ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে অবিলম্বে ক্ষমতা ছাড়তে আলটিমেটাম দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প—এমন খবর প্রকাশ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম মায়ামি হেরাল্ড।
তবে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন মাদুরো। পাল্টা শর্ত হিসেবে তিনি নিজের ও ঘনিষ্ঠদের জন্য বিশ্বব্যাপী আইনি দায়মুক্তি বা ‘গ্লোবাল অ্যামনেস্টি’ দাবি করেছেন।
রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, মাদুরোর সঙ্গে তার একটি ফোনালাপ হয়েছে। যদিও তিনি আলোচনার ফলাফল নিয়ে স্পষ্ট মন্তব্য না করে বলেন, খুব ভালো বা খুব খারাপ— কোনোটাই বলব না, এটা ছিল একটা ফোনকল।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলা—কোনো পক্ষই ফোনালাপের বিস্তারিত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। ধারণা করা হচ্ছে, ২১ নভেম্বর এই ফোনালাপ হয়।
মায়ামি হেরাল্ড-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফোনালাপে ট্রাম্প মাদুরোকে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, তিনি ও তার ঘনিষ্ঠরা নিরাপদে দেশ ছাড়তে পারেন—শর্ত হলো, অবিলম্বে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। এতে মাদুরোর স্ত্রী ও ছেলের নিরাপদ বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কিন্তু মাদুরো তা প্রত্যাখ্যান করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি কয়েকটি শর্ত দেন—এর মধ্যে রয়েছে সারা বিশ্বে তার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের বিচারিক পদক্ষেপ থেকে অব্যাহতি এবং সরকার ছাড়লেও যেন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই থাকে।
এদিকে ওই ফোনালাপের পর আর কোনো সরাসরি যোগাযোগ হয়নি বলে জানিয়েছে মায়ামি হেরাল্ড। এমনকি গত সপ্তাহে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার পুরো আকাশসীমা ‘বন্ধ ঘোষণা’ করার পর মাদুরো দ্বিতীয়বার কথা বলতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র কোনো সাড়া দেয়নি বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই প্রথম ফোনালাপটি ব্রাজিল, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় হয়।
এদিকে অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হুমকি বাস্তব রূপ নেবে—এমন বিশ্বাস মাদুরো সরকারের নেই। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-কে ভেনেজুয়েলার শীর্ষ কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন সামরিক হুমকিকে তারা ‘ব্লাফ’ হিসেবেই দেখছে।
২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসার পর মাদুরো একের পর এক সংকট মোকাবিলা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক বিপর্যয়, গণবিক্ষোভ, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সর্বোচ্চ চাপ নীতি, একবার হত্যাচেষ্টা এবং সর্বশেষ বিতর্কিত নির্বাচন—যেখানে তিনি পরাজিত হয়েছেন বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়।
অন্যদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের সম্পাদকীয়তে ট্রাম্প প্রশাসনকে ভেনেজুয়েলার ওপর চাপ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। পত্রিকাটি বলেছে, মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের অংশ।
সম্পাদকীয়তে সতর্ক করে বলা হয়, মাদুরো যদি যেতে অস্বীকৃতি জানান এবং ট্রাম্প পিছিয়ে যান, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা।
এই উত্তেজনার মধ্যেই শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশায় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ভেনেজুয়েলার সরকার ও বিরোধীদের আলোচনার জন্য কলম্বিয়ার কার্তাহেনা শহরের প্রস্তাব দিয়েছেন।
এদিকে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওপেকভুক্ত দেশগুলোর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। সেখানে তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল মজুদ দখল করতেই যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান




