ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সদ্যসমাপ্ত ভিয়েতনাম সফরে দুই দেশের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের ১৪টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ২০টি এয়ারবাস বিমান ক্রয় এবং প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ খাতে সহযোগিতা।
সোমবার (২৬ মে) হ্যানয়ে ফ্রান্স ও ভিয়েতনামের মধ্যে এই চুক্তিসমূহ স্বাক্ষরিত হয়। সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল এশিয়ায়, বিশেষ করে সাবেক উপনিবেশ ভিয়েতনামে ফ্রান্সের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়ানো।
এটি প্রায় এক দশকের মধ্যে কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্টের প্রথম ভিয়েতনাম সফর। এমন সময় এই সফর হলো যখন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছে। এর মধ্যেই ম্যাক্রোঁর এ সফর দুই ব্লকের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে।
ম্যাক্রোঁ জানান, সফরে মোট ৯ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১০.২৫ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের চুক্তি হয়েছে। এতে রয়েছে পারমাণবিক শক্তি, রেল, সামুদ্রিক পরিবহন এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা।
বিমান চুক্তির অধীনে ভিয়েতনামের বেসরকারি বিমান সংস্থা ভিয়েতজেট ২০টি এয়ারবাস এ৩৩০এইও ওয়াইড-বডি বিমান কিনবে। তবে কোম্পানিগুলো এখনো চুক্তির আর্থিক পরিমাণ ও সরবরাহের সময়সূচি জানায়নি।
এছাড়া, এয়ারবাসের পক্ষ থেকে একটি পৃথক স্যাটেলাইট চুক্তির ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর হয়েছে, যার মাধ্যমে তারা ভিয়েতনামের জন্য একটি নতুন পৃথিবী-পর্যবেক্ষণ উপগ্রহ তৈরির সম্ভাবনা অনুসন্ধান করবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা প্রসঙ্গে ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘ভিয়েতনামের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্বে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত’। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট লুং কুওং জানান, এতে কৌশলগত তথ্য ভাগাভাগি, প্রতিরক্ষা শিল্প উন্নয়ন এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী প্রচেষ্টায় যৌথ কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ফরাসি নৌপরিবহন সংস্থা সিএমএ সিজিএম ঘোষণা দিয়েছে, তারা ভিয়েতনামের সাইগন নিউপোর্টের সঙ্গে যৌথভাবে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের একটি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে, যার কাজ শেষ হবে ২০২৮ সালের মধ্যে।
উল্লেখ্য, ফ্রান্স ১৯৫৪ সালে দিয়েন বিয়েন ফু যুদ্ধ পর্যন্ত প্রায় ৭০ বছর ভিয়েতনাম শাসন করেছে। সেই ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্ক আবারও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, যার সর্বশেষ উদাহরণ এই উচ্চ পর্যায়ের সফর ও চুক্তিসমূহ।
আগামীকাল মঙ্গলবার ম্যাক্রোঁ হ্যানয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের পর সফরের পরবর্তী গন্তব্য ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা যাবেন।
এই সফরের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ফ্রান্স তার ভূ-রাজনৈতিক উপস্থিতি আরও জোরদার করতে চায়, এবং ভিয়েতনাম এতে এক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :