ভারতের আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানে ২৪২ জন যাত্রী ছিলেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। এর মধ্যে একজন ছিলেন ব্রিটিশ যাত্রী জেমি রে মিক। তাকেও করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে।
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে মিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও শেয়ার করেন।
ভিডিওটিতে আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে হাস্যোজ্জ্বল জেমি রে মিক ভারতকে বিদায় জানাতে দেখা গেছে। ভিডিওতে উচ্ছ্বসিত মিক বলছেন, ‘আমরা বিমানবন্দরে এসেছি। লন্ডনে ফেরার ১০ ঘন্টার ফ্লাইটে ভারতকে বিদায় জানাচ্ছি।’
পাশে থাকা অন্য একজনের সঙ্গে কথা বলেন মিক। এ সময় ‘সঙ্গীর সঙ্গে ধৈর্য না হারানোর’ কথা বলে মিক বলেন, ‘তারপরে একটি মৃদু হাসি ও সুখে ফিরে যাওয়া।’
ভয়ংকর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর আগে ব্রিটিশ তরুণের শেয়ার করা এই ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। শেয়ার করে নেটিজেনরা মর্মস্পর্শী অনুভূতি জানাচ্ছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, গুজরাটের আহমেদাবাদের সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল বিমানবন্দরে দুপুর ১ টা থেকে ২ টার মধ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটে। বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার নামক উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের পর ৮২৫ ফুট উপরে উঠতেই এটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত ঘটনার শোকস্তব্ধ গোটা বিশ্ব। উড়োজাহাজটিতে থাকা ২৪২ জন আরোহীর কেউ বেঁচে না থাকার তথ্য জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। তবে প্রাপ্ত শেষ খবরে একজন আরোহীকে জীবিত উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন এক যুবক, যিনি বিমানের ১১-ই নম্বর আসনে বসা ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাঁটতে দেখা গেছে। তার পরনে ছিল সাদা টি-শার্ট ও কালো ট্রাউজার, মুখ ও কপালে ছিল জখমের দাগ।
পরে আহমেদাবাদ পুলিশ সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করে ‘একজন বেঁচে গেছেন’ এবং তাকে চিকিৎসাসেবার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বেঁচে যাওয়ার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বিস্ময়’ তৈরি করেছে। অনেকেই এটিকে ‘ঈশ্বরের ইচ্ছা’, ‘অলৌকিক ঘটনা’ এবং ‘নতুন জীবন পাওয়া’ বলে মন্তব্য করছেন।
এদিকে, বিমান দুর্ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান রানওয়ে থেকে উড্ডয়ন করার পর কিছুটা দুলতে দুলতে এগিয়ে যাচ্ছিল। এর কিছু সময় পর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আঘাত হানে।
বিমান চলাচল বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সাবেক ক্যাপ্টেন সৌরভ ভাটনাগর এনডিটিভিকে জানান, উড্ডয়নের পর সম্ভবত বিমানটির পাখির আঘাতে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞের মতে, উড্ডয়নের সময় বিমানটির শক্তির অভাব দেখা দেয়, যার ফলে বিমানটি ওপরের দিকে উঠতে ব্যর্থ হয় এবং এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
ভাটনাগর বলেন, ‘প্রথমতো, মনে হচ্ছে একাধিক পাখি আঘাত হানায় দুটি ইঞ্জিনও বিকল হয়ে গেছে। উড্ডয়ন ছিল নিখুঁত, তবে ল্যান্ডিং গিয়ারটি ওপরে তোলার আগেই বিমানটি নিচে নামা শুরু করে। এর কারণ সাধারণত ইঞ্জিনের বিকল হওয়া অথবা বিমানের আকাশে থাকার সামর্থ্য হারানো।’
তিনি আরও জানান, ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে উড্ডয়ন ছিল বেশ সুন্দর এবং বিমানটি নিয়ন্ত্রিতভাবে নিচে নেমে আসে। পাইলট জরুরি পরিস্থিতির জন্য ‘মে ডে’ কল করেছিলেন, যা দেখায় যে বিমানটি তীব্র পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল।
ঘটনার এখনো তদন্ত চলছে এবং ঘটনার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :