মধ্যপ্রাচ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তির উদ্যোগ শুরুতেই চাপে পড়েছে। মাত্র দুই দিন হলো যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছে। এরই মধ্যে এই পরিকল্পনা নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। গাজায় সহায়তা অর্ধেকে কমিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাফ জানিয়েছেন, হামাস যদি নিজে থেকে নিরস্ত্র না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র ‘সহিংসভাবে হলেও’ তাদের নিরস্ত্র করবে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসে এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘হামাস যদি নিজে থেকে নিরস্ত্র না হয়, তাহলে আমরা তাদের নিরস্ত্র করব- এবং এটি দ্রুত এবং সম্ভবত সহিংসভাবে ঘটবে।’
তিনি দাবি করেন, হামাসের শীর্ষ নেতাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে’ মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে। ট্রাম্প আরও জানান, হামাস তাকে জানিয়েছে, ‘হ্যাঁ স্যার, আমরা নিরস্ত্রীকরণ করব।’
একই দিনে হামাস তাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে আটজন সন্দেহভাজনকে চোখ বেঁধে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করতে দেখা যায়। হামাস দাবি করে, নিহতরা ইসরায়েলি সহযোগী এবং আমাদের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল।
ট্রাম্প এ নিয়ে বলেন, গাজায় হামাস যে ‘গ্যাং’-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে তা তিনি প্রাথমিকভাবে সমর্থন করেন এবং এই পুলিশিংকে তিনি ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
গাজা নিয়ে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার অন্যতম শর্ত হলো হামাসের নিরস্ত্রীকরণ। তবে এই পরিকল্পনায় গাজা থেকে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।
এরই মধ্যে ইসরায়েল গাজার অর্ধেক অংশ দখল করে রেখেছে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি থাকা সত্ত্বেও মঙ্গলবার একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে, যাতে অন্তত সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজায় সহায়তা অর্ধেকে কমাল ইসরায়েল
জাতিসংঘ যদিও গাজায় আরও খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে, ইসরায়েল তাতে কর্ণপাত না করে অবরোধ আরও জোরদার করেছে। গতকাল মঙ্গলবার জানানো হয়, মিশরের সঙ্গে রাফাহ সীমান্ত বুধবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এবং ঘোষিত প্রতিশ্রুতির চেয়েও কমসংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে পারবে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, ‘মানবিক অবকাঠামোর’ জন্য বিশেষ বিবেচনা ছাড়া গাজায় কোনো জ্বালানি বা গ্যাস ঢুকতে দেওয়া হবে না।
এদিকে ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, হামাস তাদের ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বন্দিদের মৃতদেহ আটকে রেখেছে। তবে হামাসের এক শীর্ষস্থানীয় সূত্র মিডল ইস্ট আই (MEE)-কে জানায়, ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে মৃতদেহ উদ্ধার ও শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, ‘ইসরায়েলের হামলা এই এলাকার ভৌগোলিক চেহারা বদলে দিয়েছে। এতে করে মৃতদেহ কোথায় আছে, তা শনাক্ত করাই দুরূহ হয়ে পড়েছে।’
তবে হামাস নিশ্চিত করেছে, তারা বন্দিদের মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জাতিসংঘের আহ্বান
রাফাহ সীমান্ত বন্ধ থাকায় জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র রিকার্ডো পাইরেস বলেন, ‘আমাদের সব ক্রসিং খোলা থাকা দরকার। রাফা যত বেশি সময় বন্ধ থাকবে, গাজার মানুষের-বিশেষ করে দক্ষিণে যারা বাস্তুচ্যুত- তাদের দুর্ভোগ ততই বাড়বে।’
গত সোমবার হামাস আরও ২০ জন জীবিত বন্দি মুক্তি দিয়েছে। সঙ্গে ফেরত দিয়েছে চারজন নিহত বন্দির মৃতদেহ। চুক্তির আওতায় মোট ২৮ জন মৃত বন্দির দেহ হস্তান্তরের কথা রয়েছে। হামাসের দাবি অনুযায়ী, গাজায় আর কোনো জীবিত বন্দি অবশিষ্ট নেই।