ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্রে শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
ব্রিটেনের কাছ থেকে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই কাশ্মীরকে নিজেদের অঞ্চল দাবি করে আসছে দুই দেশ। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি যুদ্ধেও জড়িয়েছে তারা।
মঙ্গলবার (৬ মে) রাতে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে বিমান, নৌ ও স্থল বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি হামলা চালায় ভারত। এটি ছিল ২০১৯ সালের বালাকোট হামলার পর ভারতের সবচেয়ে বড় কোনো অভিযান। জবাবে পাল্টা হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানও।
এ হামলায় পাকিস্তানের কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারতে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় আশঙ্কা করা হয়েছিল, ২০২৫ সালে ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে।
সম্প্রতি কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তান সেনাদের সংঘর্ষ, পারস্পরিক হুমকি-ধমকি এবং যুদ্ধসজ্জা যেন ফের ঘনীভূত করছে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, ২০২৫ সাল যে শুধু এক অনুমান ছিল, তা নয়। এটি এখন এক বাস্তব আশঙ্কা।
এ খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’ বিশ্বে সামরিক শক্তি এবং অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে একটি ধারণা তুলে ধরে। সেই ধারণায় বলা হচ্ছে ২০২৫ সালে ১৪৫টি দেশের মধ্যে ভারত বিশ্বের চতুর্থ সামরিক শক্তির রাষ্ট্র। এ তুলনায় পাকিস্তানের অবস্থান ১২ তম।
এদিকে, যুদ্ধের মাঠে পারমাণবিক অস্ত্রে সমান পর্যায়ে আছে দুই দেশ।
পাকিস্তানের রয়েছে আনুমানিক ১৭০টির মতো পারমাণবিক অস্ত্র। ভারতের রয়েছে আনুমানিক ১৭২টি পারমাণবিক ওয়ারহেড।
তবে ঠিক কয়টি ওয়ারহেড যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছে দুই দেশের, তা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি।
এসআইপিআরআই-এর মতে, পাকিস্তান মূলত ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। এদিকে চীনকে লক্ষ্যবস্তু করতে ভারত মনোযোগ দিয়েছে দূরপাল্লার অস্ত্রের দিকে।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিশালী রাষ্ট্র চীন। ২০২৪ সালে তারা পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারে বা ওয়ারহেডের সংখ্যা ২২ শতাংশ বাড়িয়েছে। এখন তাদের মোট ওয়ারহেড সংখ্যা ৪১০ থেকে বেড়ে ৫০০ হয়েছে।
ভারত
ভারতের রয়েছে পৃথ্বী সিরিজ (২৫০-৬০০ কি.মি), অগ্নি সিরিজ (১২০০-৮০০০ কি.মি), নির্ভয়া ও ব্রহ্মোস ক্ৰুজ ক্ষেপণাস্ত্র। অগ্নি-৫ একটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র, যা সাত থেকে আট হাজার কি.মি. পাড়ি দিতে সক্ষম।
ভারতের ধনুষ হলো নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। ভারতের সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য কে-১৫ বা বি-০৫ (সাগরিকা/শৌর্য) ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ প্রায় ৭০০ কি.মি.।
এসব অস্ত্র বহনের জন্য ভারতের রয়েছে আধুনিক ডেলিভারি সিস্টেম। যেমন- অগ্নি-থ্রি ও অগ্নি-ফাইভ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (যার পাল্লা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার), মিরাজ ২০০০ ও রাফায়েল যুদ্ধবিমান এবং সমুদ্রভিত্তিক প্রতিরক্ষায় পারমাণবিক সাবমেরিন আইএনএস আরিহান্ট।
পাকিস্তান
ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে দেশটির ক্ৰুজ, টেকটিক্যাল ও স্বল্প-মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ট্যাকটিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্র যেমন হাতাফ-১ ও নাসের ৬০-১০০ কি.মি. দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
এ ছাড়া স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের রয়েছে আব্দালি (২০০ কি.মি.), গজনবি (৩০০ কি.মি.), রা’দ (৩৫০ কি.মি.), বাবর (৭০০ কি.মি.) ও শাহীন-১ (৭৫০-১০০০ কি.মি.)।
মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে গৌরি-১ (১৫০০ কি.মি.), গৌরি-২ (২০০০ কি.মি.), আবাবিল (২২০০ কি.মি.), শাহীন-২ ও শাহীন-৩ (২৫০০-২৭৫০ কি.মি.) উল্লেখযোগ্য।
আবাবিল ও শাহীন-৩ একসঙ্গে কয়েকটি ওয়ারহেড বহনে এবং শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম।
পাকিস্তানের অস্ত্র বহন করার জন্য রয়েছে, শাহিন-টু ও শাহিন-থ্রি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান এবং বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র।
পাকিস্তান অনুসরণ করে ‘ফুল-স্পেকট্রাম ডেটারেন্স’ নীতি। এ কৌশলের আওতায় দেশটি প্রয়োজনে যুদ্ধের সময়ই আগেভাগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :