বিশ্ব ‘শান্তি অথবা যুদ্ধ’ যেকোনো একটা বেছে নেওয়ার মাঝে রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের ৮০ বছর পূর্তিতে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা।
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, নজিরবিহীন শক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে পুরো বিষয়টির মধ্য দিয়ে। এক মঞ্চে বিশ্বের বহুল আলোচিত এই তিন দেশের নেতাই শুধু হাজির হননি, আয়োজনটিতে নিজেদের সর্বাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক রসদও দেখিয়েছে চীন।
এমন এক সময়ে কুচকাওয়াজ ও তিন নেতার একই মঞ্চে আবির্ভাবের ঘটনাটি ঘটল, যখন পশ্চিমারা নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। যুক্তরাষ্ট্র গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে ব্যর্থ হয়েছে। পুরো বিশ্বেই যুদ্ধ দুটির প্রভাব পড়ছে। অশান্ত হয়ে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ।
এর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক আরোপ করে বিশ্বের দেশগুলোকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে। অনেক দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এর আগে একাধিকবার বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তন চেয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভ্লাদিমির পুতিন। গতকালের আয়োজনের মধ্য দিয়ে তারা আবারও সেদিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
কুচকাওয়াজে প্রাধান্য পেয়েছে বেইজিংয়ের সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন। তিয়েনআনমেন স্কয়ারে ওই আয়োজন চলাকালে উপস্থিত ছিলেন ৫০ হাজারেরও বেশি জনতা। তাদের উদ্দেশে শি বলেন, আজ বিশ্ব যুদ্ধ অথবা শান্তি, সংলাপ অথবা সংঘর্ষ বেছে নেওয়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। তিনি আরও বলেন, চীনের জনসাধারণ দৃঢ়ভাবে ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
কুচকাওয়াজে ছাদখোলা লিমুজিনে চড়ে সেনাসদস্যদের প্রদর্শিত নতুন ও সর্বাধুনিক অস্ত্র পরিদর্শন করেন শি জিনপিং। এ সময় হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে পানির নিচে চলতে সক্ষম এমন ড্রোন, রোবট নেকড়ে সবই দেখায় চীন।
এ ছাড়া আয়োজন উপলক্ষে মুক্ত করা হয় ৮০ হাজার ‘শান্তির’ পাখি। আয়োজনে যে শুধু পুতিন ও কিম ছিলেন তা নয়, উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের ২৫টিরও বেশি নেতা। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাউবো সুবিয়ান্তোও সবাইকে একরকম চমকে দিয়ে হাজির হন কুচকাওয়াজে। তার নিজ দেশে বর্তমানে চলছে বিক্ষোভ।
তবে আসরে প্রাধান্য পেয়েছেন পুতিন ও কিমই। তাদের মাঝেই আসন গ্রহণ করেন শি জিনপিং। অনুষ্ঠান চলাকালে তাদের নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলতে দেখা গেছে। এবারই প্রথম তিন নেতা প্রকাশ্যে উপস্থিত হলেন।
ইউক্রেন যুদ্ধে সেনা দিয়ে সহায়তা করার জন্য পুতিন পরে কিমকে ধন্যবাদ জানান। অন্যদিকে কিম বলেন, রাশিয়াকে সহায়তা করার জন্য তিনি সব করতে প্রস্তুত।
ট্রাম্পের অভিনন্দন!
কুচকাওয়াজ চলাকালে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের কাছ থেকে স্বাধীনতা নিরাপদ রাখতে চীনকে সহায়তা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
শি জিনপিংয়ের উদ্দেশে তিনি আরও লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার সময়টিতে ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং উনকে দয়া করে আমার উষ্ণ অভিনন্দন জানাবেন। ইতোমধ্যে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে এর জবাব দেওয়া হয়েছে। তারা উল্লেখ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন না পুতিন। ট্রাম্প বিদ্রূপ করে থাকতে পারেন এমনটাই মনে করছে ক্রেমলিন।