বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ কর্তৃক নিরাপদ ব্যাংকে ২৫০ কোটি টাকার এফডিআর স্থানান্তর নিয়ে একসময় যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, এখন তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।
বিসিবির বর্তমান কর্মকর্তারা এখন সাবেক সভাপতির করা কিছু এফডিআরের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বিশেষ করে, যে ব্যাংকগুলোতে মোটা অঙ্কের টাকা রাখা হয়েছে, সেগুলোর আর্থিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিসিবির একটি সূত্র জানায়, বেশি মুনাফার আশায় সাবেক সভাপতি যে ব্যাংকটিতে ৫২ কোটি টাকা এফডিআর করেছিলেন, সেটি এখন বিসিবির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে।
সম্প্রতি, বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নির্দেশে দুটি ব্যাংক থেকে পরীক্ষামূলকভাবে দুই কোটি টাকা করে ফেরত চাওয়া হয়। এর মধ্যে একটি ব্যাংক দ্রুত টাকা ফেরত দিতে পারলেও যেটিতে ৫২ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে, সেটি এক মাস পেরিয়ে গেলেও টাকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এই ঘটনায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যে ব্যাংক এক মাসে দুই কোটি টাকা দিতে পারে না, এফডিআরের মেয়াদ পূর্ণ হলে তারা অর্ধশত কোটি টাকা কীভাবে ফেরত দেবে?
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক থেকে নিরাপদ ব্যাংকে স্থানান্তর বিতর্ক
এর আগে, সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পর ঝুঁকিপূর্ণ জনতা, অগ্রণী ও বেসিক ব্যাংক থেকে ২৩৮ কোটি টাকা নিরাপদ এবং তুলনামূলক নিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত ১৩টি ব্যাংকে স্থানান্তর করেছিলেন।
এই সিদ্ধান্তটি তখন ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। ফারুকের বিরুদ্ধে অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগও তোলা হয়, যদিও পরে তা ভুল প্রমাণিত হয়।
২৬ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে ফারুক তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন যে, মধুমতি, ইস্টার্ন, ব্র্যাক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, প্রাইম, সিটি, মেঘনা, পূবালী, অগ্রণী, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ও সিটিজেনস ব্যাংকে এই টাকা এফডিআর করা হয়েছে।
এর মধ্যে মধুমতি (হলুদ) তালিকাভুক্ত। বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছর ঝুঁকিপূর্ণ ও নিরাপদ ব্যাংকের একটি তালিকা হালনাগাদ করে। হলুদ ও লাল তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এর ফলে বিসিবি ২ থেকে ৫ শতাংশ বাড়তি মুনাফার পাশাপাশি ১২ কোটি টাকার স্পন্সরও পেয়েছিল। মধুমতি ও মেঘনা ব্যাংক ঢাকা লিগ এবং জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) স্পন্সর ছিল।
মজার বিষয় হলো, এখন এই মধুমতি এবং মেঘনা ব্যাংক নিয়েই বিসিবি কর্মকর্তারা সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এই দুটি ব্যাংকেই মোট ১১৮ কোটি টাকা এফডিআর করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, আগামী বছর এফডিআরের মেয়াদ পূর্ণ হলে ব্যাংকগুলো টাকা ফেরত দিতে পারবে কি না, তা বলা কঠিন।
একজন পরিচালক বলেন, একটি ব্যাংক আন্তর্জাতিক সিরিজের টিকিট বিক্রি করে থাকে, তাই তারা হয়তো সময়মতো লেনদেন করতে পারবে। কিন্তু দুশ্চিন্তা অন্য একটি ব্যাংককে নিয়ে, যেটি পরীক্ষায় ফেল করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিসিবির টাকা কেউ না নিলেও, ঝুঁকিতে ফেলার অধিকার তো কারো নেই।
আপনার মতামত লিখুন :