সিন্ধু পানি চুক্তিকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে চীন ইসলামাবাদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলা ঘটনায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারত ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি চুক্তি কার্যত স্থগিত করে। এই চুক্তির আওতায় ভারত থেকে উৎপন্ন তিনটি নদীর পানি ব্যবহারের নিশ্চয়তা পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছিল, যার ওপর দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিজমি নির্ভরশীল।
চুক্তি স্থগিতের পর পাকিস্তান কূটনৈতিক ও কৌশলগত সহায়তার জন্য চীনের দিকে ঝুঁকেছে। এরই মধ্যে ইসলামাবাদ ও বেইজিং একটি বৃহৎ বাঁধ প্রকল্পের নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত করেছে, যা পাকিস্তানের কিছু অঞ্চলে জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়ক হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, চীনের এই জড়িয়ে পড়া উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের। বেইজিং দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার এবং ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা চালিয়ে আসছে। নয়াদিল্লির আশঙ্কা, চীন তার ভূখণ্ড থেকে ভারতে প্রবাহিত নদীগুলির উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে, যা এক নতুন পানি-সংকটের জন্ম দিতে পারে। ফলে সিন্ধু পানি চুক্তিতে চীনের সরাসরি বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
চীন নিজেকে এখন সিন্ধু পানি চুক্তির একটি অনানুষ্ঠানিক অংশীদার বলে মনে করছে। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের ভূমিকা ‘আক্রমণাত্মক’ হিসেবে বর্ণনা করে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিপদের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তারা আরও উল্লেখ করেছে, সিন্ধু নদীর উৎস চীনের পশ্চিম তিব্বত অঞ্চল, যা এক ধরনের কৌশলগত বার্তা হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেইজিং ঘোষণা করেছে, তারা পাকিস্তানে সিন্ধুর একটি উপনদীতে মোহমান্দ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করবে।
উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন নিয়ে যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, তা এতদিন দুই দেশের মধ্যে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার ভিত্তি হিসেবে টিকে ছিল। কিন্তু পেহেলগামের হামলার পর ভারত পাকিস্তানকে দোষারোপ করে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্তব্য করেন, ‘পানি ও রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না।’
পাকিস্তান অবশ্য হামলার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে। এর মধ্যেই দেশটিতে তীব্র পানিসংকট দেখা দিয়েছে। মংলা জলাধারে ৫৯ লক্ষ একর-ফুট ধারণক্ষমতার বিপরীতে বর্তমানে পানি রয়েছে মাত্র ২৭ লাখ একর-ফুট। তারবেলা জলাধারের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক—সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার তুলনায় সেখানে বর্তমানে পানি রয়েছে অর্ধেকের কিছু বেশি। যদিও আসন্ন বর্ষা কিছুটা স্বস্তি আনতে পারে, তবুও বিশ্লেষকদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও দ্রুত ব্যবস্থাপনা না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :