শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ১২:২৯ এএম

কৌশলগত মজুত বাড়াতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ১২:২৯ এএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বাণিজ্যের গতিধারায়ও পরিবর্তন এসেছে।

কিছুদিন আগেও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নামমাত্র থাকলেও তা এখন পুরোদমে শুরু হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় জরুরি মজুত বাড়াতে প্রধান খাদ্য চাল সেই পাকিস্তান থেকেই আমদানি করা হবে।

এরই মধ্যে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদনও দিয়েছে।

তবে স্বাধীন বাংলাদেশের খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুরু থেকেই ভারতমুখী অবস্থান ছিল।

বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারত রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করলে ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার এই তালিকায় যুক্ত হয়।

পেঁয়াজকাণ্ডের পর মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে দেশের চাহিদা মিটানো হয়েছিল।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর বাংলাদেশের জন্য ভিসা বিধিনিষেধসহ রপ্তানিতেও কড়াকড়ি আরোপ করে ভারত।

ফলে বাংলাদেশের প্রয়োজন মিটাতেই বিকল্প বাজার দেখতে হয়েছে বাংলাদেশের নীতনির্ধারকদের।

জানা গেছে, দেশের খাদ্য মজুত বাড়াতে ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তান (টিসিপি) থেকে ৫০ হাজার টন আতপ চাল সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে কেনা হবে।

এ জন্য বাংলাদেশকে ব্যয় করতে হবে ২ দশমিক ৫ কোটি মার্কিন ডলার। 

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ভারত যেহেতু জুলাই-আগস্টের পর সবকিছুতেই বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তাই বাধ্য হয়েই বিকল্প খুঁজে নিতে হয়েছে।

আর এই বিকল্প খোঁজার জন্য ভারতই বাংলাদেশকে বাধ্য করেছে। ভারত স্বাভাবিক বাণিজ্য অব্যাহত রাখলে হয়তো বাংলাদেশ বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখত বলেও এই কর্মকর্তা মনে করেন।

পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।

এর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল সুতা-কাপড় ও প্রস্তুত চামড়া ছিল প্রায় ৭৯ শতাংশ। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তার মূল্য ছিল ৬ কোটি ডলারের সামান্য বেশি।

মূলত কাঁচা পাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, চা ও তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।

এর আগে ২০২২ সালে বাংলাদেশ ৭৪ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করলেও পাকিস্তান থেকে আমদানি করেছে ৮৪০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।

অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ পণ্য পাকিস্তানে রপ্তানি হয়, তার দশগুণ বেশি পাকিস্তান বাংলাদেশে রপ্তানি করে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেছেন, পাকিস্তানের তরফ থেকে বাংলাদেশিদের বিনা ভিসায় পাকিস্তান সফরের ঘোষণা এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের সুযোগ এনে দিয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য, গার্মেন্ট, মেডিসিন, লেদারÑ এসব ক্ষেত্রে পাকিস্তানে রপ্তানি বাড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে পাকিস্তানের সিলিং ফ্যান, ফ্রুটস, জুস, মেয়েদের ড্রেস বাংলাদেশে জনপ্রিয়। মূলত কস্ট বেনিফিট পর্যালোচনা করে আমদানি-রপ্তানির পণ্য ঠিক হলে উভয় দেশই তাতে লাভবান হবে।

সম্প্রতি পাকিস্তানের করাচি থেকে কন্টেইনার বহনকারী জাহাজ সরাসরি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর এ নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয় সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে।

বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এবারই প্রথমবারের মতো সরাসরি জাহাজ করাচি থেকে চট্টগ্রাম আসা।

করাচি থেকে বাংলাদেশে সরাসরি আসা যে জাহাজ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেই জাহাজে বাংলাদেশে এসেছে ‘ফেব্রিকস, চুনাপাথর, সোডা অ্যাশ, পেঁয়াজ, ম্যাগনেসিয়াম কার্বোনেট ও ডলোমাইট’, যার বেশিরভাগই টেক্সটাইল শিল্পের কাঁচামাল।

এমন প্রেক্ষাপটেই অনেকে আলোচনা করছেন, দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও বাড়ানো যায় কি না কিংবা বর্তমান বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে এনে কীভাবে উভয় দেশ লাভবান হতে পারে।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে পাকিস্তান থেকে আসা পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার পর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে অনুমোদন পেলেই কেবল ছাড় দেওয়া হতো।

বাংলাদেশের রাজস্ব বোর্ড গত ২৯ সেপ্টেম্বর সেই বিধান তুলে নিয়েছে। এতে পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি দ্রুত হবে এবং জটিলতাও কাটবে বলে মনে করা হচ্ছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন ৫ শতাংশ প্লাস-মাইনাস আতপ চাল (সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভাঙাদানা বিশিষ্ট এসটিএক্স) প্রতি টন ৪৯৯ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ২,৪৯,৫০,০০০ মার্কিন ডলার।

চলতি বছরের ৬ জানুয়ারির বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডলারের বিনিময় হার প্রতি মার্কিন ডলার ১২২ টাকা হিসাবে ৩০৪,৩৯,০০,০০০ টাকার প্রয়োজন হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর পাকিস্তান থেকে আতপ চাল আমদানির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পত্র দেওয়া হয়।

সে পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পাকিস্তান থেকে চাল সরবরাহের আগ্রহের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়।

ওই চিঠির পর্যালোচনা করে দেশের সরকারি মজুত বৃদ্ধি করে সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য পাকিস্তান থেকে চাল আমদানির জন্য পাকিস্তানস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও টিসিপির প্রতিনিধিদল একটি ভার্চুয়াল সভা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

জানা গেছে, টিসিপি এবং পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর ও ৩০ ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশের জিটুজি পদ্ধতিতে ক্রয়বিষয়ক কমিটির ভার্চুয়াল নেগোসিয়েশন সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওই সভায় জিটুজি পদ্ধতিতে চাল আমদানির চুক্তিনামার শর্ত এবং মূল্য নিয়ে বিশদ আলোচনা ও নেগোসিয়েশন হয়।

আলোচনা ও নেগোসিয়েশন শেষে পাকিস্তান থেকে আতপ চাল আমদানি করা যেতে পারে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং এ পরিপ্রেক্ষিতে একটি সভার সম্মত কার্যবিবরণী স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান ঋণপত্র খোলার তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ৫০ হাজার টন আতপ চাল সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছে।

আরও জানা গেছে, চাল কেনার ক্ষেত্রে খাদ্য অধিদপ্তর গঠিত বাজার দর যাচাই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী বার্থ অপারেটিং, হ্যান্ডলিং ব্যয়, জেটি ওভারসাইড হ্যান্ডলিং ব্যয়, বহির্নোঙ্গরে হ্যান্ডলিং ব্যয়, লাইটারিং ব্যয়, বিমা ব্যয়, মুনাফা ও অন্যান্য খরচসহ বাংলাদেশ বন্দর পর্যন্ত প্রতি টন আতপ চালের শুল্কপূর্ব মূল্য ৪৯৯ মার্কিন ডলার যা খাদ্য অধিদপ্তরের বাজারদর যাচাই কমিটি কর্তৃক বাংলাদেশ বন্দর পর্যন্ত ডিউটিপূর্ব সম্ভাব্য মূল্য ৫১২ দশমিক ৭৩ মার্কিন ডলার অপেক্ষা ১৩ দশমিক ৭৩ মার্কিন ডলার কম।

তাই বর্তমান জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় রাষ্ট্রের নিরাপদ খাদ্য মজুত নিশ্চিত করতে পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (টিএফডিএস) যেমন- খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ওএমএস ইত্যাদির মাধ্যমে বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধিসহ দাম নিয়ন্ত্রণ ও একক উৎস থেকে চাল আমদানির ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য আমদানির একাধিক সোর্স বৃদ্ধি এবং আমদানির পথ উন্মুক্ত রাখার জন্য পাকিস্তান থেকে আতপ চাল কেনা হচ্ছে।

গবেষক ও অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য একটি যৌথ কারিগরি দল গঠন করা যেতে পারে এবং এর মাধ্যমে বিনিয়োগভিত্তিক বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরির সুযোগ তৈরি হতে পারে। তাই উভয় দেশের মধ্যে কোন ধরনের পণ্যের কেমন চাহিদা, সেগুলো বিশ্লেষণ করতে হবে।

পাকিস্তান থেকে কটন বা টেক্সটাইল কাঁচামাল সম্ভাব্য পণ্য হতে পারে যা মূলত ভারত ও চীন থেকেই বেশি আসে। আবার পাকিস্তানের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের ভালো সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশে।

তার মতে, বিনিয়োগকারীরা উভয় দেশে চাহিদার ভিত্তিতে যৌথ বিনিয়োগ করতে পারে।

বাংলাদেশে ওষুধ ও গার্মেন্টস কারখানা পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অঞ্চলে করতে পারে। ফলে পাকিস্তান ছাড়াও ইরানসহ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর বাজারে প্রবেশ সহজ হতে পারে।

দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সরকারি বিতরণব্যবস্থা সচল রাখার উদ্দেশ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উৎস থেকে চাল সংগ্রহ করে থাকে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬ লাখ টন চাল আমদানির জন্য ‘অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’র অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে।

দেশের সরকারি মজুত বৃদ্ধি করে সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আমদানির ক্ষেত্রে বহুবিধ উৎস থাকলে দ্রুত খাদ্যশস্য আমদানি করা সহজতর হয় এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ মূল্যে খাদ্যশস্য কেনা সম্ভব হয় বিধায় খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবছর জিটুজি ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চাল সংগ্রহ করছে।

চলতি অর্থবছরে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ২ দশমিক ৫০ লাখ টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল এবং জিটুজি পদ্ধতিতে ১ লাখ টন আতপ চালসহ মোট ৩ দশমিক ৫০ লাখ টন চাল কেনার চুক্তি হয়েছে।

চুক্তির বিপরীতে ২৪,৬৯০ টন চাল সরকারি সংরক্ষণাগারে প্রবেশ করেছে। ১১ জানুয়ারি ভারত থেকে ২৭,০০০ টন চালের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।

চলতি মাসে মিয়ানমার থেকে ৫২,৫০০ টন চাল এবং ভারত থেকে ৭১,৮৫০ টন চালের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরবি/জেডআর

Shera Lather
Link copied!