শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আরিফুল ইসলাম, নাচোল

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৫, ০১:০১ এএম

স্বাস্থ্যসেবার বদলে দুর্নীতির রাজত্ব

আরিফুল ইসলাম, নাচোল

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৫, ০১:০১ এএম

স্বাস্থ্যসেবার বদলে দুর্নীতির রাজত্ব

  • যোগদানে ঘুষ, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ
  • অ্যাম্বুলেন্সে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
  • কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল, পুরোনো আসবাব বিক্রির টাকা আত্মসাৎ
  • আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, যোগদানে ঘুষ, অ্যাম্বুলেন্সে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, আসবাবপত্র বিক্রির টাকা ফাঁকি, জাল স্বাক্ষর ও ওষুধ বিক্রি, সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যসেবার বদলে যেন চলছে দুর্নীতির রাজত্ব।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কর্মচারী ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে নানা অনিয়ম করে আসছেন। তাদের মধ্যে প্রধান সহকারী মো. রাজু আহমেদ, অফিস সহকারী আব্দুল আলীম, অফিস সহায়ক বশির আহমেদ এবং অ্যাম্বুলেন্সচালক আ. বারেক আলীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামাল হোসেনের অনুপস্থিতিতে তার স্বাক্ষর জাল করে ভান্ডার রক্ষক জুয়েল আহমেদকে শোকজ নোটিশ দেন রাজু আহমেদ। শুধু তাই নয়, পদাধিকার না থাকলেও তিনি প্রায়ই কর্মকর্তার চেয়ারে বসে অফিস পরিচালনা করেন। অন্যদিকে সরকারি মোটরসাইকেল ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন এবং ভান্ডারের চাবি নিজের কাছে রেখে মনমতো ব্যবহার করেন অফিস সহায়ক বশির আহমেদ।

একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘এই চারজন মিলে পুরো অফিসকে নিয়ন্ত্রণ করছে।’ সম্প্রতি সিনিয়র স্টাফ নার্স মুনিরা খাতুন ও নৈশপ্রহরী সুলতান মাহমুদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাদের রুম থেকেও বের করে দেওয়া হয়।

তাদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও নার্সদের কাছ থেকে ‘বকশিশ’ নামে ২ হাজার টাকা করে নেওয়া, হাসপাতালের রান্নাঘরের ২২টি সসপ্যানের মধ্যে ১৯টির হদিস না থাকা, পুরনো আসবাব বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করা, এবং হাসপাতালের গাছ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করা।

এ ছাড়া, ২০১৪ সাল থেকে সরকারি আবাসিক কোয়ার্টারে উপজেলা হিসাব রক্ষার অফিসের কর্মচারী তাহাসিনা খাতুন গোপনে ভাড়া থাকছেন। অভিযোগ রয়েছে, কোয়ার্টারটি স্বাস্থ্যবিভাগের বরাদ্দ হলেও অ্যাম্বুলেন্সচালক বারেক আলী তার নামে ভাড়া নিয়ে পরে তাহাসিনাকে সেখানে রাখেন। এতে মাসিক ২,৪৫০ টাকা হারে প্রায় তিন লাখ টাকার ভাড়া আদায় হলেও সেই অর্থ সরকারি হিসাবে জমা হয়নি।

অ্যাম্বুলেন্স সেবায়ও চলছে অব্যবস্থা ও অনিয়ম। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রাজশাহী পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত ১,৬৫০ টাকার পরিবর্তে ২,৬০০ থেকে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হয়। জরুরি রোগী থাকলেও অ্যাম্বুলেন্সের ঘরে তালা মেরে রেখে ড্রাইভার বারেক আলী নিজের মাইক্রোবাসে রোগী পরিবহন করেন এবং অতিরিক্ত অর্থ নেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোনো নিয়োগপত্র ছাড়াই মাসুম নামের এক ব্যক্তি ইমারজেন্সি রুমে রোগী দেখছেন। তিনি নিজেই স্বীকার করেন, ‘ডাক্তার নই, বিদ্যুৎকাজ করি।’ কর্তব্যরত চিকিৎসকও বলেন, ‘রোগীর চাপের সময় মাঝে মাঝে এমনটা হয়।’

অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা একে অপরের ওপর দায় চাপিয়ে দেন এবং কেউই ক্যামেরার সামনে মন্তব্য করতে রাজি হননি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহাবুব-উল আলম বলেন, ‘আমি মাত্র দুই দিন হলো যোগদান করেছি। সব অভিযোগ তদন্ত করে দেখব। প্রমাণ মিললে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতাল হয়েও এখানে ব্যক্তিগত প্রভাব ও স্বার্থের রাজনীতি চলছে। এতে সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তারা দ্রুত তদন্ত ও সংশ্লিষ্টদের বদলি দাবি করেছেন।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!