বিশ্বের সামরিক প্রযুক্তির গতিপথ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় এসেছে নতুন মাত্রা। এরই মধ্যে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে-২০এস নিজেদের বহরে যুক্ত করেছে চীন। যা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে।
চীনের সামরিক গবেষণা সংস্থা চেংদু অ্যারোস্পেস কর্পোরেশন প্রথমে জে-২০ যুদ্ধবিমান তৈরি করেছিল ২০১১ সালে, যার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে যোগ হয় ২০১৭ সালে। এরপর সেই ফ্রেমওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করেই চীন তৈরি করে জে-২০এস, যার প্রথম পরীক্ষামূলক উড়তে দেখা যায় ২০২১ সালের অক্টোবরে।
যেখানে অন্যান্য দেশের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানগুলো একক পাইলটের জন্য নকশা করা, সেখানে জে-২০এস একটি বৈপ্লবিক চিন্তার ফসল। এতে আছে দুটি আসন, যা ভবিষ্যতের যুদ্ধ কৌশলে একটি বড় পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে।
স্টেলথের ছায়ায় আধুনিক যুদ্ধ
জে-২০এস তৈরি করা হয়েছে সম্পূর্ণ স্টেলথ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে রাডারে ধরা পড়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম থাকে। ফলে, এটি শত্রুপক্ষের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশে বাড়তি সুবিধা দেয়।
তবে, দ্বৈত আসন যুক্ত হওয়ার পর শুধু স্টেলথ নয়—নতুন যুদ্ধব্যবস্থার বুদ্ধিমত্তা ও সামরিক এআই ব্যবস্থাকেও এর সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
দ্বৈত আসন: শুধু প্রশিক্ষণ নয়, কৌশলগত চমক
অনেকেই ভাবতে পারেন, দ্বিতীয় আসনটি কেবল প্রশিক্ষণের জন্য। কিন্তু বাস্তবে এর পেছনে আছে অনেক গভীর কৌশল। পেছনের আসনে ড্রোন নিয়ন্ত্রণ, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারে শত্রুর রাডার জ্যামিং, কমান্ড ও কন্ট্রোল পরিচালনার জন্য একজন পাইলট বা ওয়েপন্স সিস্টেম অফিসার থাকতে পারেন।
এটি ভবিষ্যতের মানুষ-মানুষবিহীন দলবদ্ধকরণ ধারণার প্রতিফলন, যেখানে যুদ্ধবিমান এবং ড্রোন একসঙ্গে লড়াই করবে।
কৌশলগত প্রতিপক্ষ: কারা সামনে?
বিশ্বে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-২২ রেপ্টর ও এফ-৩৫ লাইটিং ২ কে স্টেলথ শ্রেণির সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান ধরা হয়। তবে চীন যেভাবে দ্রুত উন্নত প্রযুক্তির জে-২০এস উন্মোচন করেছে, তাতে এই প্রতিযোগিতা আরও জটিল ও ভয়ংকর হতে চলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জে-২০এস শুধু একটি ফাইটার নয়। এটি চীনের আকাশ সীমার পেরিয়ে বিস্তৃত যুদ্ধ নেটওয়ার্ক গঠনের একটি স্তম্ভ।
বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব
চীনের এই নতুন সামরিক উন্নয়নকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে, দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান এবং ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনার সময় এই যুদ্ধবিমানকে ঘিরে বাড়ছে কৌশলগত টানাপোড়েন। এই বিমান কেবল প্রতিরক্ষা নয়, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :