পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছরের শুরুতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগেই লক্ষাধিক হিন্দু সম্মেলন করবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)। ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠায় হিন্দু জাতীয়তাবাদ জাগ্রত করাই হবে এই সম্মেলনের লক্ষ্য বলে আরএসএস জানায়।
তবে উদ্যোগটি শুধুমাত্র ধর্মীয় আন্দোলন নয়, বরং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে হিন্দু ভোটের সমীকরণকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারতীয় সংবাদ ম্যাগাজিন দ্য উইক সোমবার (৭ জুলাই) জানিয়েছে, আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর আরএসএসের শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতজুড়ে গ্রামীণ অঞ্চলে মণ্ডল স্তরে ও শহরাঞ্চলে বস্তি স্তরে হিন্দু সম্মেলন অনুষ্ঠিত করবে। এ নিয়ে গত ৪ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত দিল্লিতে বৈঠক করে আরএসএস।
বর্তমানে ভারতের ৯২৪টি জেলায় ৫৮ হাজার ৯৬৪টি মণ্ডল ও ৪৪ হাজার ৫৫টি বস্তিতে আরএসএসের শাখা রয়েছে। এসব মণ্ডল ও বস্তির হিন্দু সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করা, ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠায় হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং হিন্দু সমাজের ভবিষ্যতের মতো বিষয়গুলোর উপর আলোচনা সভা আয়োজন করবে। পাশাপাশি শিক্ষাগত ও নাগরিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এর সঙ্গে জড়িত থাকবে।
শতবর্ষে এক ঢিলে দুই পাখি মারতেও চাইছে গেরুয়া শিবির। একদিকে যেমন ধুমধাম করে সংগঠনের সাফল্য উদযাপন করা হবে, পাশাপাশি গত কয়েক বছরে বিজেপির ভোটব্যাংকের জখম মেরামত করা হবে।
আরএসএস মনে করে, বিজেপির হিন্দু ভোটব্যাংক ভাষাভিত্তিক, রাজ্যভিত্তিক ও জাতভিত্তিক বিভাজন ঘটাতে তৎপর হয়েছে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা। অনেকাংশে তারা সফলও হয়েছে। গত লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে হিন্দুদের একটি বড় অংশ বিজেপির বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। সেই ছবি বদলাতে সামগ্রিকভাবে হিন্দু সমাজকে এক ছাতার নিচে আনতে হিন্দু সম্মেলনের সিদ্ধান্ত।
এছাড়াও হিন্দির আগ্রাসন তথা ভাষা বিতর্কের হাওয়া বদলাতেও তৎপর সংঘ। দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে ভাষা সংক্রান্ত বিতর্কে প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষাকে রাষ্ট্রীর ভাষা হিসেবে ব্যাখ্যা করে প্রাথমিক স্তরে আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার উপরে জোর দিচ্ছে তারা। এই বিষয়ে আরএসএসের মুখপাত্র সুনীল আম্বেকর বলেন, ‘সংঘ মনে করে ভারতের প্রতিটি ভাষাই হলো জাতীয় ভাষা’।
আঞ্চলিক প্রচার সংগঠকদের তিন দিনের বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি জাতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, রাজ্য ইউনিটগুলো মণিপুর এবং দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের পরিস্থিতিসহ আপডেটগুলো উপস্থাপন করেছে। দেশজুড়ে সংঘ মোট ১০০টি প্রশিক্ষণ শিবির চালিয়েছে। এর মধ্যে ৪০ বছরের কম বয়সি স্বয়ংসেবকদের জন্য ৭৫টি এবং ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের জন্য ২৫টি শিবির আয়োজন করা হয়।
আরএসএসের মুখপাত্র আরও বলেন, এই শিবিরগুলোতে মোট ২১ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের মধ্যে দুর্যোগের সময় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার বিশেষ প্রশিক্ষণও ছিল, যা ‘সেবা বিভাগ’র আওতায় পড়ে।
এ ছাড়া ‘সংঘ শিক্ষা ভার্গ’ নামে একটি আলাদা প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতেও বহু স্বয়ংসেবক অংশ নিয়েছেন। এর প্রথম ধাপে অংশ নেন ১৭ হাজারের বেশি ও দ্বিতীয় ধাপে আট হাজার ৮০০ জনের বেশি স্বয়ংসেবক অংশ নেন। দ্বিতীয় ধাপের প্রশিক্ষণ নাগপুরে অনুষ্ঠিত হয় বলেও জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :