শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে ভিড় করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের প্রার্থীরা। ভিন্ন ভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা নিজেদের প্রচারপত্র বিলি করছিলেন মুসল্লি শিক্ষার্থীদের মাঝে। কিছুক্ষণ পরেই বদলে গেল পরিবেশ। মতপার্থক্য ভুলে পাশাপাশি দাঁড়ালেন তারা। জড়িয়ে একে অপরকে বুকে টেনে নিলেনও কেউ কেউ।
শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে মসজিদ প্রাঙ্গনে রাকসুর প্রার্থীদের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ লক্ষ্য করা গেছে।
প্রার্থীরা বলছেন, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সকালে শিক্ষার্থীরা কম বের হন। তবে অনেকেই জুমার নামাজে কেন্দ্রীয় মসজিদে আসেন। তাই তারা তখন প্রচার চালিয়েছেন। এ ছাড়াও তারা বিকেলে বিভিন্ন আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় ছাত্রাবাসে প্রচার চালিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে দেখা যায়, নামাজের শেষে ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবীর, ‘রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী মারুফ, ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার, ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজাসহ অনেকেই একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন।
এ সময় তারা হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠেন। গল্প করেন গোল হয়ে। তাদের গল্পে ও ঠাট্টায় জমে ওঠে নির্বাচনি আলোচনা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল হলেও তারা নির্বাচনের জন্য একে অপরের কাছে ভোটও চান। পুরো প্রাঙ্গনজুড়ে এক আনন্দের আবহ তৈরি হয়।
এ সময় আধিপত্যবাদবিরোধী ঐক্য প্যানেলের জিএস প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে রাকসু নির্বাচনের আগের শেষ শুক্রবার। এখানে দল-মত-মতাদর্শ সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমরা রাকসুকে একটি উৎসব হিসেবে দেখছি। যে জিতবে এবং বাকি যারা হেরে যাবে, তারা হেরে গিয়েও জিতে যাবে। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করব।’
সকলে মিলে সুন্দর ক্যাম্পাস গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন। তিনি বলেন, ‘ভয়ভীতিহীন, গণতান্ত্রিক ও সাইবার বুলিংমুক্ত রাকসু নির্বাচন চাই। আমরা যেই জিতি, যেই হারি, সবাই মিলে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করব। এটা আমাদের প্রতিশ্রুতি।’
রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী মারুফ বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীদের মধ্যে কী পরিমাণ সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আছে, সেটা আপনারা দেখছেন। আমরা সবাই দলমত নির্বিশেষে সবাই একত্র হয়েছি। ক্যাম্পাসের স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।’
সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা বলেন, ‘যে উৎসবটা আগে ছিল, সেটি দ্বিগুণ হয়ে আবার ফিরে এসেছে। এটি শিক্ষার্থী, প্রার্থী সবাই উপভোগ করছি। নির্বাচন নিয়ে যে দোলাচলগুলো ছিল, সেটি কেটে গেছে। আশা করছি, ১৬ অক্টোবর সুষ্ঠু ও সৌহার্দ্যপূর্ণ রাকসু নির্বাচন হবে।’
এ দিন কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ আদায় করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। নামাজ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রার্থীরা উৎসবমুখর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইনশা আল্লাহ, সুন্দর করেই ইলেকশন হয়ে যাবে।’
এদিকে নির্বাচন নিয়ে আর কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘রাকসু নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের কর্মসূচি দেবেন না বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। তারা নির্বাচনে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই নির্বাচন নিয়ে আর শঙ্কা দেখা যাচ্ছে না।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন