ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫

পুতিনের পাশে কিম, জেলেনস্কিকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন ট্রাম্প

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৫, ০৭:০২ পিএম
ছবি- আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স

চলতি মাসের শুরুতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন মোড় নিয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সমর্থন জানিয়ে ৩০ হাজার সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। 

অন্যদিকে এই ঘটনার পরই ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ অস্ত্র সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বৈশ্বিক কূটনীতিতে এক নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।

পেন্টাগন সূত্র জানিয়েছে, এই সাময়িক স্থগিতাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা পুনর্মূল্যায়নের অংশ হলেও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের চোখে এটি রাশিয়ার প্রতি ট্রাম্পের কৌশলগত নমনীয়তার বার্তা বহন করছে।

পেন্টাগন সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত হওয়া সামরিক সহায়তার মধ্যে রয়েছে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র, হেলফায়ার মিসাইল, গাইডেড রকেট এবং আর্টিলারি শেল।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যানা কেলি জানান, অন্যান্য দেশকে কী পরিমাণ সামরিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে সম্প্রতি তা মূল্যায়ন করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর। আর এরপরই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে প্রশাসন। 

প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র এবং নির্ভুল লক্ষ্যমাত্রার অস্ত্রের চালান স্থগিত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কোন অস্ত্রের শিপমেন্ট স্থগিত হয়েছে সে ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি মার্কিন কর্মকর্তারা।

এদিকে, সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্তে কিয়েভ উদ্বিগ্ন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই ধরনের সহায়তা বিলম্ব রাশিয়াকে উৎসাহিত করবে এবং যুদ্ধের মেয়াদ দীর্ঘতর হতে পারে।’

একাধিক মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার পক্ষে সরাসরি সামরিকভাবে জড়িত হওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।

ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন গ্রীষ্মকালীন অভিযানে রাশিয়াকে সহায়তা করতে কিম জং উন ৩০ হাজার সেনা পাঠাতে পারেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবল একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া-চীন অক্ষ শক্তির সম্ভাব্য সূচনাও হতে পারে।

ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রতি সহায়তা বন্ধ প্রসঙ্গে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক উপদেষ্টারা মনে করেন, ‘মার্কিন জনগণের অর্থে অন্য দেশের দীর্ঘ যুদ্ধ টানা যুক্তিযুক্ত নয়। আমাদের সামরিক সম্পদ পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন।’

বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনকে সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত এবং কিম জং উনের রাশিয়া-ঘনিষ্ঠতা বিশ্ব রাজনীতিতে এক নতুন বিভাজন রচনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। পশ্চিমা সামরিক জোটগুলো এখন আরও সক্রিয় কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হতে পারে।

এদিকে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার চলমান যুদ্ধ ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান এবার পুরোপুরি স্পষ্ট করল চীন। রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় তারা মেনে নেবেন না। 

বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র বিভাগের প্রধান কাজা কালাসের সঙ্গে বৈঠক করেন ওয়াং ই।

চার ঘণ্টাব্যাপী সেই কাজা কালাস রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে চীনের চূড়ান্ত অবস্থান জানতে চাইলে ওয়াং বলেন, ‘বেইজিং কোনোভাবেই এ যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় মেনে নেবে না। আমরা রাশিয়াকে হারতে দেবো না।’

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক অভিযানের পর থেকে কিয়েভকে শত কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনকে প্রায় ৬৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সামরিক সহায়তা দিয়েছে।

চলতি বছর জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তার শিবিরের অনেকে বলছেন, ইউক্রেনসহ অন্য মিত্র দেশগুলোকে সামরিক সহায়তা দিতে গিয়ে মার্কিন অস্ত্র ভান্ডার খালি হওয়ার উপক্রম। এখনই লাগাম টেনে না ধরলে ভবিষ্যতে নিজেদেরই বিপদে পড়তে হবে।