প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সংবাদ প্রচারে মালিক পক্ষের হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রণসহ ১০ অনুরোধ জানিয়েছেন ইউরোপপ্রবাসী সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী জুলকারনাইন সায়ের খান সায়ের।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে এ অনুরোধ করেন তিনি।
স্ট্যাটাসে জুলকারনাইন সায়ের খান লিখেন, ‘স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশের এক বছর পূর্ণ হলো আজ, বিজয়ের পতাকা ছিনিয়ে আনতে যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, ছোট-বড় ভূমিকা রেখেছেন, তাদের প্রত্যেককে বিনম্র শ্রদ্ধা।
পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিটি সদস্যকে ধন্যবাদ। হাজার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আপনারা বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট সময়কাল প্রকাশ করেছেন।’
তিনি লিখেন, ‘সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রধান উপদেষ্টা, আপনার প্রতি আমার কিছু অনুরোধ—
১. আপনার সরকারের মেয়াদকালের মধ্যে, এমন একটি আইন প্রণয়ন করুন, যাতে ভবিষ্যতে জুলাই ২৪ বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী সব ব্যক্তি এবং সমর্থকদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা হেনস্তার সম্মুখীন হতে না হয়। আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্যে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন, অন্তত আগামী ২-৩ বছরের জন্য হলেও।
২. রাজনৈতিক দলগুলোকে কারা আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করে, সেটা জনসম্মুখে প্রকাশের বিধিবিধান নিশ্চিত করুন, যেন সাধারণ জনগণ এটা জানতে পারেন যেকোনো (ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান/গোষ্ঠী) রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থায়ন করছে।
৩. বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে থাকে (সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিংগাপুর, তুরস্ক, সাইপ্রাস, মালয়েশিয়া, ইইউ, জার্সি আইল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, ক্যাইমেন আইল্যান্ড, সব ক্যারিবিয়ান রাষ্ট্রসমূহ) তাদের সঙ্গে এমন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করুন যাতে বাংলাদেশে বসবাসকারী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক সেসব দেশে কোনো রকমের বিনিয়োগ (পাসপোর্ট/ গোল্ডেন ভিসা/ সম্পদে বিনিয়োগ/ ব্যবসা পরিচালনা) করতে হলে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।
৪. অতীতে কোনোরকমের দুর্নীতি বা অনিয়মের রেকর্ড নেই এমন ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর জন্যে বিদেশে যথাযথ মাধ্যমে বিনিয়োগের পথ উন্মোচন করুন, সেসব বিনিয়োগে যেন বাংলাদেশি নাগরিকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয় সেটা হতে হবে অন্যতম প্রধান শর্ত। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায় অর্জিত লভ্যাংশ বাংলাদেশে পুনঃবিনিয়োগের ওপর রাজস্ব মওকুফ বা প্রণোদনা বিবেচনা করুন।
৫. গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রে ‘বাংলাদেশ ট্রেড প্রমোশন এজেন্সি’ প্রতিষ্ঠার রূপরেখা তৈরি করুন।
৬. সামরিক বাহিনীসহ সব নিরাপত্তা সংস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের পথ বন্ধ করুন। কর্নেল টু লে. জেনারেল পর্যন্ত পদোন্নতির বিষয়ে সামরিক বাহিনীর বোর্ডকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দিন। পুলিশের ক্ষেত্রেও একইরকম পদোন্নতি পর্ষদ গঠনে গুরুত্ব দিন। সেনাপ্রধান, আইজিপি, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান নির্বাচনে সব ফর্মেশন কমান্ডার, পিএসও এফডি, সিজিএস, এজিসহ প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পরামর্শ সংযুক্ত/পরামর্শ গ্রহণের প্রথা চালু করুন।
একই সঙ্গে ষান্মাসিক প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ আমলাদের পারফরমেন্স রিপোর্ট প্রদানের প্রথা এবং অতীতে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য রয়েছে এমন ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর পূর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সিভিল সোসাইটির মতামত গ্রহণের নিয়ম চালু করুন।
৭. দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থার জন্য ‘জনসম্পৃক্ততা’ রয়েছে এমন সব কার্যক্রম রিভিউ করার লক্ষ্যে একটি ওভারসাইট বোর্ড গঠনের পথ সুগম করুন, যেখানে সব রাজনৈতিক দল, দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
৮. বাংলাদেশ পুলিশ, বিজিবি, আনসারের সাধারণ পদবির সদস্যদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, পোষ্যদের যথাযথ শিক্ষা ও চিকিৎসা এবং বাস্তবতা বিবেচনায় রেশন ও অন্যান্য সুবিধাদি পর্যালোচনা করে আগামী সরকারের জন্য সুপারিশসমূহ প্রণয়ন করে তা পাবলিকলি প্রকাশ করুন।
৯. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সংবাদ প্রচারে মালিক পক্ষের হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ, প্রতিটি মিডিয়া হাউসের এডিটোরিয়াল পলিসি পাবলিকলি প্রকাশ, সর্বোপরি—সাংবাদিক ও হুইসেল ব্লোয়ারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুস্পষ্ট নীতিমালা উপস্থাপন করুন।
১০. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় যেসব আলেম, সব ধর্মের ব্যক্তিত্ব আটক রয়েছেন, তাদের মুক্তির ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
তিনি লিখেন, ‘ব্যাস এতটুকুই আমার আপনার কাছে বিনীত আবেদন।’
আপনার মতামত লিখুন :