ঢাকা রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা পাঁচ অধিনায়ক

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৬:৪০ পিএম
অজিদের ক্রিকেটের সেরা পাঁচ অধিনায়ক। ছবি- সংগৃহীত

ক্রিকেট বিশ্বে অস্ট্রেলিয়া একটি শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিত। এই দলের সাফল্যের পেছনে রয়েছে অনেক খেলোয়াড় ও অধিনায়কের অবদান। তাদের দৃঢ় নেতৃত্ব এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত দলকে বহু আন্তর্জাতিক শিরোপা এনে দিয়েছে।

চলুন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা পাঁচ অধিনায়ককে দেখে নেওয়া যাক, যারা নিজেদের নেতৃত্বের ছাপ চিরস্থায়ী করে গেছেন।

১. স্টিভ ওয়াহ: জয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছেন যিনি

১৯৯৯ সালে মার্ক টেলরের কাছ থেকে নেতৃত্ব নিয়ে স্টিভ ওয়াহ অস্ট্রেলিয়ার সেরা অধিনায়কদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন। তার অধীনে অস্ট্রেলিয়া টানা ১৬টি টেস্ট জয়ের এক ঐতিহাসিক রেকর্ড গড়ে।

এর মধ্যে ১৫টি জয়ই আসে তার নেতৃত্বে। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবেও ওয়াহ দারুণ সফল ছিলেন। ১৯৯৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি টম মুডির সঙ্গে জুটি বেঁধে অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেন।

টেস্ট ক্রিকেটে তার গড় ছিল ৫২.৩০, যেখানে তিনি ৫৭ ম্যাচে মোট ৩,৭১৪ রান করেন। ওয়াহ'র নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া শুধু খেলায় জেতা নয়, বরং একটি জয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে শিখেছিল।

২. রিকি পন্টিং: অপ্রতিরোধ্যতার আরেক নাম

ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিনায়ক হিসেবে রিকি পন্টিংয়ের নাম সবার আগে আসে। তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া ৭৭টি টেস্টের মধ্যে ৪৮টিতে জয় পায়। ওয়ানডে বিশ্বকাপে তার অধীনে ২৬টি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া অপরাজিত ছিল, যা এক অনন্য রেকর্ড।

পন্টিং প্রথমে তারকার ভরপুর একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরে দলের মূল খেলোয়াড়রা অবসর নেওয়ার পরও তিনি কৌশলগত নেতৃত্ব দিয়ে দলের সাফল্য ধরে রেখেছিলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার মোট রান ২৭,০০০-এরও বেশি। টেস্টে ১৩৩৭৯ রান এবং ওডিআইতে ১৩৭০৪ রান। পন্টিংয়ের নেতৃত্ব ছিল আগ্রাসী এবং অপ্রতিরোধ্য, যা প্রতিপক্ষকে সবসময় চাপে রাখত।

৩. অ্যালান বর্ডার: কঠিন সময়ের ত্রাতা

১৯৮৪-৮৫ সালে অস্ট্রেলিয়া যখন কঠিন সময় পার করছিল, তখন কিম হিউজের পদত্যাগের পর অ্যালান বর্ডার দলের দায়িত্ব নেন। প্রথমে অনিচ্ছুক হলেও তিনি দারুণ দৃঢ়তা দেখিয়ে দলকে আবার জয়ের ধারায় ফিরিয়ে আনেন।

তার নেতৃত্বেই অস্ট্রেলিয়া ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ জেতে এবং দুই বছর পর অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করে। টেস্ট ক্রিকেটে ৬,০০০-এর বেশি রান এবং ৫০-এর কাছাকাছি ব্যাটিং গড় নিয়ে তিনি দলকে স্থিতিশীলতা এনে দেন।

বর্ডার শুধু একজন অধিনায়ক ছিলেন না, তিনি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে সহনশীলতা ও দৃঢ়তার এক নতুন সংস্কৃতি তৈরি করেছিলেন।

৪. প্যাট কামিন্স: আধুনিক নেতৃত্বের প্রতীক

টিম পেইনের পদত্যাগের পর ২০২১-২২ সালের অ্যাশেজের আগে প্যাট কামিন্স হঠাৎ করেই অধিনায়কত্ব পান। সময়ের চেয়ে আগে দায়িত্ব পেলেও তিনি দ্রুত দলের হাল ধরেন।

তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া অ্যাশেজ ধরে রাখে এবং ২৪ বছর পর পাকিস্তানে সিরিজ জেতে। ২০২৩ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়াকে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপ - দুটি বড় শিরোপা এনে দেন।

কামিন্স শুধু অধিনায়ক নন, একজন বোলার হিসেবেও সফল। অধিনায়ক হিসেবে তিনি ১৬৯ উইকেট শিকার করেছেন, যা তার নেতৃত্বের পাশাপাশি খেলার প্রতিও তার দক্ষতা প্রমাণ করে।

৫. মেগ ল্যানিং: নারী ক্রিকেটের রানী

মেগ ল্যানিং অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেট দলের সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের একজন। মাত্র ২১ বছর বয়সে ২০১৪ সালে জোডি ফিল্ডসের চোটের পর তিনি দলের নেতৃত্ব পান।

তার অধীনে অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেট দল এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। ওয়ানডেতে তার দলের জয়ের হার ছিল ৮৮.৪%। ল্যানিং চারটি টি-২০ বিশ্বকাপ এবং একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছেন। যা তার নেতৃত্বগুণের প্রমাণ।

ব্যাটিংয়েও তিনি অসাধারণ সফল ছিলেন, ওয়ানডেতে তার গড় ছিল ৫৭-এর বেশি এবং টি-২০তে ৪০-এর বেশি। তার নেতৃত্বেই অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেট দল বিশ্বজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়।

এই পাঁচ অধিনায়ক তাদের নিজ নিজ সময়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছেন। তাদের নেতৃত্বগুণ, কৌশল এবং খেলার প্রতি ভালোবাসা অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটকে চিরকাল অনুপ্রাণিত করবে।