বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সিএনএন

প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৫, ০৫:৫৪ পিএম

রাশিয়ায় আরও ৩০ হাজার সেনা পাঠাচ্ছে উত্তর কোরিয়া

সিএনএন

প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৫, ০৫:৫৪ পিএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

ইউক্রেনের সঙ্গে সম্মুখ সারিতে রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধরত সৈন্যের সংখ্যা তিনগুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে উত্তর কোরিয়া। মস্কোকে সহায়তা করতে অতিরিক্ত ২৫ থেকে ৩০ হাজার সৈন্য পাঠাবে পিয়ং ইয়াং।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের করা একটি গোয়েন্দা মূল্যায়ন দেখেছে সিএনএন। বুধবার (২ জুলাই) মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি এক প্রতিবেদনে জানায়, আগামী মাসগুলোতে এই সৈন্যরা রাশিয়ায় আসতে পারে। গত নভেম্বরে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সাহায্যকারী ১১ হাজার সৈন্যের সঙ্গে যোগ দেবেন তারা।

পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে, মোতায়েন করা প্রায় চার হাজার উত্তর কোরিয়ার সৈন্য হতাহত হলেও মস্কোর-পিয়ংইয়ংয়ের সহযোগিতা অটুট রয়েছে।

সিএনএন-এর দেখা ইউক্রেনীয় মূল্যায়নে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ‘রুশ ওয়ার ইউনিটগুলো আরও একীভূত’ করতে ‘প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, অস্ত্র এবং গোলাবারুদ’ সরবরাহ করতে সক্ষম।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা ‘রাশিয়ান সৈন্যদলকে শক্তিশালী করে বৃহৎ আকারে আক্রমণাত্মক অভিযান’ চালানোর ‘দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে’।

রুশ সামরিক বিমানগুলোর মাধ্যমে রাশিয়ান সাইবেরিয়াজুড়ে কয়েক হাজার বিদেশি সেনা স্থানান্তরের উদ্যোগ দেখা গেছে, যা উত্তর কোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে সীমান্ত লাগোয়া।

সিএনএন-এর হাতে আসা স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, রাশিয়ায় নতুন করে উত্তর কোরিয়ার সৈন্য মোতায়েনের প্রস্তুতি চলতে পারে। এতে দেখা যায়, একটি রুশ যুদ্ধজাহাজ ও উত্তর কোরিয়ার একটি কার্গো বিমান গত কিছুদিনে সংশ্লিষ্ট বন্দরে ও বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েছে।

২০২৪ সালের শরতে উত্তর কোরিয়া চুপিচুপি প্রায় ১১ হাজার সৈন্য রাশিয়ায় পাঠিয়েছিল। এই মোতায়েনের বিষয়টি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এপ্রিল মাসে নিশ্চিত করেন।

অক্টোবর মাসে রাশিয়ার প্রিমোরস্কি অঞ্চলের সের্গেভকা সামরিক ঘাঁটিতে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের হাতে সামরিক সরঞ্জাম তুলে দেওয়ার ছবি তোলা হয়েছিল।

এর এক মাস পরে, রাশিয়ার নাখোদকা শহরের কাছে দুনাই বন্দরে একটি রাশিয়ান রোপুচা-শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ নোঙর করে। এ ধরনের জাহাজ ৪০০ জন সৈন্য বহনে সক্ষম। বিশ্লেষকদের মতে, এ জাহাজে উত্তর কোরিয়ার সৈন্য পরিবহন করা হতে পারে।

এরপর ১৮ মে আবারও ঠিক একই ধরনের একটি রোপুচা-শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ ওই দুনাই বন্দরে এসে পৌঁছায়, যা সিএনএনকে সরবরাহ করা স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওপেন সোর্স সেন্টার নামের এক সংস্থা এসব ছবি বিশ্লেষণ করেছে। তারা প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে খোলা উৎসভিত্তিক তথ্য নিয়ে কাজ করে।

উড়ানের ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছে, উত্তর কোরিয়া থেকে আরও সৈন্য পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ওপেন সোর্স সেন্টার ৪ জুন সিএনএন-কে একটি স্যাটেলাইট ছবি সরবরাহ করে, যেখানে দেখা যায় উত্তর কোরিয়ার সুনান বিমানবন্দরে একটি কার্গো বিমান সম্ভবত আইএল-৭৬ রানওয়েতে চলাচল করছে। এই একই ধরনের বিমান গত বছরও সৈন্য পাঠাতে ব্যবহার করা হয়েছিল।

যদিও ছবিতে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না যে, বিমান ও জাহাজগুলো ঠিক কী কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে গতিবিধি দেখে বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বছরের সৈন্য মোতায়েনের মতোই একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে।

ওপেন সোর্স সেন্টারের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জো বাইর্ন বলেন, ‘মে মাসে রাশিয়ার দুনাই বন্দরে সৈন্য পরিবহনের জন্য একটি রুশ জাহাজ এবং মে ও জুনে সুনান বিমানবন্দরে তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। এটি দেখায়, আগের যে রুটগুলো দিয়ে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা রাশিয়ায় গিয়েছিল, সেগুলো এখনো সক্রিয় রয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও সৈন্য পাঠানোর জন্য সেগুলো ব্যবহার করা হতে পারে।’

স্টিমসন সেন্টারের কোরিয়ান প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো ও পরিচালক জেনি টাউন বলেন, ‘ইউক্রেনীয় সৈন্যের মূল্যায়নে ৩০ হাজার বেশি মনে হচ্ছে... তবে তারা অবশ্যই এই সংখ্যাটি নিয়ে আসতে পারে। তারা অভিজাত সৈন্য হবে না। কিম জং উন বলেছেন, তিনি সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত, তাই এটি রাশিয়া কী চেয়েছে তার উপর নির্ভর করে।’

টাউন বলেন, ১০ থেকে ২০ হাজার ‘বাস্তবসম্মত শোনাচ্ছে’ কিন্তু উত্তর কোরিয়া ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে সৈন্য মোতায়েন বাড়াতে পারে। গুঞ্জন রটেছে যে রাশিয়ান জেনারেলরা ইতোমধ্যেই উত্তর কোরিয়ার ভেতরে সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বৃহস্পতিবার বলেছেন, কিয়েভের ধারণা উত্তর কোরিয়ার আরও সৈন্য মোতায়েন করা হতে পারে। তবে দেশটির নেতা কিম জং উন রণক্ষেত্রে এত অভিজাত সৈনিকের গুরুতর হতাহতের কারণে নিজের সরকারকে বিপদে ফেলছেন। 

উমেরভ আরও বলেন, ‘রাশিয়ার অভিজাত উত্তর কোরিয়ার সৈন্য ব্যবহার কেবল সর্বগ্রাসী শাসনের উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতাই নয় বরং এর সংহতকরণ রিজার্ভের সঙ্গে গুরুতর সমস্যাও প্রদর্শন করে। অংশীদারদের সঙ্গে আমরা একত্রে এই হুমকিগুলো পর্যবেক্ষণ করছি, এবং সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাব।’

ইউক্রেনের সামরিক প্রধান ওলেক্সান্ডার সিরস্কি শুক্রবার বলেছেন, জনবহুল শহর পোকরোভস্কের কাছে সম্ভাব্য আক্রমণের প্রস্তুতির জন্য এক লাখ ১০ হাজার সৈন্য জড়ো করছে রাশিয়া।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, পুতিনের একজন শীর্ষ উপদেষ্টা ও পূর্বে তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সের্গেই শোইগু ১৭ জুন পিয়ংইয়ং সফর করেন। পুতিনের নির্দেশে এক সপ্তাহের মধ্যে এটি তার দ্বিতীয় সফর। এ সময় শোইগু ঘোষণা করেন কুরস্ক অঞ্চলে মাইন পরিষ্কার ও ‘দখলদারদের দ্বারা ধ্বংস হওয়া অবকাঠামো পুনরুদ্ধার’ করতে এক হাজার উত্তর কোরীয় স্যাপার (মাইন পরিষ্কারকারী) এবং পাঁচ হাজার সামরিক নির্মাণ কর্মী রাশিয়ায় পাঠানো হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা পরিষেবা (এনআইএস) সিউলের আইন প্রণেতাদের জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া জুলাই বা আগস্টের প্রথম দিকে বিদেশে মোতায়েনের জন্য কর্মী নির্বাচন শুরু করেছে। আইন প্রণেতা লি সিওং-কুয়েন জানায়, তিনি রাশিয়ার আরও ছয় হাজার উত্তর কোরিয়ার স্যাপার ও সামরিক নির্মাণকর্মী পাঠানোর প্রকাশ্য ঘোষণা তুলে ধরেন।

উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ায় মোট কত সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে, তা নিয়ে একাধিক দাবি থাকলেও সংখ্যাটি ৩০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে বলে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দারা ধারণা করছেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএস এই তথ্য ইউক্রেনের সঙ্গে ভাগ করেছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

সিএনএন জানিয়েছে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তারা উত্তর কোরিয়ার একটি আর্টিলারি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল পেয়েছে, যা রুশ ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। এটি দেখায়, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা ও একসঙ্গে কাজ করার সক্ষমতা ক্রমেই বাড়ছে।

এই ম্যানুয়াল প্রকাশের সময়টায় আরও কিছু ইঙ্গিত মিলেছে। অনলাইনে ক্রমেই বেশি করে উত্তর কোরিয়ার কামান বা আর্টিলারি ব্যবহারের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি জাতিসংঘের ১১টি সদস্য রাষ্ট্রের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া ২০২৪ সালে রাশিয়ায় অন্তত ১০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৯০ লাখ কামানের গোলা পাঠিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক সূত্র জানিয়েছে যে এ বছরের শুরুতে রাশিয়ায় আরও তিন হাজার উত্তর কোরিয়ার সেনা পাঠানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্টিমসন সেন্টারের বিশ্লেষক টাউন বলেন, পিয়ংইয়ং রাশিয়ার কাছে এই সহায়তাগুলোকে ভবিষ্যতের জন্য ‘ঋণ’ হিসেবে দেখছে। তার ভাষায়, ‘উত্তর কোরিয়া যত বেশি রক্তপাতের বিনিময়ে রাশিয়াকে সাহায্য করবে, ভবিষ্যতে তত বেশি সুবিধা পাওয়ার আশা করছে, যদি এখন কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।’

Shera Lather
Link copied!