আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ। তবে উদ্ধার তৎপরতায় পুরুষ ও শিশুদের সহযোগিতা করা হলেও নারীদের পাশে পুরুষ উদ্ধারকর্মীরা দাঁড়াচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। তালেবানের কঠোর আইন অনুযায়ী, জরুরি পরিস্থিতিতেও কোনো পুরুষ অপরিচিত নারীর শরীরে হাত দিতে পারেন না।
সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে টাইমস নাও এ খবর জানিয়েছে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কুনার প্রদেশের বিবি আয়েশাদের গ্রামে প্রথম উদ্ধারকারী দল পৌঁছায় ৩৬ ঘণ্টা পর। ১৯ বছরের আয়েশা জানান, রক্তাক্ত অবস্থায় থাকা বহু নারী ও কিশোরীকে এক কোণে ফেলে রাখা হয়, অথচ আহত পুরুষ ও শিশুদের তৎক্ষণাৎ সাহায্য দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের এক কোণে জড়ো করে রাখ হয়েছিল। কেউ জানতে চায়নি আমরা কী চাই, কেউ কাছে আসেনি।’
মাজার দারা এলাকায় যাওয়া এক স্বেচ্ছাসেবক তাহজিবুল্লাহ মুহাজিব জানান, পুরুষরা নারীদের ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে বের করতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। কোনো পুরুষ অভিভাবক কাছে না থাকলে মৃত নারীদের কাপড় ধরে টেনে বের করা হতো, যেন ত্বকে স্পর্শ না হয়। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছিল নারীরা অদৃশ্য। পুরুষ ও শিশুদের আগে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, নারীরা আলাদা বসে অপেক্ষা করছিলেন।’
তালেবান শাসনামলে নারীদের শিক্ষা থেকে শুরু করে জনজীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নারীরা উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে চিকিৎসা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় স্বাস্থ্যখাতে নারী চিকিৎসকেরও তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে নারীদের মুখ ঢাকা, পুরুষ অভিভাবক ছাড়া বাইরে না যাওয়া, এমনকি প্রকাশ্যে জোরে কথা বলা বা হাসতেও নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।’
জাতিসংঘ নারীবিষয়ক সংস্থার আফগানিস্তান প্রতিনিধি সুসান ফার্গুসন বলেন, ‘নারী ও মেয়েরাই আবারও এই দুর্যোগের প্রধান শিকার হবে। তাই তাদের প্রয়োজনগুলোকে কেন্দ্র করে ত্রাণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।’
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, রোববার আঘাত হানা ৬ ও ৫.৫ মাত্রার দুটি ভূমিকম্পে অন্তত ৩ হাজার ৫০০ জন মানুষ আহত হয়েছেন। তবে মানবিক সহায়তার অভাবে নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছে ত্রাণ সংস্থাগুলো।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন