ইরান ও ইসরায়েলের চলমান উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে জড়িয়ে পড়ছে, তা নিয়ে এখন গভীর তদন্ত চলছে। ইরানের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের প্রথম হামলায় ওয়াশিংটন জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করলেও, যুক্তরাষ্ট্র এখন তেহরানের প্রতি আরও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ জানান, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান শক্তিশালী করা।
নিউজউইক ও অন্যান্য ওপেন-সোর্স তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব সামরিক শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে বা তার আশেপাশে মোতায়েন হচ্ছে, তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো।
যুদ্ধবিমান
তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মার্কিন সেনাবাহিনী মধ্যপ্রাচ্যে এফ-১৬, এফ-২২ ও এফ ৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েনের মাধ্যমে আকাশে নিজেদের বিমান শক্তি বৃদ্ধি করছে।

এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন হলো একটি অত্যন্ত অভিযোজিত যুদ্ধবিমান, যা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এফ-২২ র্যাপ্টর ও এফ-৩৫ লাইটং টু স্টিলথ প্রযুক্তি ও অত্যাধুনিক হামলা সক্ষমতা নিয়ে তৈরি।
ট্যাঙ্কার বিমান
ফ্লাইট ডেটা ট্র্যাকিং সূত্র অনুসারে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন বিমান জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিমান মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে। ইরানের উপর যেকোনো টেকসই অভিযানের জন্য এগুলো প্রয়োজন হবে।
এর মধ্যে রয়েছে কেসি-১৩৫আর স্ট্র্যাটোট্যাঙ্কার, যা মার্কিন বিমান বাহিনীর প্রাথমিক বিমান জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিমান। এর মধ্যে রয়েছে কেসি-৪৬এ পেগাসাস ট্যাঙ্কার পরবর্তী প্রজন্মের বিমান জ্বালানি তেল সরবরাহকারী ট্যাঙ্কার।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্যাঙ্কারগুলো ইউরোপে ন্যাটো মহড়ায় যোগ দিতে পারে। পররাষ্ট্র দপ্তর কূটনীতিকদের বলেছে, আয়োজকদের আশ্বস্ত করতে হবে যে ট্যাঙ্কারগুলো ইরানে ইসরায়েলি বিমান অভিযানকে সমর্থন করছে না।
ডিয়েগো গার্সিয়ায় বোমারু বিমান
যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জের ডিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটিতে তার বোমারু বিমান বাহিনী তৈরি করছে। ইসরায়েলের কাছে নেই এমন বাঙ্কার ব্লাস্টার গোলাবারুদ দিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যেকোনো হামলায় এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিউজউইক কর্তৃক বিশ্লেষণ করা স্যাটেলাইট চিত্রগুলো সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ক্রমবর্ধমান মোতায়েনের ইঙ্গিত দিয়েছে।

বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বোমারু বিমানগুলো প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরণের অস্ত্র বহন করতে পারে, যার মধ্যে গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করার জন্য ডিজাইন করা বাঙ্কার-বাস্টিং বোমাও রয়েছে। বি-৫২এইচ স্ট্র্যাটোফোর্ট্রেস বোমারু বিমান, যা তাদের দূরপাল্লার আঘাত ক্ষমতার জন্য পরিচিত।
যুদ্ধ সহায়তা জাহাজ
স্যাটেলাইট চিত্র অনুসারে, মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজগুলো বাহরাইনের গুরুত্বপূর্ণ মানামা বন্দর ছেড়ে গেছে, যা বর্তমানে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের অপারেশন এলাকায় চলছে।
এই অঞ্চলের জাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় যুদ্ধ জাহাজ, দ্রুত, চটপটে এবং নেটওয়ার্কযুক্ত পৃষ্ঠতল জাহাজ, যা তীরের কাছাকাছি অভিযানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং উন্নত সোনার সিস্টেম ব্যবহার করে মাইন নিষ্ক্রিয় করার জন্য মাইন প্রতিরোধী জাহাজ।
এছাড়াও রয়েছে এম/ভি ওসান ট্রেডার একটি বিশেষ অপারেশন মাদারশিপ যা মার্কিন বাহিনীকে সমর্থন করে।
ক্যারিয়ার গ্রুপ
বিমানবাহী ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপগুলো প্রয়োজনে মোবাইল ফায়ারপাওয়ার এবং অন্যান্য অপারেশনাল ইউনিটের সহায়তা প্রদান করে। একটি ক্যারিয়ার গ্রুপ বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছে এবং আরেকটি আসার পথে রয়েছে।
ইউএসএস কার্লভিনসন ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ সম্প্রতি আরব সাগরে এফ-৩৫সি লাইটনিং টুএস, এফ/এ-১৮ই/এফ সুপার হর্নেটস, ইএ-১৮সি গ্রোলার্স, ই-২ডি অ্যাডভান্সড হকিস, সিএমভি-২২ অস্প্রেস এবং এমএইচ-৬০আর/এস সি হকস নিয়ে গঠিত একটি এয়ার উইং নিয়ে কাজ করছে।

গত মাসের গোড়ার দিকে যুদ্ধবিরতি হওয়ার আগে এটি ইয়েমেনি-ভিত্তিক ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া হুথিদের বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিমান হামলায় অংশ নিয়েছিল।
ইউএসএস নিমিৎজ ক্যারিয়ার গ্রুপটি এখন পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ট্রানজিট করছে। সম্প্রতি এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছিল। এর বিমানবাহিনীতে এফ/এ-১৮সি/ই/এফ সুপার হর্নেটস, ইএ-১৮জি গ্রোলার্স, ই-২ডি হকিস, সি-২এ গ্রেহাউন্ডস এবং এমএইচ-৬০আর/এস সি হকস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা
প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো এপ্রিল মাসে মার্কিন সেনাবাহিনী প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে মধ্যপ্রাচ্যে স্থানান্তরিত করে। বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের সম্পূর্ণ ব্যাটালিয়ন অর্থাৎ ৭৩টি সি-১৭ কার্গো বিমান ভ্রমণে উড়েছিল।
প্যাট্রিয়ট সিস্টেমকে ব্যাপকভাবে একটি শীর্ষস্থানীয় স্থল-ভিত্তিক বিমান প্রতিরক্ষা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা নির্দিষ্ট ধরণের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র-সহ উন্নত হুমকিগুলোকে প্রতিহত করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত।
‘ডুমসডে প্লেন’
ফ্লাইটরাডার২৪ এর তথ্য অনুসারে, প্রেসিডেন্টের জন্য একটি যুদ্ধকালীন কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ বিমান, মার্কিন বিমান বাহিনীর ‘ডুমসডে প্লেন’, মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর দিয়ে উড়েছিল এবং পুরো সময় ধরে ট্র্যাক করা যায়।
এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে সরাসরি অভিযানের পরিবর্তে শক্তি প্রদর্শনের ইঙ্গিত দেয়।
ই-৪বি ‘নাইটওয়াচ’ সামরিকায়িত বোয়িং ৭৪৭ জাতীয় বিমানবাহী অপারেশন সেন্টার ও প্রেসিডেন্ট, প্রতিরক্ষা সচিব এবং জয়েন্ট চিফদের জন্য মূল কমান্ড লিঙ্ক হিসেবে কাজ করে।
জাতীয় জরুরি অবস্থা বা স্থল কমান্ড হারানোর ক্ষেত্রে এটি বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার, যুদ্ধের আদেশ কার্যকর করার এবং বেসামরিক প্রতিক্রিয়া সমন্বয় করার জন্য টিকে থাকার মতো নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে। ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার সময় এটি ব্যবহৃত হয়েছিল।
আপনার মতামত লিখুন :