ঢাকা সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

ইরানের দৃষ্টিনন্দন ৭ মসজিদ, যা আপনাকে মুগ্ধ করবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৫, ০৬:১৭ পিএম
ইরানের দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি মসজিদ। ছবি- সংগৃহীত

ইরান শুধু একটি দেশের নাম নয়, বরং ইতিহাস, শিল্প, স্থাপত্য আর ধর্মীয় ঐতিহ্যের এক অনন্য মিলনস্থল। পারস্য সভ্যতার উত্তরসূরি এই ভূমিতে ইসলাম আগমনের পর গড়ে উঠেছে অসংখ্য জামে মসজিদ, যা শুধুমাত্র ইবাদতের স্থান নয়-বিশ্ববাসীর জন্য রয়ে গেছে স্থাপত্যশৈলীর বিস্ময় হিসেবে।

বিভিন্ন ধরণের কারুকাজ, মিনার আর গম্বুজের অপূর্ব সমন্বয় আর ক্যালিগ্রাফির নিখুঁত ছোঁয়ায় এসব মসজিদ যেন হাজার বছরের এক ইতিহাসের ভাষ্য রচনা করেছে।

এই প্রতিবেদনে ইরানের এমনই ৭টি দৃষ্টিনন্দন মসজিদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে তুলে ধরা হলো-

নাসির আল-মুলক মসজিদ, শিরাজ

সবচেয়ে বেশি ছবি তোলা মসজিদগুলোর একটি দক্ষিণ ইরানের নাসির আল-মুলক মসজিদটি। মসজিদটি সুদৃশ্য আয়না, কারুকাজ, নকশা, স্তম্ভ ও বহুবর্ণ রঙিন টাইলস দিয়ে অলংকৃত। মসজিদটির নামাজের জায়গায় সুবিশাল কাঁচের জানালা রয়েছে। জানালাগুলা রঙিন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে অপরূপ দৃশ্য ধারণ করে। এই দৃশ্য ফ্রেমে বন্দি করতে চাইলে সূর্য ওঠার পরপরই সেখানে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

জামে মসজিদ, ইয়াজদ

জামে মসজিদটি ইয়াজদ শহরের ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাচীন এই মসজিদটি ইউনেস্কো তালিকাভুক্ত। এর অলংকৃত প্রবেশদ্বার ইরানের অন্যতম উঁচু প্রবেশদ্বারের অন্তর্ভুক্ত। এখানে ‘ফায়েন্স’ নামক টাইল ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিভিন্ন রঙিন টুকরো একত্র করে মোজাইক আকারে তৈরি করা হয়।

নীল মসজিদ (ব্লু মসজিদ), তাবরিজ

বিশ্বের চারটি প্রসিদ্ধ ‘নীল মসজিদ’-এর একটি তাবরিজের নীল মসজিদ (ব্লু মসজিদ)। ইরানি-ইসলামি স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন এই মসজিদ। প্রায় ৬০০ বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ এই মসজিদটি চোখধাঁধানো টাইলসের কারুকাজের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে।

নীল টাইলস ও ইটের বিরল সংমিশ্রণ, সোনালি নকশা এবং স্থাপত্য ও নকশার জাদু এই মসজিদকে এক বাস্তব মোহনায় পরিণত করেছে। এই মসজিদে রয়েছে দুটি বৃহৎ গম্বুজ এবং আরও সাতটি ছোট গম্বুজ, যা এর সৌন্দর্য আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

১৪৬৫ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই মসজিদ ইট-কাঠামো ও বিশালতায় অনন্য। ১৭২৭ সালের ভূমিকম্পে কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ১৯৭৩ সালে তা পুনর্নির্মিত হয়।

শেখ লুৎফুল্লাহ মসজিদ, ইসফাহান

১৭শ শতকের এই মসজিদটি ইরানি নকশার এক অনন্য নিদর্শন। এই মসজিদের গম্বুজের অবস্থান কেন্দ্রবিন্দু থেকে কিছুটা দূরে। মসজিদটির কোনো মিনার নেই। মসজিদের ক্রিম-হলুদ রঙের টাইলস সূর্য আলোয় বদলে গিয়ে কখনো গোলাপি আভা নেয়। গম্বুজের ভেতরে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ রঙিন টাইলস আরবেস্ক ডিজাইনে গঠিত।

এর মিহরাব ইরানের সেরা মিহরাবগুলোর একটি, যেখানে স্থপতির নাম ও হিজরি ১০২৮ সালের তারিখ খোদাই করা আছে।

গোহরশাদ মসজিদ, মাশহাদ

১৫শ শতকে নির্মিত এই মসজিদটি ইট ও প্লাস্টারের তৈরি এবং এখন ইমাম রেজা (আ.)-এর মাজার চত্বরে একটি নামাজকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

১৪১৮ সালে শাহরুখের স্ত্রী রানী গোহরশাদের আদেশে এটি নির্মাণ শুরু হয় এবং প্রায় ১২ বছর ধরে ইরানের শিরাজ ও ইসফাহানের কারিগরদের নিয়ে তৈরি হয়। মসজিদের প্রাঙ্গণে দাঁড়ালে এর উজ্জ্বল রঙ ও মিনারগুলোর সৌন্দর্য সহজেই চোখে পড়ে।

আগা বোযোরগ মসজিদ, কাশান

১৯ শতকে কাশানের মরূদ্যান শহরে নির্মিত এই মসজিদটি সুসামঞ্জস্য গঠন এবং অলংকৃত প্লাস্টার, কাঠ ও আয়নাকাজের জন্য বিখ্যাত। মসজিদটিতে বড় বড় নামাজকক্ষ রয়েছে, খিলানবিশিষ্ট বারান্দা রয়েছে, মিনার, বিশাল বায়ু টাওয়ার (বাদগির) ও একটি সাধারণ গম্বুজ আছে। ইটের দেয়াল ও খিলানগুলো কোরআনিক আয়াত ও মোজাইক দ্বারা অলংকৃত।

বলা হয়ে থাকে, এটি শিয়া দার্শনিক ও আলেম মোল্লা মুহাম্মদ মাহদি নারাকি (১৭১৫–১৭৯৫)-এর নামে নামকরণ করা হয়, যিনি ‘আগা বোযোরগ’ নামে পরিচিত ছিলেন।

ওকিল মসজিদ, শিরাজ

১৮ শতকের একটি বড় স্থাপত্য প্রকল্পের অংশ এই মসজিদ। এর সঙ্গে একই নামের বাজার ও স্নানাগার রয়েছে। মসজিদটি ঐতিহ্যবাহী বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত। জান্দ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা করিম খান জান্দ (১৭৫১–১৭৭৯) এই কমপ্লেক্স নির্মাণের নির্দেশ দেন। মসজিদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো নামাজকক্ষে তির্যক খাঁজকাটা স্তম্ভের জঙ্গল।