সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বার্ষিক প্রতিরক্ষা সম্মেলনে শাংরি-লা ডায়ালগে চীনকে তাইওয়ানের প্রতি ‘নিকট ও তাৎক্ষণিক হুমকি’ হিসেবে আখ্যায় দিয়ে এশিয়ার দেশগুলোকে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।
তিনি বলেন, তাইওয়ানে সম্ভাব্য চীনা আগ্রাসন কেবল ওই দ্বীপ নয়, গোটা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। চীন প্রতিদিন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, এজন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, মহড়া চালাচ্ছে।”
হেগসেথ সতর্ক করেন, ‘কমিউনিস্ট চীন যদি সামরিকভাবে তাইওয়ান দখল করে, তাহলে তা গোটা বিশ্বের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু এর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় না, কিন্তু ‘আমাদের বা আমাদের মিত্রদের ভয় দেখানোর অনুমতি দেওয়া হবে না’।
তার ভাষ্য, চীন এখন একটি আধিপত্যবাদী শক্তিতে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান আক্রমণের লক্ষ্যে দক্ষিণ চীন সাগরে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বারবার সংঘাতে জড়াচ্ছে, এবং সামরিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
এশিয়ার দেশগুলোকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান
চীনের হুমকি মোকাবেলায় হেগসেথ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় ‘একটি শক্তিশালী প্রতিরোধের ঢাল’ গড়তে চায়। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘প্রতিরোধ কম খরচে আসে না’।
তিনি ইউরোপের উদাহরণ দিয়ে বলেন, কিছু দেশ ইতোমধ্যেই তাদের জিডিপির উল্লেখযোগ্য অংশ প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের আহ্বান অনুযায়ী ন্যাটো সদস্যদের ৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করার চাপ তুলে ধরে হেগসেথ বলেন, ‘এশিয়ার মিত্ররাও সেই পথ অনুসরণ করতে পারে এবং পার্টনার হয়ে উঠতে পারে।’
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়ায় রাডার মেরামত কেন্দ্র এবং ড্রোন সহায়তা প্রকল্পসহ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ার নতুন অংশীদারিত্ব শুরু করেছে।
চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়েও সতর্কবার্তা
হেগসেথ বলেন, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুললে দেশগুলো রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়বে, এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কৌশলকে জটিল করে তুলবে।
সম্মেলনে চীন এবারে নতুন পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে এবং রোববারের নির্ধারিত ভাষণ বাতিল করেছে—যা ইতোমধ্যে বিশ্বের নজর কেড়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বড় ও সক্রিয় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে এবং আঞ্চলিক বার্তা স্পষ্টভাবে দিয়েছে।
‘কমন সেন্স’ দৃষ্টিভঙ্গি
হেগসেথ এ সময় ট্রাম্পের ‘কমন সেন্স’ ভিত্তিক বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গিরও প্রচার করেন, যেখানে তিনি বলেন, ‘আমেরিকার কোনো স্থায়ী শত্রু নেই’ এবং ‘আমরা কাউকে আদর্শ চাপিয়ে দিতে চাই না’।
তিনি সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রনায়ক লি কুয়ান ইউ’র বাস্তবধর্মী পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে ট্রাম্পের তুলনা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন আর ‘নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার’ ধাঁচের পররাষ্ট্রনীতি চায় না।
তবে এই বক্তব্যকে ‘আমেরিকার মূল আদর্শবিরোধী’ বলে কড়া সমালোচনা করেছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর ট্যামি ডাকওয়ার্থ। তিনি বলেন, ‘আমরা মৌলিক মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন ও শৃঙ্খলার পক্ষে—এগুলোই আমেরিকার ভিত্তি’।
তিনি হেগসেথের আঞ্চলিক বার্তাকে ‘অহংকারী’ ও ‘অভিভাবকসুলভ’ বলেও আখ্যা দেন।