রোববার সিডনির বিখ্যাত হারবার ব্রিজজুড়ে হাজার হাজার মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশ নেন, যার মধ্যে ছিলেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, সাথে ছিল তার পরিবারের সদস্যরাও। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ সম্প্রতি ব্রিটেনের একটি উচ্চ নিরাপত্তার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসেন। সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পাশাপাশি নিউ সাউথ ওয়েলসের সাবেক প্রিমিয়ার ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বব কারও মিছিলে অংশ নেন। জনতার স্রোতে এক পর্যায়ে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় সিডনির আইকনিক ব্রিজটি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও প্রতিবাদকারীরা জড়ো হন সিডনির হারবার ব্রিজে এবং ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে আওয়াজ তোলেন। বহু পরিবার শিশুদের নিয়েও মিছিলে অংশ নেয়। শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, গাজার শিশুরা তাদের নিজেদের সন্তানের মতোই এবং অস্ট্রেলিয়া আরও মানবিক সহায়তা দিতে পারে।
আলেক বেভিল নামের এক বাবা বলেন, ‘ঘটনাস্থল যতই দূরে হোক, আমাদের ওপর এর প্রভাব রয়েছে।’ তার কোলে থাকা তিন বছর বয়সি ছেলে ফ্র্যাঙ্কির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমরা আরও অনেক সাহায্য করতে পারতাম।’
অন্যদিকে, জারা উইলিয়ামস নামের এক মা বলেন, “আমাদের সরকার এখনো ‘ইসরায়েল’র বিরুদ্ধে কোনো উল্লেখযোগ্য নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। পুরো একটি জনগোষ্ঠীকে অনাহারে রাখার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার চুপ থাকা উচিত নয়।”
এদিকে, দুই ঘণ্টা মিছিল চলার পর নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানায়, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে মিছিল বন্ধ করতে হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’ পুলিশ উপস্থিত সবাইকে শহরের দিকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানায়। এছাড়া নিরাপত্তা বাহিনী সেতুর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করছিল।
সিডনিভিত্তিক প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপ গত সপ্তাহে এই মিছিলের জন্য অনুমতির আবেদন করে। পুলিশ প্রথমে অনুমতি না দিলেও নিউ সাউথ ওয়েলস সুপ্রিম কোর্ট সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করেন। বিচারপতি বেলিন্ডা রিগ বলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ যৌক্তিক হলেও, মিছিলের জন্য যেটুকু তৎপরতা ও মানবিক আবেদন দেখানো হয়েছে, তা উপেক্ষা করা যায় না।’ পরে আদালতের নির্দেশে সেতু ও আশপাশের সড়কগুলো যান চলাচলের জন্য বন্ধ রাখা হয়।
এদিকে, নিউ সাউথ ওয়েলস জিউয়িশ বোর্ড অব ডেপুটিজ এক বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে ‘হতাশা’ প্রকাশ করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার ওপর বর্তমানে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ফ্রান্স, কানাডা এবং যুক্তরাজ্য ঘোষণা দিয়েছে যে তারা আগামী সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে স্বীকৃতি বিবেচনা করবে।
প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ সংবাদমাধ্যম এবিসির এক অনুষ্ঠানে বলেন, “‘ইসরায়েল’র স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নেব না।” তিনি আরও বলেন, ‘অন্য দেশের চাপে পড়ে আমরা এই সিদ্ধান্তে যাব না।’
আপনার মতামত লিখুন :