‘ইসরায়েল’-এর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানিদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন এবং দেশটির পানি সংকট সমাধানে ‘ইসরায়েলি’ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তার এই আহ্বানকে ‘উসকানি’ হিসেবে দেখছেন ইসলামিক প্রজাতন্ত্র সরকার।
মঙ্গলবারের (১২ আগস্ট) এক ভিডিও বার্তায় তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের স্বীকারোক্তি উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ইরানিরা তাদের সন্তানদের বিশুদ্ধ পানি পর্যন্ত দিতে পারছে না।
নেতানিয়াহু প্রতিশ্রুতি দেন, ইরানের জনগণ ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করলে এবং দেশটি ‘মুক্ত’ হলে, ‘ইসরায়েলি’ পানি বিশেষজ্ঞরা প্রতিটি শহরে লবণাক্তকরণ ও পুনর্ব্যবহার প্রযুক্তি নিয়ে যাবে।
এই বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে ‘ইসরায়েল’কে ইরানি জনগণের ‘প্রকৃত বন্ধু’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে আসন্ন ‘ইসরায়েলি’ হামলার সতর্কবার্তা হিসেবে দেখেছেন।
এমনকি কেউ কেউ ‘ইসরায়েল’-এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্রের নেতাদের সরাসরি টার্গেট করার জন্য। তবে অনেকেই মনে করেছেন, এই আহ্বান বাস্তবে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তেহরানের কিছু ব্যবহারকারী লিখেছেন, জনগণ আর রাস্তায় নামার আশা বা সাহস রাখে না।
অন্যদিকে অনেকেই সরাসরি নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছেন। আইনজীবী রেজা নাসরি অভিযোগ করেছেন, ‘ইসরায়েলি’রা যে পানি পান করছে তা আসলে ফিলিস্তিনিদের থেকে বঞ্চিত পানি, কোনো প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়।
টানা ১২ দিনের সংঘাতে ‘ইসরায়েল’-এর ইরানি পানি অবকাঠামোতে হামলার অভিযোগও টেনে এনেছেন কেউ কেউ। কর্মী আমির ইব্রাহিমি লিখেছেন, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যেমন বিনামূল্যে পানি ও বিদ্যুতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেষ পর্যন্ত মানুষ হত্যা করেছিলেন, তেমনি নেতানিয়াহুও পানি দেওয়ার কথা বলছেন অথচ বাস্তবে তার প্রতিশ্রুতি মানেই বোমা হামলা।
ইরানের সরকারি মহলও নেতানিয়াহুর বার্তা উড়িয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান মাসউদ, নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী লারিজানি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সবাই এটিকে গুরুত্বহীন বলে মন্তব্য করেছেন।
রাষ্ট্রীয় টিভিতে প্রচারিত এক প্রতিবেদনে নেতানিয়াহুর প্রতিশ্রুতিকে বিদ্রূপ করে দেখানো হয়েছে যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র পতনের পর ইরানিরা আবারও শুকিয়ে যাওয়া কারাজ বাঁধে জলে স্কি করতে পারবে।
তবে সমালোচনা এসেছে বিরোধীপন্থী কর্মীদের কাছ থেকেও, যারা মনে করেন নেতানিয়াহুর বক্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট।
পরিবেশকর্মী রেজা কারিমি সামাজিক মাধ্যমে দক্ষিণ ইরানের দুটি লবণাক্তকরণ প্ল্যান্টের ছবি দিয়ে লিখেছেন, পানি সংকট কোনো প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়। ইরান নিজেই লবণাক্তকরণ প্রযুক্তি তৈরি করে থাকে। মূল সমস্যা হলো দুর্বল পানি ব্যবস্থাপনা।
সূত্র: ইরান ইন্টারন্যাশনাল
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন