)
অতএব, হজ যেন মাবরুর হয় তা নির্ভর করে হাজির পরবর্তী জীবনের উপর।
৩. সদা শোকর আদায়
হজের তৌফিক পাওয়া এক বিরাট নিয়ামত। তাই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় এবং এই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা জানাতে হয় নিয়মিত নফল ইবাদত, দান-সদকা ও মানুষের উপকারের মাধ্যমে।
৪. আমানতদার হিসেবে জীবনে পরিবর্তন আনা
হাজিরা সমাজে অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারেন। তাদের কথা, আচরণ, লেনদেন, নৈতিকতা, দয়া ও দায়িত্বশীলতায় হজের প্রভাব প্রতিফলিত হওয়া জরুরি।
৫. হজের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা প্রচার করা
নিজ পরিবার, আত্মীয় ও সমাজে হজের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা তুলে ধরা একটি গুরুত্বপূর্ণ করণীয়। এতে অন্যদের ইবাদতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
৬. দীনি ইলম অর্জনে মনোযোগ
হজের পরে ইসলামের মৌলিক জ্ঞান এবং হালাল-হারামের সঠিক শিক্ষা গ্রহণে মনোযোগী হওয়া দরকার, যাতে হজের প্রভাব কেবল আবেগ নয়, বরং একটি জ্ঞানে-ভিত্তিক ধার্মিকতা হয়।
হজ যেন কেবল একটি সফর না হয়, বরং হয় আত্মশুদ্ধির স্থায়ী যাত্রা। হজের পর মুসলিমের জীবনে একটি নবজন্ম ঘটে। এই নবজীবনে তার প্রত্যেকটি কাজই যেন হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে- সেটিই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।