শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ০৬:৪০ পিএম

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় ৫১ বছরে প্রায় ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু: গবেষণা

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ০৬:৪০ পিএম

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে দাবি করছেন গবেষকরা। ছবি- সংগৃহীত

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে দাবি করছেন গবেষকরা। ছবি- সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ দীর্ঘদিন ধরে একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে সাম্রাজ্যবাদী ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এর মাধ্যমে গ্লোবাল সাউথের যেসব দেশ পশ্চিমা প্রভাব থেকে বেরিয়ে স্বাধীন পথে হাঁটতে চায়, তাদের সরকারকে শাস্তি দেওয়া বা উৎখাত করার প্রচেষ্টা চালানো হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, ১৯৭০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু জড়িত।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭০-এর দশকে গড়ে প্রায় ১৫টি দেশ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। এসব নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়া, শিল্প খাত অস্থিতিশীল করা এবং সংকট তৈরি করে রাষ্ট্র ভেঙে ফেলা।

চিলির উদাহরণটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ১৯৭০ সালে জনপ্রিয় সমাজতান্ত্রিক নেতা সালভাদর আলেন্দে নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বলেন, উদ্দেশ্য হলো চিলির অর্থনীতিকে আর্তনাদে রূপান্তর করা। ইতিহাসবিদ ও বিশ্লেষক পিটার কর্নব্লুহ এই নিষেধাজ্ঞাকে আখ্যা দেন ‘অদৃশ্য অবরোধ’ হিসেবে, যা চিলিকে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন থেকে বিচ্ছিন্ন করে, সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করে এবং শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত অভ্যুত্থানের পথ প্রশস্ত করে, যেখানে ক্ষমতায় আসে অগুস্তো পিনোশের নেতৃত্বাধীন সামরিক স্বৈরশাসন।

এরপর থেকে একতরফা নিষেধাজ্ঞার ব্যবহার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে গড়ে প্রায় ৩০টি দেশ নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। আর এখন, ২০২০-এর দশকে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০টিরও বেশি—যা গ্লোবাল সাউথের বিশাল অংশকে জড়িয়ে ফেলেছে।

নিষেধাজ্ঞার মানবিক মাশুল ভয়াবহ। ১৯৯০-এর দশকে ইরাকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে দেখা দেয় ব্যাপক অপুষ্টি, খাবার পানির সংকট, ওষুধ ও বিদ্যুতের ঘাটতি। সাম্প্রতিক সময়ে ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধ চরম অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এক বছরেই নিষেধাজ্ঞার কারণে অতিরিক্ত ৪০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।

এতদিন পর্যন্ত গবেষকরা কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞার মানবিক প্রভাব খতিয়ে দেখেছেন। তবে চলতি বছর দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক চিত্র সামনে এসেছে। ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারের অর্থনীতিবিদ ফ্রান্সিসকো রদ্রিগেজের নেতৃত্বে গবেষণায় ১৯৭০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একতরফা নিষেধাজ্ঞার কারণে অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যা নিরূপণ করা হয়েছে।

ফলাফল রীতিমতো ভয়াবহ। গবেষকরা জানিয়েছেন, ১৯৭০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু জড়িত। ১৯৯০-এর দশকের কিছু বছরে এ সংখ্যা মিলিয়নের ঘর ছাড়ায়। কেবল ২০২১ সালেই নিষেধাজ্ঞার কারণে মারা গেছেন ৮ লাখেরও বেশি মানুষ।

গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর নিষেধাজ্ঞার কারণে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহতদের (গড়ে প্রায় ১ লাখ) চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের অর্ধেকের বেশি শিশু ও বৃদ্ধ, যারা অপুষ্টি ও বিভিন্ন রোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। ২০১২ সালের পর থেকে নিষেধাজ্ঞায় শুধু শিশু মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখের বেশি।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যই হলো ক্ষুধা ও বঞ্চনা তৈরি করা—এটি দুর্ঘটনাজনিত পরিণতি নয়। এর প্রমাণ মেলে ১৯৬০ সালের এপ্রিলের মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক নথিতে। সেখানে কিউবার বিপ্লব ও ফিদেল কাস্ত্রোর জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, কিউবার অর্থনীতি দুর্বল করতে ‘অর্থ ও সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া’, ‘মজুরি কমানো’ এবং ‘ক্ষুধা, হতাশা ও সরকারের পতন ঘটানো’ জরুরি।

বিশ্ব অর্থনীতিতে পশ্চিমা প্রভাব টিকে আছে তাদের রিজার্ভ মুদ্রার (ডলার ও ইউরো) নিয়ন্ত্রণ, আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির (স্যাটেলাইট, সফটওয়্যার, ক্লাউড কম্পিউটিং) একচেটিয়া ক্ষমতার কারণে। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো যদি বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে স্বাধীন উন্নয়ন চায়, তবে এসব নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার পদক্ষেপ নিতে হবে। রাশিয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, বিকল্প পথ তৈরি করা সম্ভব।

ইতোমধ্যে চীন বিকল্প প্রক্রিয়া গড়ে তুলেছে, যেমন আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য ক্রস বর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম, স্যাটেলাইটের জন্য বাইদু এবং টেলিকমে হুয়াওয়ে, যা গ্লোবাল সাউথের অন্য দেশগুলোর জন্যও পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসার পথ তৈরি করছে।

গবেষকরা বলছেন, সার্বভৌম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ শুধু রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিকভাবে জরুরি নয়, বরং একটি নৈতিক কর্তব্যও। বছরে অর্ধমিলিয়নের বেশি মানুষকে হত্যা করে পশ্চিমা আধিপত্য টিকিয়ে রাখা মানবতার জন্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

Link copied!