উত্তর সিকিমের ছাতেন এলাকায় ভয়াবহ ভূমিধসে ভারতীয় সেনাবাহিনীর শিবির ধ্বংস হয়ে তিনজন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন এবং আরও ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন।
বিবিসি বাংলা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রোববার (১ জুন) রাতের এই ঘটনায় চারজন আহত সেনাকে উদ্ধার করা হয়।
নিহত সেনা সদস্যরা হলেন, হাবিলদার লাখবিন্দর সিং, ল্যান্স নায়েক মুনিশ ঠাকুর এবং বেসামরিক পোর্টার অভিষেক লাখাড়া। প্রবল বৃষ্টির ফলে ভূমিধসটি ঘটে মংগন জেলার লাচেন এলাকায় সন্ধ্যা সাতটার দিকে। এর জেরে উত্তর সিকিম কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
গত কয়েকদিন ধরেই তিস্তা নদীর উজানে ভারী বৃষ্টি চলছিল। এর ফলে নদীর পানিস্তর বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যায় এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ধসে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সিকিমের লাচুং, লাচেনসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় পর্যটন এলাকায় ভারী বৃষ্টিজনিত ধস ও নদীর জলস্তর বৃদ্ধির কারণে আটকা পড়েছিলেন প্রায় ৩ হাজার পর্যটক। তাদের মধ্যে সোমবার পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনকে উদ্ধার করে ফিডাং এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই।
আরও একদল পর্যটক, যাদের প্রায় ১,৬৭৮ জন ফিডাংয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আটকে পড়াদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং স্থানীয় লাচুং হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা যৌথভাবে কাজ করছেন।
সোমবার আবহাওয়া কিছুটা উন্নত হলে সড়কপথে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। স্থানীয় লাচুংপা সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য, যারা মূলত হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, নিজেরাই পর্যটকদের ব্যাগ তুলে গাড়িতে তুলে দেন।
তবে পরিস্থিতি এখনও বিপজ্জনক। চুংথাং, নামচি, লেগশিপ ও কিউজিংয়ের মধ্যেও ধস নামায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুৎ এবং পানির সরবরাহ ব্যাহত রয়েছে। চুংথাং থেকে মুন্সিথাং যাওয়ার পথে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে, যেখানে ১১ জন পর্যটক ছিলেন। গাড়িটি প্রায় ১২০০ ফুট গভীর খাদে পড়ে যায়, উদ্ধার তৎপরতা চলছে।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন উত্তর-পূর্ব ভারতে আরও খারাপ আবহাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে সিকিম, মিজোরাম, ত্রিপুরা, অসম এবং মণিপুরে ভূমিধস ও বন্যায় ১২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং অন্তত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
উত্তর সিকিমের তিস্তা নদীর পাড়ঘেঁষা এলাকায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। ডিকচু, সিংথামসহ অনেক জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে বড় ধরনের প্রাণহানি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
আপনার মতামত লিখুন :