চলতি মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তাইওয়ান সীমান্তে ৪৭৮ বার চীনা সামরিক বিমানের এবং ১৯৪ বার নৌযানের গতিবিধি নজরে এসেছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চীন তাইওয়ানের চারপাশে এ ধরনের কার্যক্রম নিয়মিতভাবে বাড়িয়ে চলেছে। প্রশ্ন উঠেছে কী কারণে তাইওয়ান সীমান্তে সামরিক গতিবিধি বাড়াচ্ছে চীন?
তাইওয়ান সীমান্তে চীনের গতিবিধি বাড়ানো হচ্ছে কৌশলগত, প্রতিরোধমূলক ও প্রতীকী বার্তার অংশ হিসেবে। যুদ্ধের জন্য সরাসরি প্রস্তুতি এখনো নয়, তবে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তাইওয়ানের স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবাদবিরোধী বার্তা
চীন বরাবরই তাইওয়ানকে নিজেদের ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’ বলে দাবি করে আসছে। তাইওয়ানের বর্তমান সরকার, বিশেষ করে ২০২৪ সালে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লাই ছিং-তের নেতৃত্বাধীন দল (ডিপিপি), স্বাধীনতাপন্থী হিসেবে পরিচিত।
চীন মনে করছে, এই সরকারের অধীনে তাইওয়ান ধীরে ধীরে চীন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সুতরাং সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে চীন বার্তা দিচ্ছে, ‘তোমরা যদি স্বাধীনতা ঘোষণা করো, তার পরিণতি ভয়াবহ হবে’।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সহযোগিতার প্রতিক্রিয়া
তাইওয়ানকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ, কংগ্রেস প্রতিনিধিদের সফর, ও সামুদ্রিক মিত্রতা চীনকে স্পষ্ট বার্তা দেয় যে পশ্চিমারা তাইওয়ানকে রক্ষা করতে আগ্রহী। এ কারণেই সামরিক মহড়ার মাধ্যমে চীন একধরনের ‘শক্তি প্রদর্শন’ করছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য ও সামুদ্রিক পথ নিয়ন্ত্রণ
তাইওয়ান চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ‘মিডল পয়েন্ট’। চীন চাচ্ছে দক্ষিণ চীন সাগরের বাণিজ্যপথ (যা বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ জাহাজ চলাচলের রুট) নিজের দখলে রাখতে। তাইওয়ান এই পথের ঠিক পাশে হওয়ায় এর প্রতি সামরিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা চীনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভবিষ্যতের ‘একীকরণ’ অভিযানের প্রস্তুতি
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, চীন ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে জোর করে একীভূত করতে পারে। যদিও এখনই যুদ্ধ শুরু করবে না। তবে সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতির অর্থ হলো ‘যদি কূটনৈতিকভাবে না পারি, তাহলে সামরিকভাবে প্রস্তুত আছি।’
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে শক্তিশালী বার্তা
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং জাতীয়তাবাদী অবস্থানকে জোরদার করতে চান। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থতি থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর কৌশল হিসেবে সীমান্ত উত্তেজনা বাড়ানো হয়ে থাকতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :