কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ভোট চুরির অভিযোগ করার পর এবার পাল্টা আক্রমণে নেমেছে বিজেপি। তাদের নিশানায় রয়েছেন কংগ্রেসের সাবেক সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। বিজেপির অভিযোগ, সোনিয়া গান্ধী ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার আগেই বেআইনিভাবে ভোটার তালিকায় নিজের নাম তুলেছিলেন। এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও তার গোপন আঁতাত ছিল।
বুধবার (১৩ আগস্ট) এক্স হ্যান্ডেলে বিজেপি নেতা অমিত মালব্য এ নিয়ে পোস্ট দেন এবং একটি ছবি শেয়ার করেন।
পোস্টে তিনি দাবি করেন, ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার তিন বছর আগে ১৯৮০ সালে সোনিয়া গান্ধীর নাম প্রথমবার ভোটার তালিকায় ওঠে, তখনও তিনি ইতালির নাগরিক ছিলেন। সে সময় গান্ধী পরিবার থাকতেন সফদরজং রোডে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সরকারি বাসভবন ১-এ।
ওই ঠিকানায় নিবন্ধিত ভোটার ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, সঞ্জয় গান্ধী ও মানেকা গান্ধী। ১৯৮০ সালের ভোটার তালিকার সংশোধনে, ১ জানুয়ারি ১৯৮০ তারিখকে যোগ্যতার তারিখ ধরে সোনিয়া গান্ধীর নাম ভোটকেন্দ্র ১৪৫-এর ৩৮৮ নম্বরে যুক্ত হয়।
মালব্য বলেন, এটি আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন, কারণ ভোটার হতে হলে ভারতীয় নাগরিকত্ব থাকা বাধ্যতামূলক। ১৯৮২ সালে তীব্র প্রতিবাদের পর তার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলেও ১৯৮৩ সালের নতুন সংশোধনে আবারও (ভোটকেন্দ্র ১৪০-এর ২৩৬ নম্বরে) নাম যুক্ত হয়, যেখানে যোগ্যতার তারিখ ছিল ১ জানুয়ারি ১৯৮৩। অথচ সোনিয়া গান্ধী ভারতীয় নাগরিকত্ব পান ৩০ এপ্রিল ১৯৮৩।
অর্থাৎ, নাগরিকত্বের শর্ত পূরণ না করেই দুইবার ভোটার তালিকায় নাম ওঠে। প্রথমবার ১৯৮০ সালে ইতালির নাগরিক হিসেবে এবং দ্বিতীয়বার ১৯৮৩ সালে নাগরিক হওয়ার কয়েক মাস আগে।
পোস্টের শেষে মালব্য প্রশ্ন তোলেন, রাজীব গান্ধীর সঙ্গে বিয়ের পর নাগরিকত্ব পেতে তার ১৫ বছর সময় কেন লেগেছিল?
সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও দাবি করেছেন, ১৯৪৬ সালে ইতালিতে জন্ম নেওয়া সোনিয়া মাইনো (বর্তমান সোনিয়া গান্ধী) ১৯৮০-১৯৮২ সালের মধ্যে ভারতীয় নাগরিক হওয়ার এক বছর আগেই ভোটার তালিকায় নাম তুলেছিলেন।
অন্যদিকে, ৭ আগস্ট রাহুল গান্ধী ইন্দিরা ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে লোকসভা ভোটে কারচুপির গুরুতর অভিযোগ তোলেন। দলীয় তদন্তে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ডিজিটাল ভোটার তালিকা দিতে অস্বীকার করেছে, বিধি বদলে ৪৫ দিনের মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে ফেলা হচ্ছে, যাতে প্রমাণ গোপন করা যায়।
রাহুলের দেওয়া কিছু উদাহরণের মধ্যে রয়েছে— গুরুপ্রীত সিং ডাং: কর্ণাটকের মহাদেবপুরায় ৪ জায়গায় নাম। আদিত্য শ্রীবাস্তব: কর্ণাটকে ২ জায়গায়, মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশে নাম। বিশাল সিং: উত্তরপ্রদেশ ও কর্ণাটকে নাম। অনেকের ভোটার তালিকায় ঠিকানার জায়গায় ‘০’ বা ‘#’।
মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ৪০ হাজার ভুয়া ঠিকানার ভোটার পাওয়া গেছে। উদাহরণস্বরূপ বাড়ি নং ৩৫-এ ভোটার ৮০ জন, এক কামরার বাড়িতে এত ভোটার সম্ভব নয়। বাড়ি নং ৭৯১-এ ৪৬ ভোটার, বাণিজ্যিক ঠিকানায় ৬৮ ভোটার। কংগ্রেসের তদন্তকারীরা ওই ঠিকানাগুলোতে গিয়ে অনেক ভোটারের অস্তিত্ব পাননি।
আরও একটি উদাহরণ ৭০ বছরের শকুন রানি দুই মাসের ব্যবধানে দুবার ফর্ম-৬ পূরণ করেছেন, ফলে দুটি জায়গায় তার নাম এসেছে। কংগ্রেসের দাবি, ফর্ম-৬ কেবল নতুন ভোটারের জন্য, অথচ এভাবেই হাজার হাজার ভুয়া ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন