শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৫, ০৯:৫৭ পিএম

আরাকান আর্মির সঙ্গে ‘যুদ্ধ করতে’ প্রস্তুত রোহিঙ্গারা!

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৫, ০৯:৫৭ পিএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা রাখাইন রাজ্য নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিজেদের স্বাধীন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে তারা। বিশেষ করে রোহিঙ্গা তরুণদের মধ্যে গত এক-দেড় বছরে এমন মনোভাব তৈরি হয়েছে।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন অনুসারে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে অনেক যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা আর বাংলাদেশে থাকতে চান না, বরং মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে যুদ্ধ করে নিজেদের অঞ্চল স্বাধীন করতে চান।

বিবিসিকে এক রোহিঙ্গা যুবক বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করব। আরাকান আর্মির সঙ্গে। আমরা স্বাধীন (স্বাধীনতা) চাই।’

অন্য আরেক যুবক উখিয়া ক্যাম্প থেকে জানিয়েছেন, ‘আমাদের যুদ্ধ করে নিজ দেশে স্বাধীনতা অর্জন করতে বলতেছে আরকি। সবাই জিহাদ করার জন্য তৈয়ার। এটার জন্য সবাই একতালে আরসা, আরএসও- দুনো দল (দুই দলই) সবাই মিলে ভালো কাজ করতেছে।’

এদিকে, রোহিঙ্গা শিবিরে অন্তত চারটি সংগঠন ‘সশস্ত্র বিদ্রোহ’ বা ‘যুদ্ধের’ জন্য উদ্বুদ্ধ করার তৎপরতায় লিপ্ত আছে। গোষ্ঠীগুলো হলো- আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামিক মাহাজ, আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ)।

এই সংগঠনগুলো সাধারণ রোহিঙ্গা এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে স্বীকার করেছে। তারা নিয়মিত ঘরোয়া বৈঠক ও আলোচনা সভার আয়োজন করে রোহিঙ্গাদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছে এবং আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

কুতুপালং ক্যাম্পের একজন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, বৈঠকে নিজেদের মধ্যে সংঘাত এড়ানো এবং নিজ দেশে ফেরার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘মিটিংয়ের মাঝে বলে যে এটা আমাদের দেশ না। এখানে কোনো ঝগড়া চলবে না। সবাই একমতে থাকবে। কোনো চুরি, ডাকাতি, মানুষ খুন করাকরি অন্য কোনোকিছু এখানে চলবে না।’

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করতে পারে।

এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিজেদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব স্থগিত করে নতুন সদস্য নিয়োগ বাড়িয়েছে এবং ধর্মীয় ভাষা ব্যবহার করে শরণার্থীদের রাখাইনে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।

আইসিজির প্রতিবেদনটির লেখক এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমারবিষয়ক সিনিয়র কনসালট্যান্ট টমাস কেইন বলেন, ‘আমাদের ফিরে গিয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে এবং আমাদের মাতৃভূমি পুনরুদ্ধার করতে হবে’—এই বার্তাটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ও তাদের সমর্থকদের দ্বারা ক্যাম্পে ছড়ানো হচ্ছে।

তিনি এই বার্তাকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করেছেন, কারণ আরাকান আর্মি মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ সফল হবে না। এর ফলে বাংলাদেশ, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, সাধারণ নাগরিক এবং উভয় পক্ষের যোদ্ধাদের ওপর ‘ভয়াবহ প্রভাব’ পড়বে।

আইসিজির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৈঠক এবং সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণও হচ্ছে।

টমাস কেইন বলেন, ‘ক্যাম্পে গোপনে কিছু করা প্রায় অসম্ভব। কিছু শারীরিক প্রস্তুতির মতো প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে হয়েছে- যেখানে অস্ত্র ব্যবহার হয়নি, বরং ব্যায়াম বা ড্রিলের মতো কার্যক্রম হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক শরণার্থী সীমান্ত এলাকার ক্যাম্পের বাইরে প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়েছে। তিনি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী যে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কিছু মাত্রার সশস্ত্র প্রশিক্ষণ চলছে, বিশেষ করে আরসার মতো গোষ্ঠীগুলোর নিজস্ব ক্যাম্প রয়েছে।’

তবে স্থানীয় বাংলাদেশি এবং ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পের ভেতরে কোনো সশস্ত্র প্রশিক্ষণ হয় না।

একজন রোহিঙ্গা বলেন, ‘এটা মায়ানমারে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়, এখানে কোনো প্রশিক্ষণ হয় না। বাংলাদেশে আমি আমার সামনে কোনোদিন দেখিনি।’

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফজুড়ে ৩৩টি ক্যাম্পে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে, এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ তরুণ। স্থানীয় বাংলাদেশিরাও রোহিঙ্গাদের এই তৎপরতা লক্ষ্য করেছেন।

বাংলাদেশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রবিউল হোছাইন জানিয়েছেন, ‘ক্যাম্পের মধ্যে বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠন রয়েছে, আরসা, আরএসও, এরপরে এআরএ, আরও আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের অ্যাকটিভিটির মাধ্যমে জানতে পারছি, তারা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের কথা জানতে পেরেছি। বিশেষ করে কারাতে প্রশিক্ষণের কথা জানতে পেরেছি।’

হোছাইন আরও বলেন, ‘আরসা-আরএসও’র হয়ে বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্নভাবে ৫০ বা ১০০ বা ২০০ জন বাংলাদেশ-মিয়ানমারে সীমান্ত পার হয়ে যুদ্ধ করতে মিয়ানামারে অনুপ্রবেশ করে বলে আমরা জেনেছি।’ 

তিনি মনে করেন, বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ করে তারা তাদের অধিকার ফিরে পাবে না। তাই তারা নিয়মিত সচেতনতামূলক সেশন করে নিজেদের আদি নিবাস আরাকান রাজ্যে ফিরে যাওয়ার জন্য এবং প্রয়োজনে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।

আরাকান আর্মির প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

টমাস কেইন বলছেন, আরাকান আর্মি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তৎপরতা সম্পর্কে অবগত এবং এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।

তার মতে, আরাকান আর্মি মনে করে যে বাংলাদেশ, বিশেষ করে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো, রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে। এটি আরাকান আর্মি ও বাংলাদেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার পথে একটি বড় বাধা।

আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টিকে উদ্বেগজনক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আইসিজির কনসালট্যান্ট টমাস কেইন বলেছেন, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সংঘাতে গেলে সফল হবে না, তবে এর ফলে ব্যাপক ক্ষতি হবে। উত্তর রাখাইন রাজ্যে এখনো এক থেকে দুই লাখ রোহিঙ্গা বেসামরিক মানুষ রয়েছেন, যারা এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মাঝখানে আটকা পড়বেন এবং সম্ভবত তাদের বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে হবে। এর ফলে বাংলাদেশকে আরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় দিতে হতে পারে।

বাংলাদেশের অবস্থান

বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজারের ক্যাম্পে সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্তিত্ব স্বীকার করে না এবং এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, বাংলাদেশ কোনো ধরনের অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা বা সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্তিত্ব স্বীকার করে না।

তিনি বলেন, ‘আরসা আরএসও এগুলোতো বাংলাদেশ সরকারের কোনো সংগঠন না। আর বাংলাদেশের ভূমিতেও এগুলো তৈরি হয়নি। এগুলো মিয়ানমারের অর্গানাইজেশন।’

তিনি বাংলাদেশের কঠোর অবস্থানের প্রমাণ হিসেবে আরসার প্রধান এবং আরএসও-এর রাজনৈতিক প্রধানকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখার কথা উল্লেখ করেন।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির বিরোধ ঐতিহাসিক এবং রাখাইনে যুদ্ধের বাস্তবতায় এটি আরও প্রবল হয়েছে। আরাকান আর্মি যখন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় আক্রমণ শুরু করে, তখন রোহিঙ্গারা সরকারি বাহিনীর পক্ষে অস্ত্র ধারণ করে, এর ফলে তাদের মধ্যে শত্রুতা আরও বাড়ে। এর ফলস্বরূপ, আরাকান আর্মির দখলের সময় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, এর ফলে গত এক-দেড় বছরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে।

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) দুই হাজারের বেশি সদস্য।

এপিবিএন’র ডিআইজি প্রলয় সিসিন বলেছেন, ‘ক্যাম্পে নিরাপত্তার বিষয়টি সমন্বয় করেই কাজ করছে বিভিন্ন বাহিনী। ক্যাম্পের ভেতরে এই ধরনের অ্যাকটিভিটিজ (কর্মকাণ্ড) আমাদের চোখে পড়েনি।’

তিনি দাবি করে বলেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে দেওয়া হবে না। ক্যাম্প থেকে অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চলমান আছে এবং যারা অপরাধী তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে হ্যান্ডমেইড, অটোমেটিক বা এসএমজি টাইপের অস্ত্রও রয়েছে।

Link copied!