সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫, ১১:০১ পিএম

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আসলে কী পরিবর্তন নিয়ে আসবে

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫, ১১:০১ পিএম

পতাকা হাতে ফিলিস্তিন প্রতিরোধযোদ্ধা। ছবি- সংগৃহীত

পতাকা হাতে ফিলিস্তিন প্রতিরোধযোদ্ধা। ছবি- সংগৃহীত

যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি দেশ একই পদক্ষেপ নিতে চলেছে। স্বীকৃতির এ ঘটনায় কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ সময় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই পদক্ষেপের প্রতি কড়া আপত্তি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি মানে কী

ফিলিস্তিন এমন এক রাষ্ট্র, যা আছে আবার নেইও। এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অনেক, বিদেশে কূটনৈতিক মিশন রয়েছে এবং অলিম্পিকসহ নানা ক্রীড়া আসরে দল পাঠায়।

কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের কারণে ফিলিস্তিনের কোনো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্ত নেই, নেই রাজধানী বা সেনাবাহিনী। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের কারণে ১৯৯০-এর দশকে শান্তিচুক্তির পর গঠিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নিজেদের ভূমি বা জনগণের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই। এ ছাড়া গাজায় ২০০৭ সাল থেকে হামাস একক কর্তৃত্ব চালাচ্ছে। এই আধা-রাষ্ট্রের মতো অবস্থানের কারণে স্বীকৃতি মূলত প্রতীকী। এটি শক্তিশালী নৈতিক ও রাজনৈতিক বার্তা দিলেও বাস্তবে খুব কম পরিবর্তন ঘটাবে। তবু এই পদক্ষেপের প্রতীকী গুরুত্ব ব্যাপক।

সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জুলাইয়ে জাতিসংঘে এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘দুই রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করার জন্য ব্রিটেনের বিশেষ দায়িত্ব আছে।’ তিনি ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণা স্মরণ করিয়ে বলেন, এতে ইহুদিদের জন্য একটি জাতীয় আবাস গড়ে তোলার পক্ষে ব্রিটেনের সমর্থন ছিল, তবে একই সঙ্গে অঙ্গীকার ছিল যেন ‘ফিলিস্তিনে বিদ্যমান অ-ইহুদি সম্প্রদায়গুলির বেসামরিক ও ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয়।’

১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত লিগ অব নেশনসের ম্যান্ডেট অনুযায়ী ব্রিটেন যে অঞ্চল শাসন করেছিল সেটিই ছিল তৎকালীন ফিলিস্তিন। ইসরায়েল ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও সমান্তরালভাবে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা নানা কারণে ব্যর্থ হয়েছে।

রাজনীতিবিদেরা বছরের পর বছর ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ কথাটি বলে আসছেন। এই ধারণা হলো ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের আগের সীমারেখা ধরে এবং রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেম (যা সেই যুদ্ধে ইসরায়েল দখল করে) রেখে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করা।

কিন্তু আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে আর পশ্চিম তীরের বড় অংশে ইসরায়েলের বসতি স্থাপন—যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ—এই ধারণাকে প্রায় ফাঁপা করে তুলেছে।

কারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়

জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্থায়ী পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা আছে—অংশগ্রহণ করতে পারে, কিন্তু ভোট দিতে পারে না।

ব্রিটেনের পর ফ্রান্সের স্বীকৃতি এলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের চারজনের সমর্থন পাবে ফিলিস্তিন। চীন ও রাশিয়া ১৯৮৮ সালেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। এতে ইসরায়েলের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্র একা থেকে যাবে। ওয়াশিংটন ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে স্বীকৃতি দিলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে মার্কিন নীতি ব্যাপকভাবে ইসরায়েলমুখী হয়।

এখন কেন এই পদক্ষেপ

ক্রমাগত ব্রিটিশ সরকারগুলো এতদিন স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বললেও তা কেবল শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে করতে চেয়েছে, ‘সবচেয়ে প্রভাবশালী মুহূর্তে’ অন্য পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে মিলিয়ে করতে চেয়েছে। কেবল প্রতীকী কারণে করলে সেটি ভুল হবে—এমনটাই বিশ্বাস করত তারা। এতে নৈতিক সন্তুষ্টি মিললেও বাস্তবে কিছু বদলাবে না।

কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলি একাধিক সরকারকে হাত বাড়াতে বাধ্য করেছে। গাজায় ধীরে ধীরে তৈরি হওয়া দুর্ভিক্ষের দৃশ্য, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের ওপর ক্ষোভ আর জনমতের বড় পরিবর্তন—সবই এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ‘গাজা উপত্যকায় বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা

ট্রাম্প প্রশাসন কখনোই এই স্বীকৃতির পক্ষে ছিল না। গত বৃহস্পতিবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই স্বীকার করেছেন, এ বিষয়ে তার সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর ‘মতপার্থক্য’ আছে। দুই নেতা অবশ্য একান্ত বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

আসলে স্পষ্ট হয়ে গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার ধারণার সরাসরি বিরোধিতায় পরিণত হয়েছে। এই জুনে ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি বলেন, তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র আর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সমর্থক নয়। আরও সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির আন্তর্জাতিক চাপ হামাসকে ‘আরও সাহসী’ করে তুলবে। তিনি ১৫ সেপ্টেম্বর নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি যুক্তিই পুনরাবৃত্তি করেন, এই স্বীকৃতি ‘সন্ত্রাসবাদের পুরস্কার’।

রুবিও আরও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ওই দেশগুলোকে সতর্ক করেছে যে এই স্বীকৃতি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখল করতে প্ররোচিত করতে পারে। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, এতে পারস্পরিক পদক্ষেপ তৈরি হবে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!