বেসামরিক নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা। চলমান সংঘাতের মধ্যে ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি হিসেবেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক ঘোষণায় জানানো হয়েছে, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর যে আদেশের মাধ্যমে সেনাবাহিনী রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, সেটি বাতিল করা হয়েছে। এর পরিবর্তে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং একটি বিশেষ নির্বাচন তদারকি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লেইং এখনো দেশের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন, ফলে বাস্তবিক অর্থে তিনি এখনো দেশের শাসনক্ষমতায় রয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, এই ‘ক্ষমতা হস্তান্তর’ একটি রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে, যার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা করতে চাইছে জান্তা সরকার।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিয়ানমারে ক্ষমতা গ্রহণ করে। এরপর থেকেই দেশজুড়ে সহিংসতা, বিক্ষোভ ও গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এর আগে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছর পর জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) মিয়ানমার থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়। এ বছরের ৮ মার্চ দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেন মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর কিংবা ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সাংবাদিকদের উদ্দেশে এক অডিও বার্তায় জান্তা মুখপাত্র জৌ মিন তুন জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার স্বার্থে সরকার পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার থেকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হলো।’
মিয়ানমারে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০২০ সালের নভেম্বরে; আর সেই নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছিল—অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ নভেম্বর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ক্ষমতা দখলের পর সামরিক সরকারের প্রধানও হন তিনি।
অভ্যুত্থানের পরপরই গ্রেপ্তার হন সু চি, তার নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং এনএলডির বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার নেতাকর্মী। তাদের বেশির ভাগ এখনো কারাগারে আছেন। দেশটির তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।