সম্প্রতি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে উত্তেজনা বেড়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যেই নিজের উত্তরসূরীর নাম ঘোষণা করেছেন তিনি।
খামেনি নিহত হলে তার উত্তরসূরি হিসেবে তিনজন জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত তিন ইরানি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আজ শনিবার দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে।
কোনো সর্বোচ্চ নেতার মৃত্যু হলে ইরানের সংবিধান অনুসারে ৮৮ সদস্যের বিশেষজ্ঞ পরিষদ (ধর্মীয় সংস্থা) একজন উত্তরসূরি নির্বাচন করবে। ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে এই প্রক্রিয়াটি মাত্র একবার ব্যবহার করা হয়েছে, যখন খামেনি নিজেই ১৯৮৯ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, খামেনি তার মৃত্যুর পর দ্রুত, সুশৃঙ্খলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করতে চান।
সাধারণত, ইরানে নতুন সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়ায কয়েক মাস পর্যন্ত লাগতে পারে। ধর্মীয় নেতারা নিজেরা একটি তালিকা তৈরি করেন এবং সেখান থেকে প্রার্থী বাছাই করেন। তবে এখন যেহেতু দেশ যুদ্ধের মধ্যে আছে, তাই আয়াতুল্লাহ খামেনি চান যেন দ্রুত ও শৃঙ্খলার সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর হয় এবং উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা যায়।
সর্বোচ্চ নেতার উত্তরাধিকার সব সময়ই খুব স্পর্শকাতর ও জটিল বিষয়। এটি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা হয় না, বরং রাজনীতি ও ধর্মীয় মহলে গুজব আর অনুমানই বেশি চলে। এই পদে দায়িত্ব অনেক, অর্থাৎ তিনি ইরানের সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক, বিচার বিভাগ, সংসদ ও সরকারের ওপর কর্তৃত্ব রাখেন। তিনি ‘ওয়ালি ফকিহ’, অর্থাৎ শিয়া ইসলাম অনুযায়ী ধর্মীয় অভিভাবক।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আয়াতুল্লাহ খামেনির ছেলে মোজতবা খামেনি, যিনি নিজেও ধর্মীয় নেতা ও রেভোলিউশনারি গার্ডের ঘনিষ্ঠ, তাকে আগেই সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে তিনি প্রার্থীদের তালিকায় নেই।
ইরানের কট্টরপন্থী প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকেও একসময় সম্ভাব্য প্রধান উত্তরসূরি মনে করা হতো।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে ‘শেষ করে দেওয়ার’ পরিকল্পনা করার অভিযোগ অস্বীকার করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, খামেনি একজন ‘সহজ লক্ষ্য’।
গত মঙ্গলবার ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমরা ভালো করেই জানি তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ নেতা’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তাকে খুঁজে বের করে হত্যা করা কঠিন কিছু নয়। তবে আপাতত সেটা করবো না।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরাসরি হামলার কথা না বললেও ইঙ্গিত দেন যে, খামেনির মৃত্যু সংঘাত আরও বাড়াবে না বরং শেষ করতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র তাদের একটি হাসপাতালে আঘাত হানার পর খামেনিকে ‘আর বেঁচে থাকতে দেওয়া যায় না’।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি যুদ্ধ আরও তীব্র হয়, তাহলে ইরানের শীর্ষ নেতারা বড় ধরনের পরিণতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের হামলায় ইরানের নেতৃত্ব কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখনো তা কার্যকরভাবে চলছে। ট্রাম্পও এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে ভাবছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :