ঢাকা শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫

ভারতের ‘গর্বের প্রতীক’ রাফাল এখন প্রশ্নের মুখে

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৫, ০৭:৫৪ পিএম
পাকিস্তানের হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ভারতীয় যুদ্ধবিমান। ছবি- সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত পরিবেশে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি প্রকাশ করেন যে, সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘর্ষের প্রথম রাতেই পাকিস্তান বিমান বাহিনী ২০টি ভারতীয় যুদ্ধবিমানের ওপর নজরদারি করেছিল, তবে মাত্র ছয়টিকে ভূপাতিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

ভুট্টো জারদারি বলেন, ‘আমরা চাইলে ২০টি যুদ্ধবিমানই গুলি করে নামাতে পারতাম, কিন্তু আমরা কেবল সেই বিমানগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করেছি যারা আমাদের ভূখণ্ডে অস্ত্র ফেলেছিল।’

পাকিস্তানের এই পদক্ষেপকে তিনি ‘পরিকল্পিত সংযম’ হিসেবে উল্লেখ করেন, যা সংঘর্ষকে আরও বাড়তে না দেওয়ার কৌশলগত মনোভাব প্রতিফলিত।

তিনি অভিযোগ করেন, ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে এই ক্ষয়ক্ষতির তথ্য গোপন করেছে ও এক মাস পর সিঙ্গাপুরে শাংরি-লা সংলাপে জেনারেল অনিল চৌহানের বক্তব্যের মাধ্যমে প্রথমবার ভারতীয় বিমান ভূপাতিত হওয়ার কথা স্বীকার করে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ গত ১৭ মে ঘোষণা দেন যে, পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে ছিল তিনটি দাঁসো রাফাল, একটি সু-৩০এমকেআই, একটি মিগ-২৯ এবং একটি মিরাজ ২০০০। ষষ্ঠ বিমানটি ৬-৭ মে রাতে শ্রীনগরের পূর্বে পাম্পোরের আকাশে পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর হাতে ধ্বংস হয় বলে জানা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘর্ষে পাকিস্তানের মূল আক্রমণ-পদ্ধতি ছিল তাদের আধুনিক চীনা-উৎপাদিত জে-১০সি যুদ্ধবিমান, যা পিএল-১৫ দূরপাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত।

পিএল-১৫ রেঞ্জ ১৫০-২০০ কিলোমিটারের বেশি এবং এটি ম্যাক ৪ গতিসম্পন্ন, এইএসএ রাডার গাইডেন্স ও প্রতি-প্রতিরক্ষা প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে বিশ্বে অন্যতম সেরা বলে ধরা হয়।

পাকিস্তানের দাবি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উত্তেজনা বাড়লেও মার্কিন ও ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য সেই দাবিকে আংশিকভাবে সমর্থন করে। মার্কিন কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানান, পাকিস্তানি জে-১০সি যুদ্ধবিমান অন্তত দুটি ভারতীয় জেট ভূপাতিত করেছে।

সিএনএনের রিপোর্টার জিম স্কুইটোও নিশ্চিত করেছেন যে, ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থা অন্তত একটি ভারতীয় রাফাল ধ্বংসের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং বর্তমানে আরও বিমান হারানোর সম্ভাব্যতা নিয়ে তদন্ত চলছে।

এ ছাড়াও সিএনএন জানিয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সংঘর্ষের সময়ের রিয়েল-টাইম ক্লাসিফাইড তথ্য রয়েছে, যা ইসলামাবাদের বিবরণকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়।

ভারতের পক্ষ থেকে প্রথমে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হলেও শাংরি-লা সংলাপে ভারতীয় চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান স্বীকার করেন যে, ‘একটি বিমান ভূপাতিত হয়েছে’। তবে তিনি জোর দেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, কেন এটি ভূপাতিত হয়েছে, কতগুলো নয়। আমরা কৌশলগত ত্রুটিগুলো শনাক্ত করেছি, সংশোধন করেছি এবং দুই দিনের মধ্যে দূরপাল্লার স্ট্রাইক পুনরায় শুরু করেছি।’

ভারতীয় বিমান বাহিনীর এয়ার মার্শাল এ.কে. ভারতী পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্ষতি যুদ্ধের অংশ’। তবে তিনি আর বিস্তারিত জানাননি। বিশ্লেষকরা এটিকে একটি ‘নীরব স্বীকারোক্তি’ হিসেবেই দেখছেন।

এই সংঘর্ষে পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র এবং জে-১০সি যুদ্ধবিমানের সফলতা কেবল পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত জয় নয়, বরং চীনের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির বৈধতা নিশ্চিত করে। পাকিস্তানের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জেএফ-১৭ ব্লক III যুদ্ধবিমানও এই সংঘর্ষে পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে অংশ নিয়েছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাগুলো দক্ষিণ এশিয়ার আকাশ শক্তির ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। ভারতের আমদানি করা উচ্চমূল্যের রাফাল বিমান এই প্রথমবারের মতো বিভিআর যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকারিতার প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির এই বক্তব্য শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের ‘স্বচ্ছ’ এবং ‘দায়িত্বশীল’ পক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে, যেখানে ভারতকে একটি তথ্য-গোপনকারী শক্তি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে।

যদিও যুদ্ধ এখন আপাতত থেমে গেছে, তবে ঘটনাটি দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে আকাশ প্রতিরক্ষায় প্রতিযোগিতা এবং কৌশলগত ভারসাম্য কতটা অস্থির ও জটিল, সেটিই স্পষ্ট করে দিয়েছে।

বিশ্ব এখন অপেক্ষা করছে—এই সংঘর্ষে হারানো রাফাল বিমানগুলো নিয়ে ভারত সরকার ভবিষ্যতে কী অবস্থান নেয় এবং পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রের বাস্তব যুদ্ধ অভিজ্ঞতা দক্ষিণ এশিয়ার আকাশযুদ্ধে কেমন ভূমিকা রাখে। কারণ এই যুদ্ধের ছায়া হয়তো ভবিষ্যতের আরেক বড় সংঘর্ষের পূর্বাভাস দিতে পারে।