গাজাজুড়ে কেবলই লাশের মিছিল। দিন যত গড়াচ্ছে ক্রমেই মৃত্যুপুরী হয়ে উঠছে ফিলিস্তিন। অনেক আগেই ‘বাফার জোন’ নামে গাজায় ‘কিলিং জোন’ প্রতিষ্ঠার মিশন শুরু করেছিল দখলদার ইসরায়েল। আর সে লক্ষ্যে এখনো অভিযান অব্যাহত। এরই মধ্যে গাজা উপত্যকার সিংহভাগ দখল নিয়েছে তেল আবিব। গাজা উপত্যকাটি এখন আর বসবাসের যোগ্য নেই।
গাজাবাসীর ওপর ইসরায়েলের এই বর্বরতার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো বিশ্ব। তবে প্রশ্ন উঠেছে আরব দেশগুলোকে নিয়ে। গাজাবাসী আরবদের থেকে আলাদা আশ্বাস আর আশার আলো চেয়েছিল। কিন্তু সেই আশা যেন মনে মনেই রয়ে গেল তাদের।
যেখানে পুরো বিশ্ব গাজাকে নিয়ে উত্তাল, সেই আশা অনুযায়ী আরবরা কেন নিশ্চুপ! এ নিয়ে চলছে নানা কানাঘুষা! ইসরায়েলের সঙ্গে গোপন সম্পর্কের কথাও কোনো কোনো গণমাধ্যম উল্লেখ করেছে।
সেভ দ্য চিল্ড্রেন এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজায় ইসরায়েলি বোমার হামলায় প্রতি ১৫ মিনিটে একটি শিশু নিহত হচ্ছে। আর এমন সব খবরেও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মুসলমান দেশগুলো কেন নিশ্চুপ? কেন এক মুসলমান অন্য মুসলমানের পাশে দাঁড়াচ্ছে না? এ কথা ভেবে বিস্ময়কর গাজাবাসীরা।
জনরোষ থামাতে কাগজে কলমে বাহ্যিকভাবে গাজাবাসীর প্রতি সমর্থন জানালেও তলে তলে ফিলিস্তিন ইস্যুতে অনেকটা অসহায় অবস্থায় আছেন মধ্যপ্রাচ্যের আরব নেতারা। এসব নেতার কারো কারো মুখে শোনা যায় নিজেদের কারণেই গাজাবাসীর জীবনে এমন দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
এক প্রতিবেদন বলছে, বাহরাইন, মরক্কো, সুদান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০২০ সালে সম্পর্কের বৈরিতা ভুলে ইসরায়েলের সঙ্গে ফের স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।
এ বিশ্বে মুসলিম আস্থাভাজন হিসেবে যাদের ধরা হয় সেই সৌদি আরবও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের বৈরিতা ঘটায়নি। কথিত আছে এই দেশ গোপনে গোপনে তেল আবিবের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যম চ্যানেল ১৪’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের কয়েক বছর ধরে ‘গোপন সম্পর্ক’ চলমান।
নেতানিয়াহুর ওই ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের পক্ষে মাত্র চারজন এবং সৌদি আরবের পক্ষেও সীমিতসংখ্যক ব্যক্তি এই সম্পর্কের বিষয়ে অবগত ছিলেন।
এদিকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদি আরবের নীতি পরিবর্তন দেখা গেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক কেবল রাষ্ট্রীয় বা কূটনীতি নয়, বরং এ সম্পর্কে ব্যক্তিগত স্বার্থকেও প্রভাবিত করছে। ক্ষমতার লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে থাকা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর মাধ্যমে নিজের অবস্থান বরাবরই শক্ত করতে চেয়েছেন।
২০১৭ সালে তিনি গোপনে ইসরায়েল সফর করেন এবং এরপর একাধিকবার ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন। সে সময় তিনি ফিলিস্তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে বলেছিলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে অথবা ‘চুপ থাকতে’ হবে।
এদিকে মিসরীয় সমাজের বড় একটি অংশ চায় না গাজার উদ্বাস্তুদের গ্রহণ করতে। এ বিষয়ে মিসরের সরকারপন্থি রাজনীতি বিশ্লেষক ইব্রাহিম ঈসা হামাসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা কেন আপনাদের যুদ্ধ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন? আপনারা কেন আপনাদের স্বার্থে ১০ কোটি মিসরীয়র জীবন বিপন্ন করতে চান?
বিশ্লেষকদের মত অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক আরব দেশ তাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের দিকে বেশি মনোযোগী। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার ফলে তারা তাদের অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী করতে চায়। সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কিছু দেশ এই কারণে ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়াতে সাহস পাচ্ছে না।
এই নীরব ভূমিকার পাশাপাশি আরবদের কারো কারো ব্যবহারে বিতর্ক সৃষ্টিসহ তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এসব সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্র এখনো গোপনে ব্যবসা বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক রেখেই যাচ্ছে।
সম্প্রতি একটা তথ্য থেকে প্রকাশ হয়েছে, মধ্যস্থতায় বেশি গুরুত্ব পাওয়ার আশায় ইসরায়েলের দুই কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কাতারের বিরুদ্ধে৷
এ ছাড়াও কয়েকদিন আগে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে ফিলিস্তিনিদের অনেকটা অপমান আর অসহায় করে তুলেছে আরব আমিরাত।
গাজার এক স্থানীয় বলেন, আরব ও মুসলিমরা যতদিন পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকবে ফিলিস্তিন ততদিন পর্যন্ত মার খেয়েই যাবে। আমাদের আর কোনো আশা নেই। এই নিপীড়িত জনগণের দিকে আর কোনো রাষ্ট্র হাত বাড়ায় না।
আমেরিকার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা পেয়ে থাকে মিশর ও জর্ডান। দেশ দুটি আমেরিকার কাছ থেকে বছরে প্রায় ১৭০ কোটি ডলার সহায়তা পেয়ে থাকে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন কিংস কলেজের গবেষক আদ্রিয়াস ক্রেইক বলেন, আরব বাজারের চটকদার ক্রেতারা পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করে থাকে। কেননা তারা নিজেরা নিজেদের স্বার্থের জন্য এসব কাজ করে থাকে।
কাতার এফ-৫০ রাফায়েল ও টাইফেনের মতো যুদ্ধবিমান কিনেছে ওয়াশিংটন। আর এভাবেই পশ্চিমারা আরবদের নিশ্চুপ রাখার নানা কায়দা অবলম্বন করে যাচ্ছে।

 
                            -20250409055248.jpg) 
                                    


 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন