শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ১০:৪৫ পিএম

ইন্ডিগোর শত শত ফ্লাইট বাতিল, বিপাকে লাখো যাত্রী

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ১০:৪৫ পিএম

ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের বিমান। ছবি- সংগৃহীত

ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের বিমান। ছবি- সংগৃহীত

ভারতের শীর্ষ বিমান পরিষেবা সংস্থা ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সে টানা তিন দিন ধরে চলছে নজিরবিহীন অরাজকতা। একের পর এক ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ যাত্রী।

বিমানবন্দরগুলোতে তৈরি হয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা—কোথাও যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রয়েছেন খাবার ও বিশ্রাম ছাড়া, আবার কোথাও কোনো তথ্য না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন।

টানা ফ্লাইট বাতিল, বিপর্যস্ত সারা দেশ

শুক্রবার একদিনেই ৬০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে ইন্ডিগো, যা ভারতের বিমান চলাচলের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম বড় বিপর্যয়। আগের দিন বৃহস্পতিবার বাতিল হয়েছিল আরও ৫৫০টি ফ্লাইট। গত তিন দিনে মোট বাতিলের সংখ্যা কয়েক হাজারে পৌঁছেছে।

অধিকাংশ যাত্রী অভিযোগ করেছেন—বিমান সংস্থা হঠাৎ করেই ফ্লাইট বাতিল করছে, কোনো পূর্ব ঘোষণা বা বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই। অন্যদিকে সুযোগ নিয়ে অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলো টিকিটের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ভারতের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন, অব্যবস্থাপনা, তথ্যের অভাব এবং অসহায় অপেক্ষামান যাত্রীর চিত্র ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেক পরিবার বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন; অনেকে বলেছেন, “কখন ফ্লাইট ছাড়বে জানি না, আবার বাড়ি ফিরতেও পারছি না।”

সংকটের মূল কারণ: ডিজিসিএর নতুন বিধি

ইন্ডিগোর এই বিপর্যয়ের নেপথ্যে রয়েছে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএর নতুন ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস’ (FDTL) বিধি। এই বিধি অনুযায়ী, পাইলট ও ক্রুদের প্রতি সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা বাধ্যতামূলক বিশ্রাম দিতে হবে এবং এক সপ্তাহে একজন পাইলট সর্বোচ্চ দু’টি নৈশ ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবেন—যেখানে আগে ছয়টি পর্যন্ত ছিল। একই সঙ্গে সপ্তাহে একবারের বেশি টানা দুই দিন নাইট ডিউটি দেওয়া যাবে না।

নিরাপত্তা বাড়াতে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এই বিধি ঘোষণা করা হয়। শুরুতে এটি জুনে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের অনুরোধে বেশ কয়েকবার পিছিয়ে যায়। অবশেষে দিল্লি হাই কোর্ট ডিজিসিএকে বিধি কার্যকর করার নির্দেশ দিলে গত কয়েক মাসে ধাপে ধাপে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়।

কেন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইন্ডিগো

ভারতে সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করে ইন্ডিগো—দেশের ৯০টি এবং বিদেশের ৪৫টি গন্তব্যে তাদের বিমানের নিয়মিত চলাচল রয়েছে। তাদের অধিকাংশ ফ্লাইটই রাতভিত্তিক, এবং বিশাল নেটওয়ার্ক পরিচালনায় প্রচুর পাইলট ও ক্রু প্রয়োজন হয়।

নতুন আইন অনুযায়ী সেই বিশাল কর্মীসংখ্যা প্রয়োজন হলেও ইন্ডিগো তা সংগ্রহ করতে পারেনি। পাইলট সংকট স্বীকার করেই সংস্থাটি জানিয়েছে—হঠাৎ করে বিশাল কর্মীসংখ্যা তৈরির মতো সক্ষমতা তাদের নেই। ফলে নতুন বিধি মানতে গিয়ে একের পর এক ফ্লাইট বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

পাইলট সংগঠনগুলোর অভিযোগ আরও বিস্তর

ভারতের পাইলট সংগঠন ‘ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান পাইলটস’ জানিয়েছে—নতুন বিধি কার্যকর হবে তা আগেই জানা ছিল। অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলো সে অনুযায়ী পাইলট নিয়োগ ও পরিকল্পনা করলেও ইন্ডিগো দীর্ঘ সময় ধরে নিয়োগ বন্ধ রেখেছিল।

আরও অভিযোগ উঠেছে—ইন্ডিগো ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো প্রস্তুতি নেয়নি যেন শেষ মুহূর্তে সংকট তৈরি করে সরকারকে বিধি শিথিল করার চাপ দেওয়া যায়। ‘দ্য এয়ারলাইন্স পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন’ বলেছে, সংকট শুরু হওয়ার পরেও ইন্ডিগো প্রকৃত সমাধানে এগোয়নি, বরং যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়তে দিয়েছে।

ইন্ডিগোর ব্যাখ্যা ও কেন্দ্রীয় তদন্ত

বৃহস্পতিবার ইন্ডিগো সামাজিকমাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছে—প্রযুক্তিগত সমস্যা, শীতকালীন সময়সূচি বদল, প্রতিকূল আবহাওয়া, বিমান চলাচলের জট এবং নতুন ডিউটি নিয়ম—সব মিলিয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে কী কারণে এত বড় ভাঙন ঘটল তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সংস্থাটি।

এই পরিস্থিতিতে ভারতের কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। কীভাবে দেশের বৃহত্তম বিমান সংস্থার পরিষেবা একযোগে ভেঙে পড়ল—এটি এখন সরকারের জন্যও বড় প্রশ্ন।

যাত্রীর ভোগান্তি কমার কোন লক্ষণ নেই

ফ্লাইট বাতিল, বিলম্ব, টিকিটের আকাশছোঁয়া দাম—সব মিলিয়ে দেশের বিমান ভ্রমণব্যবস্থা কার্যত অচল হওয়ার পথে। আগামী কয়েক দিনেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কোনো পক্ষই।

ভারতের ইতিহাসে ইন্ডিগোর বর্তমান সংকট মনে করিয়ে দিচ্ছে—একটি বিমান সংস্থার প্রস্তুতির অভাব কেবল তাদের নিজের জন্যই নয়, দেশের লাখো মানুষের জন্যও কত বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

Link copied!