নওগাঁয় স্কুল মাঠ দখল করে প্রশাসনের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই শীতবস্ত্র ও শিল্পপণ্য মেলা শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) থেকে শহরের আবাসিক এলাকা হাট-নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মেলা শুরু করা হয়। স্কুলের আবাসিক এলাকায় এবং বার্ষিক পরীক্ষার সময় মেলা হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
তবে এ মেলাকে নিয়ে ইতোমধ্যে বির্তক ও নানান গুঞ্জন শুরু হয়েছে। মেলা পরিচালনার সুবিধার জন্য জেলা পুলিশের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, যদিও পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে অবগত না।
জানা যায়, শহরের হাট-নওগাঁ আবাসিক এলাকা। এ এলাকায় হাট-নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়, হাট-নওগাঁ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং প্রবাহ সংসদ স্কুল রয়েছে।
মঙ্গলবার মেলা শুরু হলেও দুই সপ্তাহ আগে থেকে অবকাঠামোগত কাজ করা হচ্ছে। স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। আর মেলার জন্য টিন দিয়ে অস্থায়ীভাবে পুরো মাঠে বেস্টনি দেওয়া হয়েছে। হাট-নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় দ্বিতীয় দরজা দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চলাচল করতে হচ্ছে। মেলার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ও পরীক্ষায় সমস্যা হচ্ছে।

এ ছাড়া মাঠেও খেলাধুলা করতে পারছে না শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। বুধবার বেলা ১২টার দিকে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা মেলায় এসে ঘুরতে দেখা গেছে।
রাজশাহী শিল্ক এন্ড বেনারসি জামদানি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি একমাসব্যাপী মেলার আয়োজন করেছে। মেলার অনুমতি পেতে গত ২৭ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী রহিদুল ইসলাম জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। মেলায় পোশাক, বিভিন্ন ধরনের খাবার, খেলনা প্রায় ৫০টি স্টল অংশ নিয়েছে।
এ ছাড়া বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, নৌকা ও ড্রাগন রয়েছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মেলা চলছে। আর মেলায় প্রবেশের জন্য ২০ টাকার টিকিট চালু করা হয়েছে।
হাট-নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম শ্রেণির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, স্কুলের গেট বন্ধ থাকায় প্রবেশে সমস্যা হচ্ছে। পরীক্ষায় মনযোগ হচ্ছে না। মাঠে খেলাধুলাও করা যাচ্ছে না।

স্থানীয় সাইদুর রহমান নামে একজন বলেন, বাচ্চাদের এখনো পরীক্ষা শেষ হয়নি, এরই মধ্যে স্কুল মাঠে মেলা লাগানো ঠিক হয়নি। এতে বাচ্চাদের মনোযোগ নষ্ট হয়ে পরীক্ষা খারাপ হবে। মেলা পুরোদমে শুরু হলে মাইকে গান-বাজনা হবে এবং এলাকাবাসীরও সমস্যা হবে। এসব মেলা হবে ফাঁকা জায়গায়।
হাট-নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস. এম. নাজমুল হাসান বলেন, ‘মাঠটি স্কুলের। তবে মেলার জন্য কোনো ভাড়া দেওয়া হয়নি। এলাকার এলিট পার্সনরা অনুরোধ করায় বিশেষ করে প্রবাহ সংসদ ক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকসহ অন্যরা অনুরোধ করায় মাঠে মেলা করার জন্য লিখিত অনুমোতি দিয়েছি। তবে প্রতিষ্ঠানের সভাপতিকে লিখিত না দিয়ে মৌখিক বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, স্কুলের মোট ৩০০ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষা দিচ্ছে ২৭৫ জন। ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণির পরীক্ষা বৃহস্পতিবার শেষ হবে। আর ৯ম ও ১০ দশম শ্রেণির পরীক্ষা আগামী রোববার শেষ। মেলার কারণে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। আগামী ১৫ ডিসেম্বর স্কুল ছুটি হবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরীক্ষা চলবে। মেলা এখনো তেমন জমে উঠেনি। তাদের উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা চলাকালীন মাঠটি দিয়েছে এবং মেলা হচ্ছে। তবে তারাই ভালো বলতে পারবে। মেলার অবকাঠামো করার সময় একটু সমস্যা হয়েছিল। এখন আমাদের তেমন একটা সমস্যা হচ্ছে না।
রাজশাহী শিল্ক এন্ড বেনারসি জামদানি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির স্বত্ত্বাধিকারী রহিদুল ইসলাম বলেন, মেলা চালু করার জন্য এখনো অনুমতি পাওয়া যায়নি। আগামী ১২ ডিসেম্বর পরীক্ষা শেষ হলে পুরোদমে চালু করা হবে।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রশাসক এবং হাট-নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জান্নাত আরা তিথি বলেন, স্কুল মাঠে মেলা চালানোর জন্য প্রধান শিক্ষক দিতে পারেন না। আর প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে আমাকে কোনো অবগতও করেননি।
এ ছাড়াও নওগাঁ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং জেলা প্রশাসনরে পক্ষ থেকে মেলার কোনো অনুমোতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মেলা বিষয়ে একটি আবেদন এসেছে। তবে অনুমদনের প্রক্রিয়া চলছে।
নওগাঁ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, ওই মেলার সঙ্গে জেলা পুলিশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যদিও তাদের ব্যানারে জেলা পুলিশের নাম লেখা আছে। ব্যানারগুলো খুলে ফেলতে বলা হয়েছে।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন