ভারত যদি পাকিস্তানে হামলার দুঃসাহস দেখায়, তবে ভারতের ‘একদম গভীরে’ হামলার মধ্য দিয়ে এর জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকির প্রতিক্রিয়ায় এ কথা জানায় ইসলামাবাদ।
যুক্তরাজ্যের সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এ হঁশিয়ারি দেন। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে’ এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন করা হয়।
সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে যেভাবে উসকানিমূলক বক্তব্য ও অভিযোগ আনা হচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই হুঁশিয়ারি এল। পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এটিকে সবচেয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘ভারতের আরও গভীরে হামলা করতে পারে পাকিস্তান। তাদের (ভারতের) বোঝা উচিত, পাকিস্তান তাদের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম।’
গত এপ্রিলে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় অন্তত ২৬ নিহত হন। ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। তবে পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এর জেরে মে মাসের শুরুতে পাকিস্তানে হামলা করে বসে ভারত। এরপর দুই দেশ চার দিনব্যাপী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।
প্রথমে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বেসামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এ অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাকিস্তানও জবাবে পাল্টা হামলা চালায় ভারতে। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন বুনইয়ান–উন–মারসুস’।
অভিযানে ভারতের একাধিক অঞ্চলে বিভিন্ন সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। ৮৭ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই সংঘাত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শেষ হয়।
এই অভিযানের সাফল্যকে ‘ঐতিহাসিক সামরিক বিজয়’ হিসেবে অভিহিত করেছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ফেডারেল মন্ত্রিসভার বৈঠকে অভিযানের প্রশংসা করা হয়। এই বিজয়ের পর সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। দেশ-বিদেশে তাঁর মর্যাদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
অভিযানে সাফল্যের পর ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির রাজনীতিতে যোগ দিতে পারেন, এমন কথা চাউর হয়। তবে আইএসপিআরের মহাপরিচালক সেনাপ্রধানের এমন কোনো অভিপ্রায় থাকার কথা নাকচ করে দেন।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আইএসপিআর মহাপরিচালকের বক্তব্যে ‘ভারতের পূর্বাঞ্চল’বলতে স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে ভারতের নিজস্ব অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুগুলোকে। যার মধ্যে কলকাতা, জামশেদপুর, রাঁচি, বোকারো, রাউরকেলা, ভুবনেশ্বর ও পাটনার মতো শহর রয়েছে। একজন বিশ্লেষক বলেন, ‘এসব স্থানে হামলার অর্থ ভারতের ভূখণ্ডে গভীর অনুপ্রবেশ—শুধু সীমান্তে গোলাগুলি নয়।’
আপনার মতামত লিখুন :