ঢাকা রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

ভালো স্বামী বানাতে বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কী পড়ানো হয়

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৫:০১ পিএম
স্বামী-স্ত্রীর ছবি। ছবি- সংগৃহীত

সেনেগালে পুরুষদের ভালো স্বামী বানাতে বিশেষ স্কুল শুরু করেছে জাতিসংঘ। ‘স্কুল ফর হাসবেন্ড’ নামের এই স্কুলে আক্ষরিক অর্থেই শেখানো হয় কীভাবে একজন পুরুষ ভালো স্বামী হতে পারেন।

এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।

পশ্চিম আফ্রিকার অনেক দেশের মতো সেনেগালেও যেকোনো কিছুতে পুরুষের কথাই শেষ কথা। এমনকি পরিবার পরিকল্পনাসহ জীবন বদলে দেওয়ার মতো বড় বড় সিদ্ধান্তেও নারীদের কোনো মতামত নেওয়া হয় না। নারীর জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর জন্যও পুরুষ সদস্যের ‘অনুমতি’ নিতে হয় তাদের। সেই দৃশ্যপটে কিছুটা পরিবর্তন আনতে দেশটিতে বিশেষ এই কর্মসূচি চালু করেছে জাতিসংঘ। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য সমাজের পুরুষ সদস্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে ‘ইতিবাচক পুরুষত্ব’ (পজিটিভ ম্যাসকুলিনিটি) জাগিয়ে তোলা।

ইমাম ইব্রাহীম জানান, ইতিবাচক পুরুষত্ব শেখাতে ধর্মীয় প্রেক্ষাপট টানেন তিনি। কারণ, এই অঞ্চলের মানুষ ধর্মের প্রতি প্রচণ্ড সংবেদনশীল। জেন্ডার এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কেও পুরুষদের সচেতন করার চেষ্টা করেন তিনি।

লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে শুরু করে এইচআইভির মতো রোগ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি। শুক্রবার জুমার নামাজের পরের খুতবায়ও এসব নিয়ে আলোচনা করেন ইব্রাহীম।

তিনি বলেন, ‘অনেক নারী আমার খুতবার প্রশংসা করেন। তারা আমাকে জানান যে, তার খুতবা এবং স্কুল ফর হাসবেন্ডের ক্লাসগুলো করার পর তাদের স্বামীদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।’ এমনকি পুরুষেরাও তাকে জানিয়েছেন যে তারা এখন একজন স্বামী এবং বাবা হিসেবে নিজেদের আরও উন্নত করতে চান।

হাবিব ডিয়ালো নামের ৬০ বছর বয়সি এক পুরুষ জানান, ইমামের খুতবা আর জাতিসংঘের কর্মসূচির ক্লাস করার পর তিনি বুঝতে পেরেছেন বাড়িতে সন্তান জন্মদান কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের বউ যখন অন্তঃসত্ত্বা ছিল তখন আমি তাদের হাসপাতালে ডেলিভারি করাতে উৎসাহিত করি। যদিও প্রথমে আমার ছেলে একটু আপত্তি করছিল। হাসপাতালে খরচ কেমন হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল সে। কিন্তু আমি যখন তাকে বুঝিয়ে বলি যে এটা তার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য কতটা জরুরি, তখন যে বুঝতে পারে এবং রাজি হয়।’

২০১১ সাল থেকেই সেনেগালে এই কর্মসূচি চালিয়ে আসছে জাতিসংঘ। তবে সম্প্রতি দেশটির নারী, পরিবার, লিঙ্গ ও শিশু সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে এটি। বর্তমানে দেশটির সরকার এই কর্মসূচিকে মাতৃত্বকালীন মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে বিবেচনা করছে। শুধু সেনেগাল নয়, নাইজার, টোগো, বুরকিনা ফাসোসহ আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশে চলছে জাতিসংঘের এই ‘হাসবেন্ড ফর স্কুল’ কর্মসূচি। জাতিসংঘ বলছে, এই দেশগুলোতে নারী স্বাস্থ্যের বেশ উন্নতি হয়েছে।

শুধু মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য নয়, এই কর্মসূচিতে নারী অধিকার, সমতা, নিরাপদ যৌনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। সেনেগালজুড়ে এই প্রকল্পের প্রায় ২০টি স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ পুরুষকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। এই ৩০০ পুরুষ এখন নিজের জনবসতিতে তার অর্জিত জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছেন।

তবে, এই প্রকল্পে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা বাছাই করে জাতিসংঘই। সামাজিকভাবে যারা নিজ এলাকায় সম্মানিত, নারী অধিকার সম্পর্কে সচেতন, নেতৃত্বের গুণ রয়েছে—এমন পুরুষদেরই বাছাই করা হয়। যেহেতু নিজ নিজ এলাকায় তারা সম্মানিত, তাই সমাজে তাদের একটা আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। পরে সেই গ্রহণযোগ্যতা কাজে লাগিয়ে প্রশিক্ষণে যা শিখেছেন, উপলব্ধি করেছেন, তা বাকিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন তারা।

খারি নডেয়ে নামের ৫২ বছর বয়সি এক নারী জানান, তার স্বামী আগে কোনো কাজেই হাত লাগাতেন না, কিন্তু এখন তিনি রান্নাও করেন।


 
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে প্রতি ১ লাখ শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ২৩৭ জন মা মারা গেছেন। একইভাবে, নবজাতকের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি ভালো ছিল না—প্রতি ১ হাজার জন শিশুর মধ্যে ২১ জনই জন্মের প্রথম মাসেই মারা যায়। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি ১ লাখ শিশুর বিপরীতে মাতৃমৃত্যু ৭০ জনের নিচে নিয়ে আনতে চায় তারা। একই সঙ্গে, নবজাতকের মৃত্যুহারও প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে ১২-এর নিচে নামিয়ে আনতে চায়।