যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে দেওয়া মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের রায় আপাতত স্থগিত করেছে ফেডারেল আপিল আদালত।
ফলে যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিশ্বব্যাপী শুল্ক আদায় চালিয়ে যেতে পারবে। আগামী ৫ জুন মামলার পরবর্তী শুনানিতে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানানো হয়েছে।
মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত গত ২৮ মে রায় দেয়, আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (আইইইপিএ) ব্যবহার করে ট্রাম্প এককভাবে প্রায় সব দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারেন না।
আদালত বলে, সংবিধান অনুযায়ী কংগ্রেসেরই একমাত্র ক্ষমতা রয়েছে বিদেশি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের, প্রেসিডেন্ট সেখানে সীমিত ক্ষমতা রাখেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে গতকাল ২৯ মে হোয়াইট হাউস আপিল করলে ওয়াশিংটনের ফেডারেল সার্কিট আদালত তা স্থগিত করে । আপিল আদালত আগামী ৫ জুন মামলাকারীদের এবং ৯ জুন প্রশাসনের জবাব জমা দেয়ার তারিখ নির্ধারণ করে।
এই মামলায় অংশ নিয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি রাজ্য। তারা দাবি করে, ট্রাম্পের ‘লিবারেশন ডে’ শুল্ক তাদের ব্যবসার ক্ষতি করছে এবং সংবিধানবিরোধীভাবে আরোপ করা হয়েছে।
আদালত মেক্সিকো, চীন ও কানাডার ওপর শুল্কও অবৈধ বলেছে, যদিও গাড়ি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো পণ্য নিয়ে পৃথক আইন থাকায় তা বিবেচনায় আনা হয়নি।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প নিজের প্ল্যাটফর্মে লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও আর্থিক নিরাপত্তার জন্য প্রেসিডেন্টের হাতে সুরক্ষার ক্ষমতা থাকা উচিত।’
অপরদিকে, নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস বলেন, ‘আইন স্পষ্ট: যেকোনো প্রেসিডেন্টের এককভাবে কর বাড়ানোর অধিকার নেই।’
বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসন আদালতে যে যুক্তি দিয়েছে, তাতে ১৫০ দিনের জন্য ১৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপের সুযোগ রয়েছে।
এছাড়াও, জাতীয় নিরাপত্তা ও বাণিজ্য বৈষম্যের অভিযোগে শুল্ক আরোপের জন্য অতীতের আইনগুলো আবারও ব্যবহার করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন।
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী একটি নতুন শুল্কব্যবস্থা ঘোষণা করেন, যাতে প্রায় সব দেশের ওপর ১০% ভিত্তিক শুল্ক আরোপ হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মেক্সিকো ও চীন- এই দেশগুলোও বেশি হারে পাল্টা শুল্কের মুখে পড়ে। এর ফলে বৈশ্বিক বাজারে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়।
বাণিজ্য বিশ্লেষক পল অ্যাশওয়ার্থ বলেন, এই রায় ট্রাম্প প্রশাসনের ৯০ দিনের আলোচনাকালীন সময়ে সম্ভাব্য চুক্তিগুলোকেও অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। অন্য দেশগুলো আপাতত অপেক্ষা করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক শুল্ক চুক্তির কিছু অংশ এই রায়ে প্রভাবিত না হলেও, অন্যান্য পণ্যের ওপর থাকা ১০% শুল্ক এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এই চুক্তি এখনো কার্যকর হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বিভাগ জানায়, আপিল চলাকালীন বর্ডারে শুল্ক আদায় স্বাভাবিকভাবেই চলবে। তবে প্রশাসন চূড়ান্তভাবে হেরে গেলে তখন অর্থ ফেরতের নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :