সীমান্তে চলমান সংঘাতের মুখে পাকিস্তান এখন একমাত্র প্রতিপক্ষ নয় বলে জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক থাকা চীন এবং তুরস্কও ভারতের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, ধারণা দেশটির।
সম্প্রতি ‘অপারেশন সিঁন্দুর’-এ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক প্রতিক্রিয়া চালানোর সময় এই বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর উপ-সেনাপ্রধান (ক্ষমতা উন্নয়ন ও ভরণপোষণ) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁন্দুর’ অভিযান চালায়। এই অভিযানে ভারত পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত নয়টি ঘাঁটি লক্ষ করে আঘাত হানে ভারত।
অভিযান প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিং বলেন, ‘অপারেশন সিঁন্দুর’ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিক্ষা আমরা পেয়েছি। এই অভিযানের পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ প্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। অভিযানে ২১টি লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা হয়, এর মধ্যে নয়টি আক্রমণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। শেষ মুহূর্তে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আর আগের মতো আমাদের শ্রদ্ধাশীল হওয়ার ক্ষমতা নেই। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত। তবে শুধু পাকিস্তানই নয়, চীন ও তুরস্কও এই সংঘাতে পরোক্ষভাবে যুক্ত।’
লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিং বলেন, ‘পাকিস্তানের ৮১ শতাংশ সামরিক সরঞ্জাম চীনের তৈরি। ফলে চীন পাকিস্তানকে একটি ‘লাইভ ল্যাব’ হিসেবে ব্যবহার করছে, যেখানে তারা তাদের উন্নত সামরিক প্রযুক্তি বাস্তব পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চীন শুধুই অস্ত্র সরবরাহ করছে না, তারা নজরদারি এবং রিয়েল-টাইম গোয়েন্দা সহায়তাও দিচ্ছে পাকিস্তানকে, এর ফলে তারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আপডেটগুলো পাচ্ছিল চীনের দ্বারা।’
এদিকে, তুরস্কও পাকিস্তানকে প্রযুক্তি ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছে বলে ভারতীয় সেনা সূত্র জানিয়েছে। যখন দুই দেশের মধ্যে ডিজিএমও পর্যায়ের আলোচনা চলছিল, তখনও পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ সামরিক তথ্য পাচ্ছিল চীনের মাধ্যমে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অনুসারে, ২০১৫ সাল থেকে চীন পাকিস্তানে ৮.২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করেছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে চীন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক হিসেবে উঠে আসে, যার ৬৩ শতাংশই গেছে পাকিস্তানে। এর ফলে পাকিস্তান চীনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র গ্রাহকে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর বড় একটি অংশ গঠিত হয়েছে চীন-সহায়তায় তৈরি যুদ্ধবিমান দিয়ে। এতে জেএফ-১৭ থান্ডার এবং জে-১০সি মাল্টিরোল জেটের আধিক্য রয়েছে। শিগগিরই তারা আরও ৪০টি শেনইয়াং জে-৩৫ পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ ফাইটার সংগ্রহ করতে যাচ্ছে, যা গোপন যুদ্ধ ক্ষমতা সম্পন্ন।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা চলিত বছরে এক প্রতিবেদনে জানায়, ভারত চীনকে তার ‘প্রধান প্রতিপক্ষ’ হিসেবে বিবেচনা করে, যেখানে পাকিস্তানকে ‘পরিচালনাযোগ্য নিরাপত্তা সমস্যা’ হিসেবে দেখা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :