ইসরায়েলের হামলার পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অবস্থান ঠিক কোথায় তা আমরা পুরোপুরি জানি না বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রাক্তন উপপরিচালক জেনারেল ফর সেফগার্ডস অলি হেইনোনেন।
রেডিও ফোর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
হেইনোনেন মনে করেন, ইসরায়েল সম্ভবত তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, ইসরায়েলের বোমা হামলার পর ফোর্দো ও নাতাঞ্জ স্থাপনা খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। কিন্তু প্রধান প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে, ইরান তাদের ৪০০ কিলোগ্রামের বেশি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কোথায় সংরক্ষণ করছে?
তিনি বলেন, ইরানের গোপন আস্তানা থাকলেও তা যে বড় হতে হবে এমনটা না। তবে সেখানে আইএইএ-এর নজরদারি না থাকলে আমাদের বড় সমস্যা হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ইরানে ‘দ্য রাইজিং লায়ন’ নামক অভিযান পরিচালনা করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইরানকে ‘অস্তিত্বগত হুমকি’ মনে করে বলেই ইসরায়েল এ হামলা করেছে।
হামলার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই। মার্কিন গোয়েন্দারা ইরানের পরমাণু সংশ্লিষ্ট স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার সতর্কতা দিয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই।
তারা বলেছিল, ইরানের পারমাণবিক বোমা বানানোর প্রকল্প নিয়ে বেশ উদ্বেগে আছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং ইরানকে এই অস্ত্র তৈরি করা থেকে বিরত রাখতে দেশটিতে সামরিক হামলা চালানো ব্যতীত অন্য কোনো বিকল্প উপায়ে ‘আগ্রহী’ নন তিনি।
ইরানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংস ও ইরানের ইসলামপন্থি সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্যে ইরানে হামলার পরিকল্পনা করছেন নেতানিয়াহু।
১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানের ক্ষমতায় আসে ইসলামপন্থি সরকার, যা ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়। প্রকাশ্যে বিশ্বের মানচিত্র থেকে ইসরায়েলকে মুছে ফেলার লক্ষ্য ঘোষণাও করেছিলেন তৎকালীন সরকার প্রধানেরা।
এ লক্ষ্য পূরণের জন্য ইয়েমেনে হুতি, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাস, লেবাননে হিজবুল্লাহসহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আরও কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে ইরান। গোষ্ঠীগুলোর মূল লক্ষ্য ইসরায়েলকে ধ্বংস করা এবং তেহরান নিয়মিত এসব গোষ্ঠীকে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে।
দীর্ঘদিন ধরে ইরানের মদদপুষ্ট গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলে চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে আসছিল। তবে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের অতর্কিত হামলার পর গাজায় যখন সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ, সে সময় নতুনভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে হুতি ও হিজবুল্লাহ।
গাজায় অভিযান চালানোর পাশাপাশি ইয়েমেন ও লেবাননে গত বছর বিমান অভিযান চালিয়ে এ দুই গোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি করেছে ইসরায়েল।
ইরানের পরমাণু প্রকল্প সরাসরি ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হওয়ায় এবং গাজা অভিযান ও কারাবন্দি উদ্ধারে স্থবিরতায় জনসমর্থন কমেছে নেতানিয়াহুর।
এদিকে, সম্প্রতি ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে সরকার পতনের ভোটে স্বল্প ব্যবধানে বেঁচে যায় নেতানিয়াহুর সরকার।
সে জন্য নিজের ও দেশের স্বার্থে ইরানের পরমাণু প্রকল্পে হামলা করে নেতানিয়াহু।
আপনার মতামত লিখুন :