শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সোহেল কিরণ, নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৫, ০১:০০ এএম

ঘুষে সব অনিয়মই হয়ে যায় নিয়ম!

সোহেল কিরণ, নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৫, ০১:০০ এএম

ঘুষে সব অনিয়মই  হয়ে যায় নিয়ম!

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ড্যাপের নামমাত্র অনুমোদনে যত্রতত্র বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে একদিকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের চলার পথ সংকোচিত হচ্ছে। আবার এসব ভবন যেকোনো সময় ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বেশ কিছু অঞ্চল নিয়ে গঠিত ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) মূল উদ্দেশ্য এই বিস্তৃত অঞ্চলকে আধুনিক ও বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তোলা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার তারাব পৌরসভায় গত দেড় যুগে ড্যাপ থেকে নামমাত্র অনুমোধন ব্যবহার করে ২ হাজারের অধিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ভবন নির্মাণে তারাব পৌরসভার ইঞ্জিনয়িার মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সার্ভেয়ার মাকসুদুর রহমান, নক্সাকার মোহাম্মদ সাদেকসহ সংশ্লিষ্টদের লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। যারা চাহিদা মতো ঘুষ দেন কেবল তারাই নামমাত্র অনুমোদন নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে পারেন। আর যারা সরকার নির্ধারিত টাকার বাইরে বাড়তি টাকা দিতে চান না তারা অনুমোদনের অপেক্ষায় ঘুরছেন বছরের পর বছর।

এসব অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে সম্প্রতি ভুক্তভোগীদের স্বাক্ষরিত ১২ পৃষ্ঠার একটি অভিযাগপত্র নারায়ণগঞ্জ দুদক কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ও পৌরসভা কার্যালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলের ১ যুগে তারাব পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শুধু পৌরসভার ইঞ্জিনয়িার মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সার্ভেয়ার মাকসুদুর রহমান, নকশাকার মোহাম্মদ সাদেককে মোটা অঙ্কের টাকায় ম্যানেজ করে ২ হাজারের অধিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে অনিয়ম দেখেও যেন না দেখার ভান ধরেন দায়িত্বশীলরা।

জানা যায়, রাজউকের এরিয়ায় বা ড্যাপের আওতাধীন এলাকায় ভবন নির্মাণ করতে গেলে আইবি/আইএবি/রাজউকের অনুমোধিত ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে প্ল্যান পাস করাতে হয়। এ ছাড়া ভবন নির্মাণে ৪টি বিষয়ের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। সেগুলো হলোÑ ১. আর্কিটেকচারাল প্ল্যান, ২. স্ট্রাকচারাল প্ল্যান, ৩. ঈø্যাম্পিং প্ল্যান ও ৪. ইলেকট্রিক্যাল প্ল্যান। এরপর নির্মাণের স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু চাহিদা মাফিক ঘুষের টাকা পেলে কোনো প্ল্যানেরই প্রয়োজন পড়ে না। আবার সরেজমিন পরিদর্শন ছাড়াই অফিসে বসে পৌরসভার এসব কর্মকর্তারাই ভবনের প্ল্যান পাস করে দেন। ফলে ত্রুটিযুক্ত প্ল্যানেই চলে ভবন নির্মাণের হিড়িক। এতে নির্মিত অপরিকল্পিত এসব ভবন যেকোনো সময় ধসে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনাÑ এমন দাবি স্থানীয়দের।

এমনই একজন ভুক্তভোগী সেলিম মাহমুদ। তিনি জানান, তার ভবনের প্ল্যান পাস করাতে গিয়ে দিতে হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। তারপর বাইরে থেকে ৫ হাজার টাকায় সয়েল টেস্ট করান। কিন্তু পৌরসভার কর্মকর্তারা তা না মানলে ১০ হাজার টাকা দিয়ে তাদের কাছ থেকে সয়েল টেস্ট করাতে হয়।

তারাব এলাকার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় আমি নিজেই ২০১৯ সালে ভবনের ড্রয়িং ডিজাইন করে তাদের কাছে জমা দিলে তা গ্রহণ করা হয়নি। বরং উল্টো তার জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। বাধ্য হয়ে সেই টাকা ডিজাইন পাস করাতে হয়েছে।

আয়েত আলী নামের একজন বলেন, ২০২১ সালে আমি ১ হাজার ১২৫ স্কয়ারফুট ৪ তলা ভবন নির্মাণের প্ল্যানের জন্য আবেদন করি। কিন্তু প্ল্যান পাস না করিয়ে তারা আমাকে বিভিন্নভাবে ঘুরাতে থাকে। পরে আমার কাছে ৮০ হাজার টাকা দাবি করে। শেষ পর্যন্ত তাদের দাবীকৃত টাকা দিলে ভবন নির্মাণের অনুমোদন পাই।

এদিকে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম মনির কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। যার পাশ দিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক তার নেওয়া হয়েছে। অথচ এমন হাইভোল্টেজ তারের পাশে ভবন নির্মাণের কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু টাকা দেওয়ায় অনিয়মই এখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে।

এসব বিষয়ে তারাব পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পওয়া যায়।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তারাব পৌরসভার প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, অনিয়মের বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিয়েছে কি না তা জানা নেই। অভিযোগ পেলে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাইদুল ইসলাম মিঞা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন কিছু ঘটে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!