দেশে মব সৃষ্টি, চাঁদাবাজি, দখল, সন্ত্রাস গত এক বছরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল, স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হলে, স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলে, শেখ হাসিনাকে বিদায় করা সম্ভব হলে মানুষ একটু শান্তিতে থাকবে। কিন্তু শান্তি তো দূরে থাক, এখন বিভেদ, মুসিবত নিয়ে মানুষকে বসবাস করতে হয়। অনেকের চাকরি নাই। যাদের চাকরি ছিল, সেই চাকরিও এখন রক্ষা করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে এমনটায় মন্তব্য করেছেন ঢাকা-১৭ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী (এমপি পদপ্রার্থী) বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ী ও অত্র এলাকার গরিব দুঃখী মানুষের আস্থা ভাজন ও জনপ্রিয় নেতা কামাল জামান মোল্লা।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কৃতিসন্তান কামাল জামান মোল্লা। তিনি শিবচর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। বাংলাদেশে একমাত্র উপজেলায় কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে স্বাক্ষরিত কমিটির নেতা তিনি। সম্প্রতি তিনি রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় এসব কথা বলেন। এখানে কামাল জামান মোল্লার একান্ত আলোচনাটি দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।
এই স্বাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সিনিয়র রিপোর্টার মেহেদী হাসান খাজা।
দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ: গত বছরের এই সময়ে ছাত্র আন্দোলনে রাজপথ ছিল উত্তাল, ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়; কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে বিএনপি কী শিখল?
ঢাকা ১৭ বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী (এমপি পদপ্রার্থী) কামাল জামান মোল্লা: ৫ আগস্টের পর যে সরকার এসছে সরকারটি দুর্বল হয়ে গেছে। তারা সকলে ব্যর্থ হচ্ছে। দক্ষতার পরিচয় সফলভাবে দিতে পারেনি। না পারার কারণে অনেকগুলো দল সুযোগ পেয়েছে নানা কথা বলার। রাজনৈতিক যে একটা শিষ্টাচার আছে সুন্দর পরিবেশ সেই পরিবেশটাকে নষ্ট করে ফেলেছে। তারপর আমি বলব এটা যার যার দলের একটা রাজনৈতিক কৌশল। ভোটের রাজনীতি কারণ ভোট ছাড়া বিকল্প নেই। স্বৈরাচার শাসক দেশ থেকে পালিয়েছে। বর্তমান সরকার সবার সাথে মিলে একটি নির্বাচনে মাস নির্দিষ্ট করেছে আগামী ফেব্রুয়ারি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এখন যারা অনেক কিছুই বলছে এটা তাদের দলীয় স্ট্যান্ডবাজি এবং এটা না বললে তাদের পজিশন থাকে না। বিএনপি অনেক বড় দল তাই বিএনপি কথা কম বলে। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে বিএনপি কিছু শিক্ষা নিয়েছে, যাতে দল আর কখনোই সংকটে না পড়ে সেই বিষয়টি বিএনপি লক্ষ রাখছে। এ জন্য তো অপরাধ করলেও নিজের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, এটাতেও বোঝা যাচ্ছে বিএনপি জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে শিক্ষা নিচ্ছে।
দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ: গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে এসে দেখছি গণঅভ্যুত্থানের শরিকদের মধ্যে চরম বিভক্তি। চাঁদাবাজও বেড়েছে, আপনাদের দলের বদনাম হচ্ছে—এটা কেন? আপনি কি মনে করেন, এই বিভক্তি আবার পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের ফেরার পথ সুগম করছে না তো?
কামাল জামান মোল্লা: বিএনপি একটি গণমানুষের দল। বাংলাদেশের একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। বিগত সময়ে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। এদেশে আওয়ামী লীগ সরকার যত অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল তারা পালিয়ে যাওয়ার পরে কিছু কিছু জায়গা খালি হয়ে গেছে। যেমন বাংলাদেশ যেখানে জুট ব্যবসা হয় সেখানে কিছু হয়তো বিএনপিপন্থী লোকজন কাজ করে খাচ্ছে। বিএনপির লোকজন কাজ করে খাচ্ছে এটি কিন্তু সিস্টেময়েজ, কোনো চাঁদাবাজি করতেছে না। কাজটায় করে খাচ্ছে। তা ছাড়া আওয়ামী সরকারের সময় তো আপনারা তেমন কিছু লিখেননি তাদের বিরুদ্ধে। বর্তমান মিডিয়া মনে করি শেখ হাসিনার মিডিয়ায় রয়ে গেছে—বিএনপির কী করে বদনাম করা যায়! এটি একটি পরিকল্পীত করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা বিএনপি ক্ষমতা আসলে কঠোর হাতে দমন করবে। আর আওয়ামী লীগ সরকার মনে হয় না দ্বিতীয়বার ফিরতে পারবে, এর কারণ সে নিজেই নিজেকে কবর দিয়েছে। শেখ হাসিনা শেখ মুজিবকেও কবর দিয়েছে—যত সম্মান নাম, খ্যাতি সবই ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। কাজেই জোর করে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। যে চাইবে তাদের অবস্থাও শেখ হাসিনার মতোই হবে। তা ছাড়া গণঅভ্যুত্থানের শরিকদের মধ্যে চরম বিভক্তির ও অনেক কারণ আছে তারাও শেখ হাসিনার মতোই গণঅভ্যুত্থান নিজেদের বলে দাবি করছে এবং নির্বাচন দিতে নারাজ, যার কারণে আজ শরিকদের মধ্যে চরম বিভক্তি তৈরি হয়েছে।
দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ: ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় আছে কি? নির্বাচনের জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন? ঢাকা-১৭ আসনেই এমপি হলে দায়িত্ব কীভাবে পালন করবেন জানতে চায়?
কামাল জামান মোল্লা: আমি খুব আশাবাদী লোক, সবসময় বিশ্বাস করি। আমি মনে করি ইনশাআল্লাহ ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। এবং আমাকে ঢাকা-১৭ আসন থেকে দল বিগতদিনের কথা চিন্তা করে হয়তো মনোনয়ন দেবেন। আপনারা জানেন বর্তমান সরকার ও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি সকলে মিলেই ফেব্রুয়ারি মাসকে ফাইনাল করেছে এবং জামায়াতও বলেছে রোজার আগে নির্বাচন হওয়ার দরকার। নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। যে যাই বলে, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। আমার দল শতভাগ প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচনের জন্য। আমাদের প্রায় সবাই নির্বাচনমুখী হয়ে যার যার এলাকায় আসনভিত্তিক সবাই দল গোছাচ্ছেন, যার যার কেন্দ্রভিত্তিক কিমিটি করছেন। এই নিয়ে ব্যস্ত। তা ছাড়া এই সময়ে নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত এ ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই বলে মনে করি। আর আমি ঢাকা-১৭ আসনেই এমপি হলে জনগণ হ্যাপি হবে। তারা বিগত দিনে বিপদে-আপদে আমাকে কাছে পেয়েছেন, এজন্য তারা আমাকেই হয়তো চাচ্ছেন। তবে আমি এমপি হই বা না হই, অত্র এলাকার মানুষের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব। এ জন্য ঢাকা-১৭ আসনের সকল জনগণের কাছে দোয়া প্রার্থনা।
দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ: নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে জাতিকে কেমন শাসন উপহার দেবে বিএনপি? আপনি কী করে করছেন?
কামাল জামান মোল্লা: তারেক রহমান প্রতিহিংসার রাজনীতি বিশ্বাস করেন না। বাংলাদেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি করবেন না। তিনি যেহেতু রাষ্ট্র প্রধান হবেন, তিনি যেহেতু প্রতিহিংসা পছন্দ করেন না। যে দেশে প্রতিহিংসা না থাকবে সে দেশ অবশ্যই আগাবে। মানুষ কথা বলার সুযোগ পাবে। যখন কথা বলার সুযোগ থাকে সেখানে অন্যায় কমে যায়। আইনের শাসনের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত রাখবেন এবং তিনি শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও জোরদার করবেন। এ বিষয়গুলো তারেক রহমান গুরুত্ব দেবেন। এ ছাড়াও আমাদের ৩১ দফা আছে। ৩১ দফায় পরিষ্কারভাবে সব বলা আছে। বাংলাদেশ একটি নতুন বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। কাজের বিএনপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের মানুষ একটি চমৎকার শাসনব্যবস্থা পাবেন।
দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ: আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর দেশের রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান হতে যাচ্ছে? বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বিষয়টি আলোচনায় এনেছেন। আপনি এটি কীভাবে দেখেন?
কামাল জামান মোল্লা: বাংলাদেশে বর্তমান অনির্বাচিত সরকার আছে এটা একটা দুর্বল সরকার। দুর্বল সরকারের সুযোগে নিয়ে অনেকেই খেলা খেলছে। যেমন, রোহিঙ্গা একটা খেলা আছে। বিগত এক বছরে বর্তমান সরকার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। উনি বলে আসছেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গামুক্ত হয়ে যাবে আগামী রোজার ঈদের আগে। তিনি রোহিঙ্গাদের বলেছেন, ‘আপনারা দেশে গিয়ে ঈদ করতে পারবেন।’ ৬ মাসে দেখছি, বাংলাদেশে আরও ১ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকেছে। ১ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকল, একটি মিডিয়াও কোনো নিউজ করল না। একটি মিডিয়াতেও ফোকাস হলো না। এটা একটা নীল নকশা। এটাও ফ্যাস্টিস শাসনব্যবস্থার মতোই তো হলো। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। ইন্ডিয়া আমাদের সঙ্গে খারাপ কাজও করেছেন—এ দেশের নির্বাচনব্যবস্থায় ব্যঘাত ঘটিয়েছে, আমাদের গণতন্ত্রের উপর ইন্ডিয়া অনেক অন্যায় করেছে। শেখ হাসিনাকে তারা ব্যবহারও করেছে। তা ছাড়া বাংলাদেশ যদি শক্তিশালী দেশ হয়ে যায়, তাহলে ইন্ডিয়ার জন্য হুমকি। বাংলাদেশ কীভাবে নড়বড় দেশ হিসেবে থাকতে পারে সেই চিন্তা করে এরা আমাদের সঙ্গে অন্যায় করেছে। আমি আশা করি, তারেক রহমান প্রধান মন্ত্রী হবেন এবং তিনি নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসলে সেই সুযোগটা দেবেন না। আমাদের প্রিয় নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া রহমান ও ইন্ডিয়ার সাথে লড়াই করেই তার ন্যায্য দাবি আদায় করেছেন। সবসময় ছাড় দেন নাই। তার সন্তান আমাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমান ও কোনো ছাড় দিবেন না। আমি মনে করি, তিনি যথেষ্ট সচেতন। তিনি সবসময় বাংলাদেশের ভালোটাই ভাবতে থাকেন। কাজেই রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান বিএনপির রাজনীতিতে ফিরে আসার শঙ্কা নেই বললেই চলে।
দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ: বিগত সময় ঢাকা-১৭ আসনের বিএনপির নেতাদের ও দলের অনেকে সাহায্য সহযোগিতা করেছে জেলের মধ্যেও। আপনার সহাযোগিতায় অনেকে উপকৃত হয়েছেন। তিতুমীর কলেজের অনেক ছাত্রদের ফরম পূরণ ও পরীক্ষার টাকা দেন গরিব ছাত্রদের নিয়মিত সহযোগিতা করে আসছেন।
কামাল জামান মোল্লা: এমন একটি কথা বললেন, একদিকে আমি আনন্দও পাচ্ছি আবার আরেক দিকে আবেগাপ্লুত হয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে শুধু তিতুমীর কলেজের নয়, ঢাকা-১৭ আসন এলাকার সকল দলীয় নেতাকর্মীকে সহযোগিতা করে আসছি। অসহায় অনেকে আছেন যারা বিগত দিনে চাকরি পাননি বা চাকরি করতে পারেননি, যার খবর পেয়েছি তার পরিবারের পাশেই দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। একেকজন একেক জায়গা থেকে অ্যারেস্ট হয়ে গেছে। সে কোথায় আছে তার কী হেল্প করতে হবে। তার বাসায় চাল আছে কি না। বাচ্চার খাবার, টাকা আছে কি না। সবকিছু নিজের দলের জন্য করেছি। এ দিনের কথা মনে পড়ে এক সময় ২০ থেকে ২৫ জন মহিলা আসছে আমার অফিসে। তাদের ছোট বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে। তাদের বাচ্চার দুধ কিনতে পারছেন না। নিজেই দুধ ও টাকা দিয়েছি।
তা ছাড়া তিতুমীর কলেজের জন্য আমার আলাদা একটু ভালোবাসা আছে। দলের ছেলে যেই আসছে আমি চেষ্টা করেছি সহযোগিতা করতে। আমার সিস্টেম এটাই, কারণ এতে আমি অনেক আনন্দ পাই মানুষকে সহযোগিতা করতে পেরে, এটা আমার বৈশিষ্ট্য। আমি পৃথিবীতে যেখানেই থাকি না কেন সেখান থেকেই দেশের মানুষের প্রতি আমার আলাদা ভালোবাসা রয়েছে। আমার মনে পড়ে, ১৯৮৮-এর বন্যায়, আমি জাপান ছিলাম। জাপান থেকে দেশে এসে ট্রলার নিয়ে প্রতিটি ইউনিয়ন ঘরে গিয়ে গিয়ে চাল দিয়ে আসছি। এটি করে আমি শান্তি পাই, এটা আমি মন থেকেই করি। এটাই আমার ধর্ম।
দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ: অনেকদিন জেলে ছিলেন। দিনরাত রাজনীতি করেন, এর মধ্যে পরিবারকে কীভাবে সময় দিতে পারেন?
কামাল জামান মোল্লা: একটা জিনিস দেখেন আমি জেলের ভেতরে ছিলাম। সেখানে বসে শত শত মানুষকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছি। আমি দেখছি, কী অসহায় জেলের ভেতরে পাঁচ হাজার টাকার জন্য তিন হাজার টাকার জন্য হাওখাও। পুলিশ যাকে পেয়েছে ধরে জেলে নিয়েছে—অনেকের মা জানে না, বাবা জানে না, পরিবারের কেউ জানে না। আমাকে জেলের ভেতরে পেয়ে অসহায় মানুষজন কতই না আনন্দিত হয়। আমিও তাদের দেখে শান্তি পেয়েছি। আমার পরিবার বলতেন, জেলের মধ্যে এত টাকা নিয়ে কী করেন আপনি। দুই-একদিন পর চার-পাঁচ লাখ টাকা নিতাম। এটা বিএনপির মহাসচিব ও জানতেন, মির্জা আব্বাস ও জানতেন। তারাও একসময় জেলে ছিলেন, তিতুমীরের ৭০ জন ছেলে জেলে ছিল, আমার সঙ্গে এই ৭০ জনকেই আমি টাকা দিয়েছি। তিতুমীর বর্তমান প্রেসিডেন্ট তখন সেক্রেটারি ছিলেন, ইমামও জেলে ছিলেন। বর্তমান সিনিয়র আরিফ জেলে ছিলেন। সবাই আমার সাথে প্রত্যেক দিন হাঁটতেন, চলতেন। প্রত্যেকের বেডে গিয়ে টাকা দিয়ে ও খোঁজখবর নিয়ে আসছি। পাঁচ তারিখে এটা হবে, আমিও জানতাম না, আর আশাও করিনি। আমার নেতাও জেলের মধ্যে বলেনি। আমি মন থেকে করেছি দলকে ভালোবেসে। এজন্যই তো ঢাকা-১৭ আসন নিয়ে নীরবে কাজ করে যাচ্ছি। দলের নেতারা আমাকে এত বেশি পছন্দ করে, কারণ তারা আমাকে কাছে পেলে। দল নিয়ে আলোচনা করা, দল রিসার্চ করা এটাই তো রাজনীতি। আর আমার স্ত্রী আমাকে কাছে খুব কম পেয়েছে, পরিবারকে তেমন সময় দিতে পারিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রোগ্রামে চলে যাই, কারণ আমাদের প্রচুর প্রোগ্রাম অনেক মাস গেছে, বছর গেছে, ঘরে ঘুমাতে পারিনি পুলিশের কারণে। মোবাইল চেইঞ্জ করতে হয়েছে। আমার ছোট ছোট দুই মেয়ে—একজনের বয়স ১১ বছর, আরেকজনের ১৪ বছর। ওদের আমার স্ত্রী স্কুলে নিয়ে যায় আবার নিয়ে আসে। রাজনৈতিক কারণে আমি ঠিকভাবে তাদেরকে দেখাশোনা করতে পারি না। বেশি রাতে ঘুমাতাম সকালে আবার বের হয়ে যেতাম। আমার অনেক ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশে দুইটা বড় জাহাজ ছিল আমার। ফ্যাস্টিরা জাহাজ দুইটা আমাকে চালাতে দেয়নি। দুইটা জাহাজ থেকে প্রতি মাসে আমার চার কোটি টাকা ইনকাম হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটাও নিয়ে গিয়েছিল। আমি নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছি, কিন্তু রাজনীতি ছাড়েনি। আমার শেষ কথা হচ্ছে—আমি দলের নিবেদিত প্রাণ যারা তাদের পাশে আছি এবং ঢাকা-১৭ আসনের মানুষের পাশে আছি এবং থাকব।