ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন বিমান হামলার ঘটনার পর নতুন কূটনৈতিক ছকে নিজেকে সাজাচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন।
ওয়াশিংটনের ওপর আস্থাহীনতা আরও বাড়ছে। আর সেই শূন্যস্থান পূরণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সামরিক ও কৌশলগত বন্ধন জোরদার করছেন কিম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন মেরুকরণ কোরীয় উপদ্বীপের নিরাপত্তা ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
ইরানে মার্কিন হামলার প্রেক্ষাপটে পিয়ংইয়ংয়ের নীতিনির্ধারকরা আরও নিশ্চিত হয়েছেন যে, পারমাণবিক শক্তি ছাড়া শাসনব্যবস্থার স্থিতি সম্ভব নয়। কিম প্রশাসন এখন আরও স্পষ্টভাবে পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে এবং রাশিয়া-চীন জোটের নিরাপত্তার ছায়া নিচ্ছে।
সিওলের বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়া ও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভেতর মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। যেখানে ইরানের কর্মসূচি জাতীয় মর্যাদা ও প্রতিরোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, উত্তর কোরিয়া এরই মধ্যে একটি কার্যকর পারমাণবিক শক্তি। কিম জং উনের মূল লক্ষ্য— শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা।
এই বাস্তবতায় উত্তর কোরিয়ায় সরাসরি মার্কিন হামলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে মার্কিন ভূখণ্ডে পাল্টা হামলার সক্ষমতা রয়েছে পিয়ংইয়ংয়ের।
সিউলসহ দক্ষিণ কোরিয়ার জনবহুল এলাকাগুলো রয়েছে বিশাল কামানঘাঁটির আওতায়— যা এখনো দক্ষিণ কোরিয়াকে কার্যত জিম্মি করে রেখেছে বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।
সিওল ডিফেন্স ফোরামের গবেষক জোং কিয়ং-উন বলেন, ‘সিউল ও আশপাশের অঞ্চল প্রতিনিয়ত উত্তর কোরিয়ার কামানের নিশানায় রয়েছে। এটাই আজও বড় হামলা ঠেকিয়ে রেখেছে।’
এ ছাড়া উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পাহাড়ি অঞ্চলের গভীরে শক্ত পাথরের নিচে স্থাপিত। KN-23-এর মতো পারমাণবিক সক্ষম স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, ১৭০ মিমি স্বচালিত কামান, ২৪০ মিমি মাল্টিপল রকেট লঞ্চারসহ পিয়ংইয়ংয়ের হাতে রয়েছে layered প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
২০২২ সালে উত্তর কোরিয়া ‘প্রথম আঘাত হানার নীতি’ গ্রহণ করেছে— অর্থাৎ, শুধু আত্মরক্ষার প্রয়োজনে নয়, সম্ভাব্য আগ্রাসনের আভাস পেলেও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে তারা।
রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে কিম জং উনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ার পেছনে বড় কারণ— রাশিয়ার সঙ্গে ২০২৪ সালের জুনে স্বাক্ষরিত ‘ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি’, যার আওতায় পারস্পরিক প্রতিরক্ষা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যদিকে চীনও কোরীয় উপদ্বীপের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হলে নিজেদের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে।
ইহওয়া ওমেন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লেইফ-এরিক ইসলে বলেন, ‘রাশিয়া-চীন এখন উত্তর কোরিয়াকে যে ধরনের কৌশলগত নিরাপত্তা জোগাতে পারছে, সেটি ইরানের ক্ষেত্রে নেই।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতের এই নতুন অধ্যায় পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক নীতিকে আরও কঠোর করে তুলবে।
একই সঙ্গে পুতিন ও জিনপিংয়ের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা ও কৌশলগত ঘনিষ্ঠতাও উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র নীতির নতুন মাত্রা তৈরি করছে। এই জোটবদ্ধতা আগামী দিনে কোরীয় উপদ্বীপের নিরাপত্তা পরিবেশে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দিতে পারে।