ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ডস করপসের (আইআরজিসি) শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা এবং পরমাণু কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ৯ বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে ইসরায়েল। এই হামলার জবাবে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা গুঁড়িয়ে দিয়ে দেশটির মূল ভূখণ্ডে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। এসব হামলায় রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পরমাণুবিজ্ঞানীদের টার্গেট করে ইসরায়েলের অভিযানের নাম ছিল ‘নারনিয়া’। পুরো অভিযানে ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের নির্মূলের জন্য চারটি ভাগে ভাগ করেছিলেন। তাদের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন অগ্রাধিকারে তালিকা করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সামরিক দক্ষতা সম্পন্ন এবং তাদের প্রতিস্থাপনে সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হবে, এমন ৯ বিজ্ঞানীকে হত্যায় তালিকার শীর্ষে স্থান দেওয়া হয়েছিল। এরপর ইসরায়েল গুরুত্ব অনুসারে একটি হিট লিস্ট তৈরি করেছিল। গোয়েন্দাদের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই এই তালিকা করা সম্ভব হয়। হত্যার শিকার বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞরা পরমাণু কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
জানা গেছে, এই অভিযানের পরিকল্পনা করতে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিমান বাহিনীর ১২০ জন সদস্যকে ‘ইউনিট ৮২০০’-এর একটি স্থাপনায় আনা হয়েছিল। জানুয়ারির মধ্যে কোনো সমাধান না পাওয়ায় চাপ বাড়তে থাকে। ঐকমত্য হয়েছিল যে, ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়েই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
ইসরায়েলি এক সামরিক কর্মকর্তা বলেন, গত বছর আমরা একটি ‘টার্গেট ব্যাংক’ তৈরি শুরু করেছিলাম। সাফল্য আসে যখন আমরা একটি গোয়েন্দা ঘাঁটি এবং একটি বিমান বাহিনীর ঘাঁটি আবিষ্কার করি। তবে টার্গেট ব্যাংকে পর্যাপ্ত লক্ষ্যবস্তু ছিল না। প্রতিটি দলের নিজস্ব লক্ষ্য ছিল। পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা করা এবং কমান্ড সেন্টার ও রাডার সিস্টেম ধ্বংস করা। তখনই অপারেশন ‘রাইজিং লায়ন’ শুরু হয়।
এ হামলার আগে ইরানিদের কাছে একটি বার্তা দিয়েছিল ইসরায়েল। বার্তাটিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে , শাসনব্যবস্থার কিছু সদস্য ইসরায়েলকে অনুরোধ করছেন যেন ইরানকে আরেকটি গাজা বা লেবাননে পরিণত না করা হয়।
বার্তায় বলা হয়েছে, ‘আমরা বুঝতে পারি যে, শাসক গোষ্ঠীর আরোপিত শর্তে আপনি একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আছেন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আমরা আমাদের প্রিয়জনদের কাছ থেকে বার্তা পেয়েছি যারা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয়ে ভীত।’
ইরানি ভাষায় দেওয়া বার্তাটিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ইরানে যা ঘটছে তাতে এমনকি শাসকগোষ্ঠীর নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সদস্যরাও ভয়, হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং গাজা ও লেবাননের মতো একই পরিণতি এড়াতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আমাদের অনুরোধ করছে। তবে, আমাদের স্পষ্ট করে বলতে হবে যে, আমরা এই ধরনের অনুরোধের ঠিকানা না এবং আমরা আপনাকে মোসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দিচ্ছি। সম্ভবত আপনি আপনার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য একটি উপায় খুঁজে পাবেন।’
বার্তায় মোসাদের একটি লিংক দেওয়া হয়েছিল, যেখানে একটি সুরক্ষিত এবং এনক্রিপ্ট করা সংযোগ (ভিপিএন) ব্যবহার করার সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল।
আপনার মতামত লিখুন :