শ্রম সংস্কার ও কর্মঘণ্টা বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দেশ গ্রিসে গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া টানা ২৪ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে যায় পরিবহন ও জনসেবা।
বুধবার (০১ অক্টোবর) রাজধানী এথেন্সে পার্লামেন্ট অভিমুখে মিছিল করেছেন শিক্ষক, নাবিকসহ হাজারো শ্রমিক। এ দিন ট্রেন, ফেরি ও ট্যাক্সি চলাচল বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
সরকারি ও বেসরকারি খাতের শ্রমিকরা শ্রম আইন পরিবর্তনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন। গ্রিসের বৃহত্তম সরকারি ও বেসরকারি ট্রেড ইউনিয়ন এই আন্দোলনের আয়োজন করে। শ্রমিকদের এই আন্দোলনের প্রভাবে স্কুল, আদালত, সরকারি হাসপাতাল ও পৌরসভার কাজকর্মও ব্যাহত হয়েছে। মধ্য এথেন্সে দুটি বড় বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। অন্য শহরগুলোতেও একইভাবে বিক্ষোভের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের দাবি, সরকারি বিল শ্রমিক অধিকার ক্ষুণ্ন করবে। খসড়া আইনে নিয়োগকর্তারা কর্মীদের দিনে সর্বোচ্চ ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করাতে পারবেন। এমনকি বেসরকারি খাতের কর্মীদের জন্যও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। আন্দোলনে যোগ দেওয়া ২৪ বছর বয়সি বিক্রয়কর্মী দিমিত্রা বলেন, ‘আমরা ভয়াবহ এই বিলের বিরুদ্ধে না বলতে এসেছি। থামো! আমরা মেশিন নই।’
বিক্ষোভকারীদের হাতে ধরা ব্যানারে লেখা ছিল ‘দাসত্বকে না’।
ইউরো নিউজের প্রতিবেদন বলছে, খসড়া আইন অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদি নিয়োগে আরও নমনীয়তা আনা হবে এবং ছুটির নিয়ম পরিবর্তন করা হবে। বিলটি চলতি মাসেই সংসদে তোলা হবে। সরকার বলছে, পরিকল্পনাটি বাধ্যতামূলক নয়, বছরে মাত্র ৩৭ দিনের জন্য কার্যকর হবে এবং এতে শ্রমিকরা ৪০ শতাংশ ওভারটাইম বেতন পাবেন। নতুন নিয়মে ওভারটাইমসহ সাপ্তাহিক কাজের সময় সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টায় সীমিত থাকবে। বছরে সর্বোচ্চ ১৫০ ঘণ্টা ওভারটাইম অনুমোদিত হবে।
কিন্তু শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর অভিযোগ, এই বিল নিয়োগকর্তার হাতে শ্রমিকদের শ্রম নির্যাতনের ঝুঁকিতে ফেলবে। ঋণ সংকটের (২০০৯-২০১৮) সময় মজুরি ও পেনশন কাটছাঁট এবং আকাশচুম্বী বেকারত্বের পর এখনো গ্রিসের শ্রমিকরা চাপে রয়েছে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও এবং ন্যূনতম মজুরি ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও, গ্রিকরা এখনো আবাসন ও খাদ্যের বাড়তি দামের চাপে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে।
বেসরকারি খাতের ছাতার সংগঠন জেনারেল কনফেডারেশন অফ ওয়ার্কার্স অফ গ্রিস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা ১৩ ঘণ্টার শিফটকে না বলছি। ক্লান্তি কোনো উন্নয়ন নয়, মানুষের সহনশীলতার সীমা আছে।’ সংগঠনটি ৩৭.৫ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহ ফিরিয়ে আনার এবং যৌথ দর কষাকষির চুক্তি পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে। বর্তমানে গ্রিসে বৈধ কর্মদিবস আট ঘণ্টা, অতিরিক্ত সময়ে কাজের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বেতন প্রযোজ্য।
সরকারি খাতের কর্মীরা বলছে, মজুরি না বাড়িয়ে শ্রমিক অধিকার খর্বের চেষ্টা করা হচ্ছে। ৬৫ বছর বয়সি ইউনিয়ন প্রতিনিধি ভেটা পাপুতসাকো বলেন, ‘এই বিল শুধু শোষণ বাড়াবে, শ্রম অধিকার ধ্বংস করবে, পরিবারগুলোর আয় কেড়ে নেবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন