মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) শক্তিশালী ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি হয়েছে। ওই দিন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র রমজানের শেষ জুমার নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে সমবেত হয়েছিলেন। স্থানীয় সময় ১২টা ৫১ মিনিটে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার ফলে মধ্য মিয়ানমারের অন্তত পাঁচটি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তিনটি মসজিদ সম্পূর্ণ ধসে পড়ে।
সাগাইং এলাকার সবচেয়ে বড় মসজিদ মায়োমার ভেতরে থাকা প্রায় সবাই প্রাণ হারান। মসজিদের সাবেক ইমাম সোয়ে নাই ওও থাইল্যান্ডের মায়ে সোতে ভূমিকম্পের কম্পন অনুভব করলেও তখনও তিনি জানতেন না, তার বহু স্বজনের জন্য এ দিনটি শেষ জুমা হয়ে যাবে।
সোয়ে নাই ওও জানান, তিনি মিয়ানমারে ইমামতি করতেন। কিন্তু ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিনি পালিয়ে থাইল্যান্ডে চলে আসেন এবং বর্তমানে একটি মানবাধিকার গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করছেন। ভূমিকম্পের পর তিনি জানতে পারেন, তার প্রায় ১৭০ জন আত্মীয়, বন্ধু এবং প্রিয় প্রাক্তন মুসল্লি মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে অনেক শিশু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও ছিলেন।
সোয়ে নাই ওও বিবিসিকে বলেন, "আমি প্রাণ হারানো সব মানুষের কথা ভাবি। নিহতদের সন্তানদের কথা... তাদের মধ্যে অনেকেই ছোট শিশু... এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না।" কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মসজিদে নামাজ পড়ার সময় আনুমানিক ৫০০ জন মুসলমান প্রাণ হারিয়েছেন। সাগাইংয়ের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে মায়োমা স্ট্রিট অন্যতম। সেখানে রাস্তার পাশের বহু বাড়ি ধসে পড়েছে।
মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় ও সাগাইংয়ে সংঘটিত এই ভূমিকম্পে হাজারো স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। উদ্ধারকারীরা এখনও ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধার করছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশটির সামরিক সরকার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ৭১৯ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৫২১ জন এবং এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৪৪১ জন। জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং এক টেলিভিশন ভাষণে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, নিহতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মান্দালয় শহর থেকে ১৭.২ কিলোমিটার দূরে এবং ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। মূল ভূমিকম্পের ১২ মিনিট পর ৬.৪ মাত্রার আফটারশক অনুভূত হয়, যা ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়িয়ে তোলে। উদ্ধারকাজ এখনও চলছে এবং নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 
                             
                                    

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন