শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৫:০৩ পিএম

রিমান্ডে তৌফিক

শেখ হাসিনার নির্দেশে আদানীকে সুবিধা

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৫:০৩ পিএম

শেখ হাসিনার নির্দেশে আদানীকে সুবিধা

তৌফিক-ই-ইলাহী। ছবি: সংগৃহীত

টপ টু বটম কমিশন বাণিজ্য

সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে সব কাজ


বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত গত দেড় দশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ২৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। চাহিদার চেয়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট বাড়তি সক্ষমতা থাকলেও উৎপাদন ঘাটতির কারণে হাসিনার আমল থেকেই প্রতিদিন ২ থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট লোডশোডিং হয়ে আসছে।

জানা গেছে, তৌফিক-ই-ইলাহী বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি বিভাগ নিয়ে শেখ হাসিনাকে কুপরামর্শ দিতেন। তাকে স্বৈরাচার করতে যারা ভূমিকা রেখেছেন সেই কারিগরদের মধ্যে অন্যতম একজন তৌফিক-ই-ইলাহী। বর্তমানে গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে থাকা তৌফিক গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন,  সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ভারতের আদানী গ্রুপকে সুবিধা দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো সরাসরি শেখ হাসিনার সঙ্গে পরামর্শ করে।

সুমন সিকদার হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। গত বুধবার তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আলী হায়দার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুন করেন। বর্তমানে তাকে ডিএমপির ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত দেড় দশকের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতি এবং অনিয়ম নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উচ্চমূল্যে ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে বিদ্যুৎ কেনা বিষয়ে তিনি বলেছেন, ভারতের মোদি সরকারকে খুশি করতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে আদানী গ্রুপকে সিদ্ধান্ত হয়।

সূত্র আরও জানায়, গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক খাতে কমিশন বাণিজ্য চলেছে টপ টু বটম। সব সরকারের আমলেই সিন্ডিকেটের বাইরে কোনো কাজ হয় না। বড় বড় প্রকল্প হলে সুবিধা কমবেশী সবারই হয় বলে জানিয়েছেন তৌফিক।

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নিজের ভূমিকা নিয়ে তৌফিক বলেছেন, দলীয় প্রধানের নির্দেশ মেনে অন্য অধিনস্তদের মতো আমিও কাজ করেছি। এখানে দোষের কিছু দেখছি না।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে এবং হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় তার অনুসারীরা একজোট হয়ে কাজ করেছেন। শুরু থেকেই তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী নানা পরামর্শ এবং আর্থিক বিষয় দেখাশোনা করেছেন। হত্যা বন্ধে শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করলে তিনি (শেখ হাসিনা) আরও কঠোর হতে পরামর্শ দেন। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গত দেড় দশকের ন্যায় এবারও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন বলে শেখ হাসিনার সঙ্গে একমত ছিলেন তৌফিক নিজেও।

তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়ে ২০০২ সালে সচিব হিসাবে অবসরে যান। তিনিই একমাত্র উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, যিনি প্রবাসী সরকারে যোগ না-দিয়ে প্রথম থেকেই অস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন এবং বীর বিক্রম খেতাব পান।

এরআগে, গত বুধবার আদালতে আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী তৌফিক ইলাহীর রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানিতে বলেন, সাবেক অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছেন। বিদ্যুৎ খাত নিয়ে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন যেন চাইনিজ খেলনা। চাইনিজ খেলনা দেখতে সুন্দর কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী না। দেখতে লোভনীয় কিন্তু টাইম ভ্যালু, টেকসই না। এভাবে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দেশের ব্যাপক ক্ষতি করেছেন। ১৫ বছরে কুইক রেন্টালের নামে শত শত মানুষকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বানিয়েছেন। মিটারে এক হাজার টাকা রিচার্জ করলে ৫০০ টাকা কেটে নেয়। এই ৫০০ টাকার জন্য কোনও সেবা কিন্তু দিচ্ছে না। গরিব, কৃষকের কাছ থেকে ট্যাক্সের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অটবির কী যোগ্যতা আছে তাদের কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ দিতে হবে? তারা তো কাঠমিস্ত্রি ! তার কোনও অভিজ্ঞতা নাই, ইঞ্জিনিয়ার নাই। তাদেরও কাজ দিয়েছে। বিনিময়ে সুবিধা ভোগ করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে অসম চুক্তি করেছে। বিদ্যুতের পার্মানেন্ট সলিউশন না করে কুইক রেন্টালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চমক দেখিয়ে এ খাতকে পঙ্গু করেছে।
ওমর ফারুক বলেন, হাসিনাকে স্বৈরাচার করতে যারা ভূমিকা রেখেছেন সেই কারিগরদের মধ্যে তিনি একজন। তিনি গণভবনকে বালাখানা বানিয়েছেন। মানুষ হত্যা, ভোট চুরি, অধিকার বঞ্চিত করার জন্য তারা দায়ী। শেখ হাসিনাকে কুপরামর্শ দিতেন। সামিট গ্রুপকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। সেই সামিট গ্রুপ লাখ কোটি টাকা নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে অন্য দেশে চলে গেছে। বিদ্যুৎ খাতকে ধ্বংস করেছে। ছাত্র আন্দোলনের সময় একটিবারও হাসিনাকে বলেনি হত্যা বন্ধ করেন। আমরা টেলিভিশনে নায়ক-নায়িকার অভিনয় দেখি। তাদের পেছনে থাকেন একজন পরিচালক। সেই পরিচালক হচ্ছে এরা। তার কঠিন শাস্তি হোক! গুম, খুন করে আর কেউ যেন স্বৈরাচার না হয়। এমন অবস্থা না হয় যেন ৩০০ জন এমপি, মন্ত্রীদের যেন পালিয়ে যেতে না হয়।

এদিন আদালতে রিমান্ড শুনানিতে আসামিপক্ষে আইনজীবি মোরশেদ হোসেন শাহীন বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুতের অগ্রগতি তার হাত ধরেই হয়েছে। দেশের বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করে রফতানিমুখী করেছেন তৌফিক-ই-ইলাহী। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি করেছেন। বাড্ডা থানায় মামলার এজাহারে নাম নাই। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না। শুধু রাজনৈতিক কারণেই তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। খুবই অসুস্থ। সার্বিক দিক বিবেচনা করে তার রিমান্ড বাতিল চাচ্ছি, সেই সঙ্গে জামিনও।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক বলেন, বিবেক যখন মরে যায় তখন শিক্ষার কোনও মূল্য থাকে না, যেকোনও কিছু করতে পারে। সরকারি দায়িত্ব পালনে আমাদের অবস্থান ঠিক রাখতে হবে। উনি (তৌফিক-ই-ইলাহী) যেন নিরাপদে এখান থেকে বের হতে পারেন সেই ব্যবস্থা করে দেবেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাড্ডা ফুজি টাওয়ারের উত্তর পাশে প্রগতি সরণিতে রাস্তার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন সুমন সিকদার। এ ঘটনায় তার মা মাসুমা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭৯ জনকে আসামি করা হয়।

আরবি/জেডআর

Link copied!