চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে, নরওয়ের রাজনীতিবিদেরা এ ঘোষণার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে সতর্ক হচ্ছিলেন। যদি পুরস্কারটি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেওয়া না হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্র-নরওয়ে সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।
নরওয়ের নোবেল কমিটি বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, গত সোমবার ২০২৫ সালের শান্তি পুরস্কারের বিজয়ী কে হবেন তা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে তারা। ইসরায়েল ও হামাস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার অধীন যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর কয়েক দিন আগেই ওই সিদ্ধান্ত পাকাপাকি হয়ে গেছে।
সময়কাল ও স্বাধীন পাঁচ সদস্যের নোবেল কমিটির গঠন বিবেচনা করে বেশিরভাগ নোবেলবিশেষজ্ঞ এবং নরওয়ের পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, ট্রাম্পকে এ পুরস্কার দেওয়ার সম্ভাবনা বলতে গেলে একেবারেই নেই। সে হিসাবে ট্রাম্প প্রকাশ্যে উপেক্ষিত হলে তার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা নিয়ে নরওয়েতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
নরওয়ের সোশ্যালিস্ট লেফট পার্টির নেতা ও বৈদেশিক নীতিবিষয়ক মুখপাত্র কির্সটি বার্গস্টো বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে চরম অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, বাক্স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ করছেন, পুলিশ ব্যবহার করে দিনের আলোয় মানুষ অপহরণ করছেন এবং প্রতিষ্ঠান ও আদালতকে দমন করছেন। যখন একজন প্রেসিডেন্ট এত সংক্ষুব্ধ ও স্বৈরাচারী হন; তখন অবশ্যই আমাদের যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
বার্গস্টো আরও বলেন, ‘নোবেল কমিটি একটি স্বাধীন সংস্থা এবং নরওয়ে সরকার পুরস্কারের সিদ্ধান্তে কোনো ভূমিকা রাখে না; কিন্তু আমি নিশ্চিত নই, ট্রাম্প এটা জানেন কি না। তাই আমাদের তার তরফে যেকোনো আচরণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যেই এ বিশ্বাসের কথা ব্যক্ত করছেন যে তাকে শান্তি পুরস্কার দেওয়া উচিত। এ পুরস্কার আগে তার পূর্বসূরি মার্কিন প্রেসিডেন্টদের একজন বারাক ওবামাকে দেওয়া হয় ২০০৯ সালে। আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং মানুষের মধ্যে সহযোগিতা শক্তিশালী করার অসাধারণ প্রচেষ্টার জন্য তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
গত জুলাই মাসে ট্রাম্প নরওয়ের অর্থমন্ত্রী ও সাবেক ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গকে ফোন করে নোবেল পুরস্কার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন বলে জানা যায়। আবার গত মাসে জাতিসংঘে ট্রাম্প মিথ্যা দাবি করেছেন যে তিনি সাতটি ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধ করেছেন এবং বিশ্বনেতাদের বলেন, ‘সবার মতে, আমার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত।’
নরওয়ের গ্রিন পার্টির নেতা অ্যারিল্ড হার্মস্ট্যাড বলেছেন, ‘শান্তি পুরস্কার অব্যাহত প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্জন করতে হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাগ বা ভয় দেখিয়ে নয়। ট্রাম্প ইসরায়েল ও হামাসের সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি সমর্থন করেছেন, এটি ভালো। গাজায় দুঃখ-দুর্দশা দূর করার পথে যেকোনো পদক্ষেপই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য; কিন্তু দেরিতে করা একটি ভালো কাজ অতীতে হওয়া সহিংসতা বা বিভাজনকে মুছে দিতে পারে না।’
নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউটের পরিচালক ক্রিস্টিয়ান বার্গ হার্পভিকেন বলেন, নোবেল কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে সোমবার পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। হার্পভিকেন বলেন, সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক নয়, যদিও নোবেল কমিটির সদস্যদের নিয়োগ আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছানুযায়ী হওয়ায় তা মাঝেমাঝে ভিন্নভাবে দেখা যেতে পারে।
‘পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলো’র পরিচালক নিনা গ্রেগার মনে করেন, এ বছরের শান্তি পুরস্কারের সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী সুদানের ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস’, দ্য কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস ও উইমেনস ইন্টারন্যাশনাল লিগ ফর পিস অ্যান্ড ফ্রিডম।
গ্রেগার বলেন, ‘যদিও তিনি গাজা যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টার জন্য স্পষ্টত প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য, তবে তার শান্তি প্রস্তাব বাস্তবায়িত হবে কি না এবং স্থায়ী শান্তি আনবে কি না, তা বলা এখনই সম্ভব নয়। ট্রাম্প আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে তার দেশকে সরিয়ে নিয়েছেন, ন্যাটো মিত্র ডেনমার্কের গ্রিনল্যান্ড দখল করে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এবং তার নিজ দেশেই মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের লঙ্ঘন—এসব নোবেলের ইচ্ছার সঙ্গে মিল খায় না।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন