অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে পিছিয়ে গেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধন।
অংশীজনদের সঙ্গে দীর্ঘ পরামর্শ এবং নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠকের পর রাজউক প্রণীত ড্যাপ সংশোধনের খসড়াটি একদফা পিছিয়ে ১৯ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের গঠিত কমিটির সভায় ওঠে।
সভায় অধিকাংশ উপদেষ্টাই মতৈক্যে পৌঁছতে না পারায় খসড়া সংশোধনিটি পাস হয়নি। ফলে উপদেষ্টা পরিষদের ৭ সদস্যের কমিটি ড্যাপ পুনরায় পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বেশির ভাগ উপদেষ্টাই ভবনের উচ্চতা শিথিলের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এ ছাড়া ড্যাপ সংশোধনে নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপিতদের মতামতকে কেন গুরুত্ব দেওয়া হয়নিÑ এমন প্রশ্নও ওঠে। আইন, ভূমি, গৃহায়ন, জ্বালানি, সড়ক পরিবহন, পরিবেশ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির ৭ সদস্য সভায় অংশ নেন। কমিটি ঈদের পর আবার বৈঠকে বসার কথা থাকলেও বৈঠকটি কবে নাগাদ হবে তা নিশ্চিত নন কেউই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড্যাপ পরিচালক ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, কবে হবে জানি না। যখন হবে আপনাদের জানাব।
তিনি জানান, যখনই বৈঠক হোক না কেন- সেদিন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বসবেন।
তারা নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতিদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের পরামর্শ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আশরাফুল ইসলাম ইঙ্গিত দেন, সংশোধনীর কিছু বিষয়ে হয়তো পরিবর্তন আসতে পারে।
রাজউক সূত্র বলছে, ২০২২ সালের গেজেটভুক্ত ড্যাপে উল্লিখিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) নিয়ে বিভিন্ন মহলের আপত্তির ফলে সংশোধন আনা হচ্ছে।
সংশোধিত ড্যাপে কিছু কিছু এলাকার জমির মালিকরা দেড় থেকে দ্বিগুণ উচ্চতার ভবন নির্মাণের অনুমতি পাবেন।
উদাহরণ দিয়ে সূত্র জানায়, মিরপুরে আগে যেখানে সর্বোচ্চ পাঁচ তলা ভবনের অনুমতি ছিল, এখন সেখানে সাততলা পর্যন্ত আবাসিক ভবনের অবকাশ থাকবে।
উত্তরার তৃতীয় পর্বে ৬ তলার পরিবর্তে ১০ তলা, মোহাম্মদপুরে ৫ তলার পরিবর্তে ৭ তলা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৬ তলার পরিবর্তে ৮ তলা এবং গুলশান-বনানীতে সর্বোচ্চ ১১ তলার পরিবর্তে ১২ তালা ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে।
এ ছাড়া নতুন সংশোধনীতে জলাধারের শ্রেণিবিন্যাস না করে এককভাবে জলাধার হিসেবেই চিহ্নিত করা হবে- এখানে জলাশয় ভরাটের কোনো সুযোগ থাকবে না।
একইভাবে কৃষিজমির ক্ষেত্রেও কোনো শ্রেণি বিভাগের পরিবর্তে সরাসরি কৃষিজমি হিসেবে উল্লেখ থাকবে এবং এই জমি সংরক্ষণ বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালনের নির্দেশনা থাকবে।
এদিকে ড্যাপ সংশোধন নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এবং পেশাজীবী ও সচেতন নাগরিক সমাজ নামের একটি সংগঠন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত ১৮ মার্চ মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছে রিহ্যাব এবং পেশাজীবী ও সচেতন নাগরিক সমাজ। একই দিনে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সরাসরি ড্যাপ সংশোধনের প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
এ সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, আবাসন ব্যবসায়ীদের অনৈতিক চাপে পড়ে ড্যাপ ও ইমারত বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনায় ছিলেন পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান। এতে শতাধিক পেশাজীবী অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে পঠিত লিখিত বক্তব্যে পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহম্মদ খান বলেন, বিগত সময়ে গোষ্ঠী স্বার্থে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পরিকল্পনায় যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারকে সঠিক তদন্ত করে শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিতে হবে।
ড্যাপে এলাকাভিত্তিক নাগরিক সুবিধাদি যথা- স্কুল, হাসপাতাল, পার্ক ও খেলার মাঠের যেসব প্রস্তাবনা করা হয়েছে, রাজউক, সিটি করপোরেশনসহ সরকারি সংস্থাসমূহকে অতিদ্রুত এলাকাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
মানববন্ধনে রিহ্যাব ‘বৈষম্যমূলক ড্যাপ’ বাতিল ও ইমরাত নির্মাণ বিধিমালা ২০২৫ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মো. ওয়াহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে রাজধানীর বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানির প্রতিনিধি এবং জমির মালিকরা অংশ নেন।
এ প্রতিবেদন যখন তৈরি হচ্ছে (১০ এপ্রিল) তখন জানা গেছে, যেসব পরিকল্পনাবিদ ও অংশীজন ড্যাপ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন তাদের নিয়ে নবনিযুক্ত গণপূর্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম বৈঠক করেন।
এর ফলোআপ হিসেবে ১৭ এপ্রিল রাজউক চেয়ারম্যানের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক হবে। এরপরই তিন উপদেষ্টার বৈঠকে ড্যাপ সংশোধনীটি চূড়ান্ত হবে।
সার্বিক বিষয়ে রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের মূল চাওয়া হলো ড্যাপ সংস্কার করে যুগোপযোগী করা এবং ইমরাত নির্মাণ বিধিমালা-২০১৫ বাস্তবায়ন করা।
তিনি বলেন, রাজউক প্রকৌশলীরা তাত্ত্বিক বিষয় মাথায় রেখে ভারতের সঙ্গে মিলিয়ে ডিজাইন করতে চাইছেন। এটি চলবে না। কারণ, ভারতের চেয়ে আমাদের বসতির ঘনত্ব দেড়গুণ বেশি। সেই আলোকে ড্যাপসহ সব পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। নইলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো, আমাদের ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন